ফটিকছড়ি যুবলীগ
ওবাইদুল আকবর রুবেল, ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম)
প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:৪৬ এএম
আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:৪৯ এএম
২০১৩ সালের ১৪ আগস্ট চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির মেয়াদ ছিল ৯০ দিন। এর মধ্যে সম্মেলন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার কথা ছিল। অথচ এরপর দীর্ঘ ১০ বছর পার হয়ে গেলেও সেই আহ্বায়ক কমিটি দিয়েই চলছে সংগঠনটির কার্যক্রম। এই নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ আর হতাশা। এ ছাড়া রয়েছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। দলীয় কর্মসূচিও পালন করা হয় পৃথকভাবে।
দলীয় সূত্র জানায়, ১৯৯৭ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে একটি কমিটি পায় উপজেলা যুবলীগ। এই কমিটি দীর্ঘ ১৬ বছর ক্ষমতা ধরে রেখে সর্বশেষ ২০১৩ সালে শাহ আলম সিকদারকে আহ্বায়ক ও মুজিবুর রহমান স্বপনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ৫২ সদস্যের কমিটি গঠন করে। কমিটি গঠনের পর থেকে দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা নতুন কমিটি গঠনের জন্য জেলায় বারবার দৌড়ঝাঁপ করেন। দীর্ঘদিন মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি থাকার ফলে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে দলের মধ্যে। উপজেলা যুবলীগের প্রকাশ্যে কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না। দলের বড় কোনো সমাবেশ ছাড়া যেকোনো কর্মসূচি পালন করা হয় কমিউনিটি সেন্টার কিংবা রেস্টুরেন্টের হলরুমে।
এদিকে দীর্ঘ সময় ধরে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় বিভিন্ন ইউনিয়ন কমিটিতে দেখা দিয়েছে বিশৃঙ্খলা। উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের কমিটিতেই রয়েছে পাল্টাপাল্টি কমিটি। আহ্বায়ক কমিটির বিতর্কিত ভূমিকার কারণে উপজেলার দাঁতমারা ইউনিয়নে যুবলীগের মধ্যে দুটি বলয় সৃষ্টি হয়েছে। গত ১৫ আগস্টের শোক দিবসের অনুষ্ঠান করতে গিয়ে যুবলীগের একাংশের সভাপতি ও সেক্রেটারি আবদুস শুক্কুর, ডাক্তার মনির এবং অপরাংশের (বর্তমান) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সেক্রেটারি আবদুল মোতালেব মেম্বার ও জামাল উদ্দিনের মধ্যে গ্রুপিং প্রকাশ্যে রূপ নেয়। উভয় পক্ষই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণা করে। পরবর্তী সময়ে এক পক্ষ হেঁয়াকোতে এবং আরেক পক্ষ দাঁতমারায় পৃথক কর্মসূচি পালন করে। সুন্দরপুর ইউনিয়ন যুবলীগেও রয়েছে দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থান। আজিমপুরে আদর্শ স্কুলের সমাবেশে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে।
উপজেলা কমিটির নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা বলেন, একক ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য শাহ আলম সিকদার সম্মেলন করতে আগ্রহী নয়। সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ উপজেলা কমিটি না হওয়ায় এসব বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে মনে করেন তারা।
উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আহ্বায়ক কমিটির নির্ধারিত কোনো সময়সীমা নেই। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে উত্তর জেলা যুবলীগের সম্মেলন থাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ মোতাবেক উপজেলা সম্মেলন স্থগিত করা হয়। উপজেলার বিভিন্ন ওয়ার্ডে নতুন কমিটিতে যারা বিতর্কিত তাদের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক শাহ আলম সিকদারের মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোন রেখে দেন।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল বশর বলেন, ‘ফটিকছড়ি উপজেলা যুবলীগের সম্মেলনের বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ সময় সম্মেলন না হওয়ায় নতুন নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না। এ ছাড়া বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি নিয়ে যেসব বিতর্ক আছে সেগুলোর বিষয়ে সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন জানিয়ে বিষয়টি নিয়ে সভাপতির সঙ্গে কথা বলতে বলেন। পরে উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি এসএম রাশেদুল আলমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি তা ধরেননি।