আরডিএর প্রকল্প নিয়ে সিএজির প্রতিবেদন
রাজু আহমেদ, রাজশাহী
প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:২৭ এএম
রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) বিভিন্ন প্রকল্পে প্রায় ১৬ কোটি টাকার অনিয়ম করেছে উল্লেখ করে কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিট জেনারেল (সিএজি) প্রতিবেদন দাখিল করেছে। মাঠপর্যায়ে তদন্তের পর প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করে জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছেও পেশ করা হয়েছে। পাশাপাশি এই টাকা আরডিএ কর্তৃপক্ষকে সরকারি কোষাগারে জমা করতে বলা হয়েছে।
অডিট প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০১৬-১৭ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত বেশ কয়েকটি প্রকল্পের বিপরীতে আরডিএ সর্বমোট বরাদ্দ পায় ৪১৫ কোটি ৩৯ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। যার মধ্যে তাদের মোট ব্যয় হয় ২৪৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। প্রকল্প সমাপ্তের পর অবশিষ্ট অর্থ এবং প্রকল্পের ছাড়কৃত অর্থ থেকে অর্জিত সুদসহ নিলামে বিক্রি করা সম্পদের অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়নি। এ ছাড়া ভূমি অধিগ্রহণের নামে অতিরিক্ত অর্থ দেওয়া, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বীমা না করানোসহ বিভিন্ন প্রকার কর আদায় না করার মাধ্যমে আরডিএ কর্তৃপক্ষ এই আর্থিক অনিয়ম করেছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে আরডিএ চেয়ারম্যান ও যুগ্ম সচিব ডা. জিয়াউল হকের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। যে পাঁচটি প্রকল্পের অনিয়মের তথ্য উঠেছে, তার মধ্যে চারটি প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) এক ব্যক্তি। আরডিএর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল্লাহ আল তারিকের দাবি, অভিযোগগুলো সঠিক নয়।
গত বছরের ২ জুন বাংলাদেশ কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিট জেনারেল মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী স্বাক্ষরিত ওই প্রতিবেদনে ৯টি অডিট অনুচ্ছেদ উপস্থাপন করা হয়। তবে এটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৫ কোটি ৯৭ লাখ ১৪ হাজার টাকার অনিয়ম পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজশাহী কোর্ট থেকে বাইপাস পর্যন্ত সড়ক নির্মাণের অব্যয়িত (যে অর্থ ব্যয় হয়নি) ৩ কোটি ৯ লাখ ৪২ হাজার টাকা প্রকল্প শেষের ২০১৯ সালের ৩০ জুনের মধ্যে সরকারি কোষাগারে জমার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। নাটোর রোড (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রুয়েটের মধ্য দিয়ে) থেকে বাইপাস সড়ক, তালাইমারীতে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু চত্বর ও রাজশাহী মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান (নকশা হালনাগাদ) শীর্ষক পরিকল্পনার ছাড়কৃত অর্থ থেকে অর্জিত সুদের ৭২ লাখ ৫২ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়নি। এ প্রসঙ্গে আরডিএ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অব্যয়িত অর্থ ফেরত দেওয়া হবে। আর সুদের অর্থ তারা খরচ করেছে।
এ ছাড়া ব্যবহার অনুপযোগী স্থাপনা ও গাছপালা নিলামে বিক্রির ৪৪ লাখ ৭ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হয়নি। নাটোর রোড (রুয়েট) থেকে রাজশাহী বাইপাস রোড পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসক রাজশাহী কার্যালয়কে অনিয়মিতভাবে অতিরিক্ত অর্থ দেওয়া হয়েছে ৮ কোটি ১৮ লাখ ১১ হাজার টাকা, কোর্ট রোড থেকে রাজশাহী বাইপাস রোড পর্যন্ত সংযোগ রাস্তা প্রশস্তকরণ প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসক রাজশাহী কার্যালয়কে অনিয়মিতভাবে অতিরিক্ত অর্থ দেওয়া হয়েছে ৫০ লাখ টাকা, বিভিন্ন ধরনের ফি/চার্জের ওপর মূল্য সংযোজন কর ও সুদের ১ কোটি ৭৬ লাখ ৮৭ হাজার টাকা আদায় করা হয়নি। ২০ লাখ ৫৬ হাজার টাকার আয়কর ও ভ্যাট কর্তন করা হয়নি। চুক্তিপত্রের শর্ত মোতাবেক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বীমা না করায় বীমা প্রিমিয়ামের ওপর অর্থ আদায় না হওয়ায় সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয় ১০ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এ প্রসঙ্গে আরডিএ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামীতে তারা ভ্যাট ও ট্যাক্স কর্তন করবে।
প্রতিবেদনটিতে দেখানো হয়, বারনই নামে নতুন আবাসিক এলাকার অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পে প্রায় ৭৮ কোটি টাকার বিপরীতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৯৯ কোটি টাকা, রাজশাহী কোর্ট থেকে বাইপাস পর্যন্ত সড়ক নির্মাণে ৪৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকার বিপরীতে ব্যয় হয়েছে ৪০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, নাটোর রোড থেকে বাইপাস রোড নির্মাণে ৮৫ কোটি ২২ লাখ টাকার বিপরীতে ৭১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, রাজশাহী মেট্রোপলিটন প্ল্যানকে দুর্যোগ ও ঝুঁকি সংবেদনশীল করার (প্ল্যান হালনাগাদ) জন্য বরাদ্দের ৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকার বিপরীতে ব্যয় হয়েছে ৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, তালাইমারী চত্বরে বঙ্গবন্ধু চত্বর নির্মাণ প্রকল্পের ১৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার বিপরীতে ব্যয় হয়েছে ১০ কোটি ৩ লাখ টাকা। এ ছাড়া মেরামত ও সংস্কার, জ্বালানি, সংস্থাপন, অবচয় এবং অন্যান্য খাতের নামে আসা বরাদ্দের ১৮৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকার বিপরীতে ব্যয় করা হয়েছে ২৪৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
আরডিএ সূত্রের দেওয়া তথ্যমতে, এসব প্রকল্পের মধ্যে কোর্ট থেকে রাজশাহী বাইপাস পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ, নাটোর রোড থেকে বাইপাস রোড নির্মাণ এবং তালাইমারীতে বঙ্গবন্ধু চত্বর নির্মাণ প্রকল্পের পিডি আরডিএর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল্লাহ আল তারিক। এ ছাড়া তিনি নগরীর পদ্মা আবাসিক এলাকায় প্রায় ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কারাধীন শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী পার্কেরও পিডি।
অডিট প্রতিবেদন প্রসঙ্গে আরডিএর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) ও একাধিক প্রকল্পের পিডি আব্দুল্লাহ আল তারিক বলেন, এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে কিছু জানা নেই। তবে যে অভিযোগগুলোর কথা শোনা যাচ্ছে, তা সঠিক নয়।