× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নাম সংশোধনে হয়রানি

শিক্ষক-অভিভাবকদের অসচেতনতায় বড় মাসুল গুনছে শিক্ষার্থীরা

আবু রায়হান তানিন, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০:২৩ এএম

আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০:২৫ এএম

শিক্ষক-অভিভাবকদের অসচেতনতায় বড় মাসুল গুনছে শিক্ষার্থীরা

রবিউল হাসান চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড থেকে ২০১৭ সালে এসএসসি পাস করেন। এরপর পরিবারের হাল ধরতে বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কিন্তু পাসপোর্ট করতে গিয়ে বাধে বিপত্তি। তার বাবার নাম আনোয়ার হোসেন বাবলু। সনদে তার বাবার নাম দেওয়া হয়েছে আনোয়ার হোসেন। অন্যদিকে তার প্রবাসী বাবার পাসপোর্টে নাম দেওয়া আছে শুধু বাবলু। 

ছোটবেলায় মাকে হারিয়েছেন রবিউল। বৃদ্ধা দাদির কাছে পালিত হন তিনি। অনেকটা অভিভাবকহীন রবিউল চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে নাম সংশোধনের আবেদন করেন। বছর দেড়েক বোর্ডের দপ্তরে দপ্তরে ছোটাছুটির পর ২০২১ সালের একটি বৈঠকে রবিউলের আবেদন বাতিল করা হয়। কারণ অভিভাবকদের কাউকে হাজির করতে পারেননি তিনি। পরিস্থিতি বিবেচনায় অনলাইনে তার বাবার সাক্ষাৎকার নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন রবিউল, তবে সে প্রস্তাব ধোপে টেকেনি। বোর্ড থেকে বলে দেওয়া হয়, তার বাবা দেশে ফিরলে আবেদন করতে।

এরপর দুই বছরের অপেক্ষা। চলতি বছর রবিউলের বাবা ছুটিতে দেশে ফিরলে মার্চে আবার আবেদন করেন তিনি। মে-তে তার বাবা সাক্ষাৎকারও দেন। কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট নন বোর্ড কর্মকর্তারা। বিষয়টি তদন্তে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। জুনে শুরু হওয়া তদন্ত শেষ হয় আগস্টে। তদন্ত শেষে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাম সংশোধনের পক্ষে ইতিবাচক প্রতিবেদন দেন। এরপর প্রায় দুই মাস পার হতে চললেও রবিউলের সনদের নাম সংশোধন হয়নি।

শুধু রবিউল নয়, প্রতি মাসে চট্টগ্রাম বোর্ডে নাম সংশোধনের জন্য তিন থেকে চারশজন আবেদন করেন। যারা মাসের পর মাস এ সমস্যায় ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।

রবিউল হাসান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে এই সংশোধনের জন্য আমি পাসপোর্ট করতে পারছি না। প্রবাসী বাবা বিষয়টা বুঝতে চাইছে না। একদিকে বোর্ডে দৌড়াতে দৌড়াতে হয়রান। অন্যদিকে পরিবারের কাছে কথা শুনতে হচ্ছে। শুধু এই একটা ভুলের কারণে জীবনটা থেমে আছে। কিছুই হচ্ছে না। হতাশা থেকে সনদ পুড়িয়ে ফেলার কথাও ভেবেছিলাম। চার বছর ধরে ছুটছি। অনেক হয়রানি হয়েছি। কোথাও সামান্য সহানুভূতিও পাইনি।’ এর পেছনে কত খরচ হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আবেদন আর আসা যাওয়া মিলিয়ে দশ হাজারের কম যায়নি। তবে এর মধ্যে একটা টাকাও কোথাও ঘুষ দেইনি। দিব না এটা পণ করেছি।’

প্রায় একই রকম ভুক্তভোগী মাহবুবুল মাওলা। তার সব সনদে তার মায়ের নাম এসেছে পারভীন বেগম, অথচ তার মায়ের নাম মোহসেনা বেগম। কীভাবে এই ভুল হলো সেটা বের করতেই দুই বছর লেগেছে মাহবুবের। স্কুলে তার পরের শিক্ষার্থীর মায়ের নাম ছিল পারভীন। রেজিস্ট্রেশনের সময় স্কুলের অফিস সহকারী তার মায়ের জায়গায় ভুলে পরেরজনের মায়ের নাম বসিয়ে দেন। এটি আর নজরেও পড়েনি কারও। দুই বছর আগে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে পাসপোর্ট করতে গিয়ে এই ভুল ধরা পড়ে তার। তারপর কয়েক দফা আবেদনে নানা হয়রানির পর সম্প্রতি তার মায়ের নাম সংশোধন করা হয়।

মাহবুব প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘এখানে আমার কোনো দায় ছিল না। তারপরেও এর জন্য আমাকে চূড়ান্ত হয়রানি হতে হয়েছে। কেউ কোনো কথা গুছিয়ে বলে না। একবার বলে এই কাগজ আনো, আবার আরেকটা। অনেক দুর্ব্যবহারও সহ্য করতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত নাম সংশোধন হচ্ছে।’

তবে অনেকটা ভিন্ন অভিজ্ঞতা মাহমুদ হাসানের। এই শিক্ষার্থী আবেদনের ১৫ দিনের মধ্যে তার সবই সংশোধন করতে পেরেছেন। এজন্য একজন সেকশন অফিসারের সঙ্গে ৬ হাজার টাকার চুক্তি করতে হয়েছে তাকে। কার সঙ্গে চুক্তি করেছেন সেই নাম অবশ্য প্রকাশ করতে রাজি নন মাহমুদ। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘নাম বলে কী হবে? আমিতো উপকৃত হয়েছি। এইটা না করলে বরং হয়রানি আর যাতায়াতে এর চেয়ে বেশি খরচ হয়।’ তবে তিনি মনে করেন এমনটা করতে বাধ্য করার জন্য শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিতে ফেলা হয়। এর পেছনে সেকশন অফিসাররা অনেকাংশে দায়ী।

তবে শিক্ষার্থীদের এমন ভোগান্তির কথা স্বীকার করে বোর্ড সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী অভিভাবক-শিক্ষকদের অসচেতনতা ও জন্মনিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্রের দায়িত্ব পাওয়া লোকজন। বোর্ডের একজন কর্মকর্তা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘গত কয়েক বছর নাম সংশোধনের একটা বড় চাপ চলছে। ফলে ভোগান্তিও কিছু যে হচ্ছে না তা নয়। কিন্তু আমাদের খুঁজতে হবে এখানে দায় কাদের। রেজিস্ট্রেশনের সময় অভিভাবক ও শিক্ষকরা সচেতন হলেতো এমনটা হতো না। আবার রেজিস্ট্রেশন চূড়ান্ত হওয়ার পর একবার আমরা সেটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাই। ছয় মাস সময় থাকে যাচাই-বাছাই করার। তখনও যাচাই-বাছাই করলে এমন ভুল এড়ানো সম্ভব। কেউ সেটা করে না।’

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সচিব অধ্যাপক রেজাউল করিমের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে এসব নাম সংশোধনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি মাসে কমপক্ষে একটি সভা করার চেষ্টা করেন তারা। কখনও কখনও দুটি সভাও করা হয়। প্রতি সভায় গড়ে ৩০০-৪০০ আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আবেদনের সংখ্যা থাকে এর চেয়েও অনেক বেশি।

ওই কমিটির একজন সদস্য প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমাদের অনেক কিছুই দেখতে হয়। ভোগান্তি হয় সেটা অস্বীকার করব না। তবে এর পেছনে যৌক্তিক কারণও আছে। যেমন ধরেন একজন অভিনেতার মূল নাম একটা সেই নামে সনদ। কিন্তু তিনি ভিন্ন নাম দিয়ে সিনেমা করেছেন। সেই অভিনেতা আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন এখন সেই নামে পাসপোর্ট করে তাকে বিদেশ যেতে হবে। সেজন্য তিনি সিনেমায় দেওয়া নাম বসাতে চান। এখানে দায়টা কার? আবার অনেকে দেখা যাচ্ছে বাবার নাম পরিবর্তন করছে সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে। ধরুন একজনের বাবার নাম কবির, চাচার নাম করিম। এখন সে এসে দাবি করছে তার বাবার নাম করিম। উদ্দেশ্য হচ্ছে তার সম্পত্তিতে ভাগ বসানো। এমন ঘটনাও আছে। তবে সংখ্যায় খুব কম। এমন অভিজ্ঞতার কারণে আমাদের অনেক কিছু দেখতে হয়। আর এতে করে অনেকেই ভোগান্তিতে পড়ে। কিন্তু আমাদের আসলে কিছু করার নেই।’

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সচিব অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে দেখি। তারপরেও কিছু ভোগান্তি হয়। তবে আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি সঠিক নয়। আমরা শিক্ষার্থীদের এমন বিষয়ে নিরুৎসাহিত করি।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা