জামালপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:১১ পিএম
আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:৫৩ পিএম
জামালপুর সদরের সুলতাননগর গ্রামে নিজের পাখির খামারে লোমান। প্রবা ফটো
জামালপুরের সালমা সুলতানা-লোমান রেজা দম্পতির সংসারে চলছিল হতাশা। দুজনেরই বেকারত্বের জীবন। এ সময় তারা শখ করে এক জোড়া লাভবার্ড পাখি পালতে শুরু করেন। শখের এক জোড়া থেকে এখন ৫০-৬০ প্রজাতির পাঁচ হাজারেরও বেশি পাখি তাদের খামারে। প্রতি মাসে আয় হয় লাখ টাকা। অভাব-অনটন দূরে ঠেলে তারা এখন স্বাবলম্বী।
সদর উপজেলার তিতপল্লা ইউনিয়নের সুলতাননগর গ্রামের বাসিন্দা সালমা-লোমান দম্পতি। ২০১৬ সালে এক জোড়া লাভবার্ড পাখি নিয়ে খামার শুরু করেন এই দম্পতি। এখন তাদের খামারের রয়েছেÑ লাভবার্ড, বদরিকা, বাজেরিগার, টিয়া, গিরিবাজ, নাইটিঙ্গেল, ককটেল, বদ্রিকা, জেব্রা ফিঞ্চ, স্টার ফিঞ্চ, কবুতরসহ ৫০ প্রজাতির পাখি। এসবের দাম সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা সর্বনিম্ন ১ হাজার টাকা জোড়া।
লোমান রেজা জানান, ২০১১ সালে ডিগ্রি পাস করলেও কোথাও চাকরি বা কিছুই করতে পারছিলেন না। ২০১২ সালে দিনবদলের আশায় ধারদেনা করে ইরাকে পাড়ি জমান। কিন্তু সেখানে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। চার বছর পর ফিরে আসেন দেশে। পরে ২০১৬ সালে শখের বসে স্ত্রী সালমা বেগম ঘরের বারান্দায় ও এক জোড়া পাখি ও তিন জোড়া কবুতর পালন শুরু করেন। ধীরে ধীরে পাখিও বাড়তে থাকে। কিছু পাখি বিক্রি করে লাভও হয়। পরে পাঁচ হাজার টাকা মূলধন খাটিয়ে যুক্ত করেন আরও পাখি। এরপর থেকেই আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন প্রায় ৪০ শতক জমির ওপরে পাঁচটি শেডে পাখি ও কবুতর পালন করছেন।
পাখি সরাসরি খামার থেকে ও অনলাইন প্লাটফর্মে বিক্রি হয়। তাদের ‘সুলতানি বার্ডস অ্যান্ড পিজন লফ্ট’ নামে একটি অনলাইন প্লাটফর্ম রয়েছে। বেশিরভাগ পাখি অনলাইনে বিক্রি করে থাকেন। এ ছাড়া দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতা এবং দর্শনার্থীরা আসেন বাড়িতে। অনেকে দেখতে এসে শখের বসে কিনে নিয়ে যান পাখি।
লোমান রেজা বলেন, ‘আমার স্ত্রী শখ করে এক জোড়া পাখি পালতে শুরু করেন। পরে তার পরামর্শে পাখি লালন-পালন শুরু করি। আরও কয়েক জোড়া পাখি কিনে আনি। দুজনে অক্লান্ত পরিশ্রম শুরু করি। ধীরে ধীরে বাণিজ্যিক পাখির খামার গড়ে তুলি। তারপর পাখি বিক্রিও শুরু করি। এভাবেই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। প্রতিদিন পাখির জন্য ৪০ কেজি খাবার লাগে। এতে ব্যয় হয় সাড়ে তিন হাজার টাকা। এসব খাবার জামালপুর, টাঙ্গাইলের মধুপুর এবং রংপুর থেকে কিনতে হয়।’
সালমা সুলতানা বলেন, ‘অনেকেই অনেক কথা বলছে। তারপরেও হাসি-তামাশা নীরবে চুপ করে সহ্য করে ব্যবসা করে যাচ্ছি। এই হাসি-তামাশা থেকে অনেক বড় ধরনের ব্যবসা করব। আগে ছিল একটি খামার। এখন হয়েছে তিনটি। প্রতি মাসে আয় প্রায় এক লাখ টাকা হয়। ঘরবাড়ি, জমিজমা সবকিছুই এখন হয়েছে।’