× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পরিচ্ছন্নতাকর্মী

অবহেলার পেশায় অনিশ্চয়তা সঙ্গী

সাভার (ঢাকা) প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:২৯ এএম

আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:৪৪ পিএম

ময়লার ভাগাড়ে এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী কাজ করছেন। প্রবা ফটো

ময়লার ভাগাড়ে এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী কাজ করছেন। প্রবা ফটো

বর্ষা বা শরৎ কিংবা বসন্ত- ক্লান্ত প্রকৃতিতে লাগে স্বস্তির হাওয়া। একেকটি ঋতু পরিবর্তন শুধু প্রকৃতির নয়, সঙ্গে পাল্টায় মানুষের জীবনচক্র। তবে কিছু মানুষের জীবনচক্র আটকে যায় অসহায়ত্ব ও দারিদ্র্যের কাছে। পরিবর্তন হয় না মানবসৃষ্ট বর্জ্য অপসারণের দায়িত্বে থাকা কর্মীদের। চৈত্রের তীব্র দাবদাহ, বর্ষায় ঝড়বৃষ্টি, শীতের ঠান্ডা উপেক্ষা করে কর্মীরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখেন চারপাশ। গভীর রাত থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত অবসর নেই তাদের। ক্লান্তহীনভাবে অলিগলিতে কাজ করেন তারা। কিন্তু এই মানুষগুলোই চরম অবহেলার শিকার। অনেকটা আড়ালে থেকে যায় তাদের জীবনে গল্প, কাজের কিংবা পেশার অনিশ্চয়তার গল্প।

সাভারের বিভিন্ন অস্থায়ী ডাম্পিং স্টেশনে থাকা শাওন, পিয়াল, সাইফুল, রতন, বাবুদের মতো অসংখ্য পরিচ্ছন্নতাকর্মীর নাম ধরে না ডাকলেও ময়লাওয়ালা বললেই চেনে সবাই। এতে কষ্ট না পেলেও তাদের ন্যায্য পারিশ্রমিক নিয়ে রয়েছে আক্ষেপ। আক্ষেপ রয়েছে পেশার অনিশ্চয়তা, জীবনের অনিশ্চয়তা নিয়েও। কর্মরত অবস্থায় প্রায়ই পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা দুর্ঘটনার শিকার হন। অনেকে মারা যান বা বরণ করেন পঙ্গুত্ব। এ ছাড়া অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করায় ক্যানসার, চর্মরোগসহ নানান দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হন। সচ্ছলভাবে বেঁচে থাকার আশায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে কিছু দাবিদাওয়া জানালেও তাতে কর্ণপাত করছে না কেউ। চাকরিতে নিয়োগ, সন্তানদের শিক্ষা, চিকিৎসার জন্য বিশেষ ছাড় ও আবাসনের ব্যবস্থা পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবি।

সাভারের আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কোনো প্রকার সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়াই সনাতন পদ্ধতিতে দিনের পর দিন রাস্তা, বাসাবাড়ি ও বিভিন্ন শিল্পকারখানার ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। আশুলিয়ার বলিবদ্র, জিরাব, চক্রবর্তী, নিরিবিল, আশুলিয়া বাজার ও সাভারের রাজাশন, আক্রাইন, হেমায়েতপুরসহ বেশ কয়েকটি স্থানে অস্থায়ী ডাম্পিং স্টেশন করে নিয়মিত ময়লা-আবর্জনা ফেলছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। পুরুষদের পাশাপাশি নারী পরিচ্ছন্নতাকর্মীদেরও সমানভাবে কাজ করতে দেখা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক পরিচ্ছন্নতাকর্মী জানান, সাভারের আশুলিয়ায় মহাজনদের অধীনে প্রায় এক হাজারের ওপর কর্মী নিয়মিত বর্জ্য অপসারণের কাজ করেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ কর্মীর বয়স ১৫-৩৫ বছর। বর্তমানে ৭০ শতাংশ পরিচ্ছন্নতাকর্মীর আবাসনের কোনো ব্যবস্থা নেই। ফুটপাথ কিংবা বিভিন্ন বস্তিতে বসবাস করছেন তারা। নেই স্বাস্থ্যসেবা কিংবা সন্তানদের পড়াশোনার ব্যবস্থাও। দৈনিক ২০০-৩০০ টাকা ও মাসিক ৭-১০ হাজার টাকা পারিশ্রমিকে কাজ করেন তারা।

এ ছাড়া দেওয়া হয় না ঈদ, দুর্গাপূজার বোনাস। সরকারি প্রতিষ্ঠান, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সরাসরি নিয়োগ না থাকায় কোনো সুযোগসুবিধা পান না তারা।

আশুলিয়ার চক্রবর্তী অস্থায়ী ডাম্পিং স্টেশনে কথা হয় কয়েকজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সঙ্গে। তাদের মধ্যে একজন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ‘আমরা যে কাজ করি তার কোনো ভবিষৎ নেই। কোনো নিরাপত্তাও নেই। আবার হাজিরা নামমাত্র। যা দিয়ে বর্তমান সময়ে বাজার করে ভালো কিছু খাওয়ার কথা স্বপ্নে চিন্তা করতে হয়। আবার অসুস্থ হলে ওষুধ কেনার টাকা থাকে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে যদি আবাসনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হতো তাহলে পরিবার নিয়ে নিশ্চিন্তে থাকতে পারতাম। এ ছাড়া আমদের নিয়োগ হলেও কাজের নিশ্চয়তা পাওয়া যেত।’

সুমন হাসান নামের আরেক পরিচ্ছন্নতাকর্মী বলেন, ‘অনেকবার দাবি নিয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় কথা হয়েছিল। পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও তাদের পরিবারের চিকিৎসাসেবার জন্য যদি কার্ড দেওয়া হতো তাহলে বিনা চিকিৎসায় থাকতে হতো না। এ ছাড়া আমাদের স্থায়ী বা অস্থায়ী কোনো ঠিকানা না থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অনেক সময় পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সন্তানদের ভর্তি করতে চায় না।’

পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ বিভাগের প্রভাষক মো. আল মামুন বলেন, তারা সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্য বিষয়ে অসচেতন। তারা কাজ করেন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। তাদের সতর্ক হয়ে কাজ করা উচিত। শুধু তারাই নয় ঝুঁকিতে রয়েছে তাদের পরিবারের শিশু, বৃদ্ধসহ অন্যরা। 

সাভার পৌরসভার মেয়র আব্দুল গণি বলেন, ‘তারা আমাদের অস্থায়ী কর্মী। পৌরসভার মাধ্যমে তাদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের জন্য বিভিন্ন সেমিনার ও ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প করা হয়। এ ছাড়া পৌরসভার আশপাশে সব হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা বিশেষ কম খরচে করতে বলা হয়েছে।’

পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের আবাসনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চেষ্টা করে যাচ্ছি একটি ডাম্পিং স্টেশনসহ পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য কিছু জায়গা বরাদ্দ নেওয়ার। কিন্তু এখনও বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় আটকে আছি।’

সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম ছুটিতে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘সরকারিভাবে কোনো ডাম্পিং স্টেশন না থাকায় নিয়োগ হয় না। তাই সরকারি কোনো কর্মকর্তা এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হবে না। মানবিক দিক থেকে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সাধুবাদ জানাই। তারা দিনরাত কাজ করে আমাদের জন্য। এ বিষয়ে সহযোগিতা দরকার হলে আবেদনের করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি উপজেলার মাসিক সভায় উপস্থাপন করা হবে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা