চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ডুয়েলগেজ লাইন
সুবল বড়ুয়া, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:২১ এএম
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০:৫৪ এএম
১৯৬১ সালে তৎকালীন ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ের বহরে যুক্ত হওয়া ইঞ্জিন (লোকোমোটিভ) দিয়েই বহুল আলোচিত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ডুয়েলগেজ রেললাইনের (ট্র্যাক) প্রথম পরীক্ষামূলক চলাচলের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আগামী ১৫ অক্টোবর নবনির্মিত রেলপথের প্রথম পরীক্ষণ করা হবে। সেই লক্ষ্যে চট্টগ্রামের পটিয়া রেলস্টেশনে ২ হাজার ২০০ সিরিজের একটি ইঞ্জিন এবং লাল-সবুজের ছয়টি বগি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কোরিয়া থেকে আনা প্রতিটি বগিতে যাত্রী ধারণক্ষমতা ৬০ জন।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথের জরাজীর্ণ কালুরঘাট সেতুর সংস্কারকাজ শুরুর আগেই এসব বগি ও ইঞ্জিন পটিয়া রেলস্টেশনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী অক্টোবরের শেষদিকে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এই মেগা প্রকল্পটি উদ্বোধন হবে। নতুন এই রেলপথ চালু হলে চট্টগ্রাম থেকে মাত্র আড়াই ঘণ্টায় স্বপ্নের ট্রেন পর্যটননগরী কক্সবাজারে পৌঁছাবে।
এই প্রসঙ্গে রেলওয়ের প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘প্রকল্পের মোট ৯০ শতাংশ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজও দ্রুত এগিয়ে চলছে। ১০১ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে পাঁচ কিলোমিটার রেললাইন বসানো বাকি। এই কাজ শেষ হলে নবনির্মিত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু করা হবে। আশা করি ১৫ অক্টোবর প্রথম ট্রায়াল করা হবে। এরই মধ্যে কোরিয়া থেকে আনা ৬টি পটিয়া স্টেশনে রাখা হয়েছে। জরাজীর্ণ কালুরঘাট সেতুর সংস্কারকাজ শুরুর আগেই সেটি পটিয়ায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
দক্ষিণ চট্টগ্রামে সম্প্রতি ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইনের সংস্কারকাজ করা হয়েছে জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, অক্টোবরের শেষদিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্পটি উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ট্রেন চলাচল করতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।
এদিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে ট্রেন চলাচলকে সামনে রেখে গত ১ আগস্ট থেকে কর্ণফুলী নদীর ওপরের শতবর্ষী কালুরঘাট সেতুর সংস্কারকাজ করছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল বিভাগ। এ প্রসঙ্গে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু জাফর মিঞা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘কালুরঘাট সেতুর সংস্কারকাজ চলমান রয়েছে। ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সংস্কারকাজ শেষ করতে পুরোদমে কাজ করা হচ্ছে। এখন কালুরঘাট সেতুর ওপর দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।’
পটিয়া রেলস্টেশনের মাস্টার মো. নেজাম উদ্দিন বলেন, জুলাই মাসের শেষদিকে লাল-সবুজের ৬টি নতুন বগি এবং একটি ২ হাজার ২০০ সিরিজের ইঞ্জিন পটিয়া স্টেশনে আনা হয়েছে। নতুন নির্মিত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে এটা দিয়ে ট্রায়াল করা হবে।প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ১৫০ কিলোমিটার। আর দোহাজারী থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার। বর্তমানে দোহাজারী পর্যন্ত রেলপথ রয়েছে। এই দোহাজারী থেকে চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, রামু হয়ে বন, পাহাড় বেয়ে ও নদীর ওপর দিয়ে এই রেলপথটি নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রকল্পের নথির তথ্যানুযায়ী, ২০১০ সালে ৬ জুলাই দোহাজারী-রামু-ঘুমধুম রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। পরে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মেগা প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। মেগা প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। পরে অর্থায়ন-সংক্রান্ত জটিলতায় বেশ কিছুদিন প্রকল্পটি থমকে থাকার পর ২০১৫ সালে অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং ওই বছরের ডিসেম্বরে প্রকল্প বাস্তবায়নে আর্ন্তজাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। দোহাজারী-চকরিয়া এবং চকরিয়া-কক্সবাজার (লট-১ ও লট-২) এই দুই লটে চীনা প্রতিষ্ঠান সিআরসি (চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন) ও দেশীয় তমা কনস্ট্রাকশন্স কোম্পানি ২৬৮৮ কোটি টাকা এবং চীনা প্রতিষ্ঠান সিসিইসসিসি ও দেশীয় ম্যাক্স কনস্ট্রাকশন্স ৩৫০২ কোটি টাকায় যথাক্রমে ১ ও ২ নম্বর লটের কাজ পায়। পরে ঠিকাদার নিয়োগের পর ২০১৭ সালে এই মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।