মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২২:৩৭ পিএম
মোংলায় চিংড়ি ও কৃষিজমি হুকুম দখলের প্রতিবাদে মহাসড়কে মানববন্ধন করেন জমির মালিকরা। প্রবা ফটো
দেশের দ্বিতীয় মোংলা সমুদ্রবন্দরকে সচল রাখতে পশুর নদীর নৌ-চ্যানেলে ড্রেজিংয়ের কাজ ফের অনিশ্চয়তায় পড়েছে। নতুন করে খননের বালু ফেলার জন্য উপজেলার বুড়িডাঙ্গা ইউনিয়নের সানবান্দা এলাকায় ২৬২ একর কৃষিজমি হুকুম দখলের ঘোষণা দিলে জমির মালিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রতিবাদে শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) মোংলা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন করেন জমির মালিকরা। জমিতে বালু ফেললে চিংড়ি ও কৃষি চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যাবে বলে দাবি করেন তারা।
মানববন্ধনে কৃষিজমি হুকুম দখলের প্রতিবাদে ‘জমি দেব না, প্রয়োজনে রক্ত দেব’- এমন স্লোগান দিতে দেখা যায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা শত শত নারী-পুরুষকে। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিবাদী ও হুঁশিয়ারিমূলক বার্তার প্লেকার্ডে মানববন্ধনে অংশ নেন সানবান্দা এলাকার জমির মালিকরা।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন কৃষিজমির মালিক বাগেরহাটের রামপাল উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেত্রী হোসনেয়ারা মিলি, বুড়িডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উদয় শংকর বিশ্বাস, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি অর্ধেন্দু শেখর, পৌরসভার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উত্তম সরকার, যুবলীগের ওয়ার্ড সভাপতি প্রাণেশ সরকার ও সিপিবি নেতা সুশান্ত দাশ।
তারা বলেন, হুকুম দখলে তাদের প্রায় ৫০০ একর জমিতে বালু ফেলে ভরাট করা হলে চিংড়ি ও কৃষি চাষাবাদ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বন্ধ হয়ে যাবে তাদের সব আয়-রোজগার। পেশা হারিয়ে নিঃস্ব হবে শত শত পরিবার। কোনোভাবে এই জমি ছাড়ব না। জমি দিব না, প্রয়োজনে রক্ত দিব।
জানা যায়, ২০২০ সালে একনেকে অনুমোদন হয় ৯৯২ কোটি টাকার মোংলা বন্দরের নৌ-চ্যানেল খননের প্রকল্প। পরে সেই প্রকল্প অনুমোদন হলে ২০২১ সালের মার্চ মাসে বন্দরের পশুর নদীতে ঘটা করে ড্রেজিংয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এ ড্রেজিংয়ের আওতায় পশুর নদীর ২৪ কিলোমিটার নৌপথ খননের প্রয়োজন হয়।
তবে ড্রেজিং কাজের প্রথমে ২৪ কিলোমিটার নৌপথ খননের ৩০ শতাংশের বেশি কাজ করতে পারেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ। ড্রেজিংয়ের মাটি ফেলার জায়গা না মেলায় বাকি থাকে ৭০ শতাংশ খননের কাজ।
গত বছর পশুর নদীর পাড়ের বানিশান্তা এলাকায় বিকল্প জায়গা খুঁজে ড্রেজিংয়ের মাটি ফেলা শুরু হলে স্থানীয় কৃষিজমির মালিকদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তিন ফসলি কৃষিজমিতে কোনো রকম বালু মাটি ফেলতে দেওয়া হবে না, এমন দাবিতে স্থানীয়দের তোপের মুখে পড়ে ড্রেজিং কার্যক্রম স্থগিত করে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ সেখান থেকে সরে আসে। তবে আবার নতুন করে জায়গা নির্ধারণ করা হয় উপজেলার বুড়িডাঙ্গা ইউনিয়নের সানবান্দা এলাকায়। কিন্তু এখানেও বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষকে।
ফলে নতুন করে মোংলা বন্দরের নৌ-চ্যানেল খননে ফের অনিশ্চয়তা তৈরি হলো। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ড্রেজিং প্রকল্পের পরিচালক মো. শওকত আলী বলেন, ‘মোংলা বন্দরকে সচল রাখতে হলে পশুর নদীর ড্রেজিংয়ের বিকল্প নেই। ড্রেজিংয়ের মাটি ফেলার জায়গা না পেলে নতুন করে আবারও সংকট তৈরি হবে। এতে মোংলা বন্দরের ক্ষতির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিরও ক্ষতি হবে। যত দ্রুত সম্ভব ড্রেজিং প্রকল্প শেষ করা দরকার।