রংপুর অফিস
প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৬:৪১ পিএম
রংপুর সিটি করপোরেশনে উন্নীত হলেও বিকল্প সড়ক তৈরি না হওয়ায় প্রতিদিন এমনই অসহনীয় যানজট পোহাতে হয় নগরবাসীকে। প্রবা ফটো
রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় যান চলাচলের জন্য নতুন করে সড়ক নির্মাণ হয়নি। প্রায় দেড়শ বছর আগে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত সড়ক দিয়ে চলছে যানবাহন। এর মধ্যে রংপুর বিভাগ ও সিটি করপোরেশন গঠনের পর জনসংখ্যা বেড়েছে বহুগুণ। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে যানবাহনের সংখ্যাও। কিন্তু বাড়েনি সড়ক। বিকল্প ও প্রশস্ত সড়ক নির্মিত না হওয়ায় নগরীতে যানজট অসহনীয় পর্যায়ে।
সিটি করপোরেশন ও ট্রাফিক বিভাগ যান চলাচলে বিকল্প রুট তৈরি, ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপনসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও যানজট নিরসন হচ্ছে না।
২০১০ সালে রংপুর বিভাগ গঠিত হয়। বিভাগ প্রতিষ্ঠার পর সরকারের নানা দপ্তর স্থাপন করা হয়। এরপর ২০১২ সালে রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) প্রতিষ্ঠার পর নগরীর গুরুত্ব আরও বাড়ে। বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ চাকরি, চিকিৎসা, লেখাপড়াসহ বিভিন্ন কারণে রংপুরে বসবাস শুরু করে।
জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ অনুযায়ী রসিক এলাকার মোট জনসংখ্যা ৭ লাখ ৮ হাজার ৩৮৪। বর্তমানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৩ হাজার ৪৪৪ জন বসবাস করেন। বর্ধিত এ জনগোষ্ঠী চলাচল করছে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত সড়ক দিয়েই। এর মধ্যে ২০১০ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত নগরীর মূল সড়কের ৮ দশমিক ২৪ কিলোমিটার চার লেনে উন্নীত করা হয়। এরপর নগরীতে সড়ক প্রশস্তকরণ কিংবা বিকল্প সড়ক নির্মাণে কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।
নগরীর মূল সড়ক চার লেনে উন্নীত হলেও গাড়ি পার্কিং, হকার ও ব্যবসায়ীরা ফুটপাথ দখল করে রাখায় এর সুবিধা পাচ্ছে না নগরবাসী। বিশেষ করে মেডিকেল মোড় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক মোড়, কাচারি বাজার থেকে জাহাজ কোম্পানি মোড়, মাহিগঞ্জ বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল থেকে মাহিগঞ্জ কলেজ মোড় পর্যন্ত যানজট চরমে উঠেছে। নগরীর বড় বড় শপিং মল, কাঁচাবাজার, সিটি করপোরেশনসহ জেলা ও বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয় থাকায় কাচারি বাজার থেকে জাহাজ কোম্পানি মোড় পর্যন্ত যানজট সবচেয়ে বেশি বলে জানান নগেরের বসিন্দারা।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের তথ্যমতে, সিটি করপোরেশন ৫ হাজার ২৪০টি অটোরিকশা ও ৫ হাজার ১০৭টি অটোরিকশার লাইসেন্স দিয়েছে। তবে মূল নগরীতে চলছে ৪০ হাজারেরও বেশি রিকশা-অটোরিকশা। এসব যানবাহন পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় তারা সড়কের পাশে পার্কিং কিংবা যাত্রী ওঠানামা করায়। নগরীতে যানজটের অন্যতম কারণ এটা।
রংপুরের প্রবীণ সাংবাদিক আব্দুস সাহেদ মন্টু বলেন, ‘নগরীতে যে সমস্ত সড়ক রয়েছে সেগুলো ব্রিটিশ আমলে নির্মিত। অথচ বর্তমানে নগরীতে মানুষ বেড়েছে বহুগুণ। বিপুলসংখ্যক মানুষের চাপ সেই ব্রিটিশ আমলের সড়ক নিতে পারছে না। ফলে নগরীতে যানজট বাড়ছে। এতে মানুষের কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে।’
মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামান বলেন, ‘রংপুরের ধাপ এলাকায় বহুতল ভবন গড়ে উঠেছে। নকশায় নিচতলায় পার্কিং থাকলেও বর্তমানে সেখানে ওষুধের দোকান খোলা হয়েছে। চিকিৎসকদের গাড়ি রাস্তা জ্যাম করে রাখছে। বাকি রাস্তা দখল করছে হকার ও রিকশা-অটোরিকশা। রাস্তাঘাট প্রশস্ত হয়নি। নতুন কোনো বিকল্প সড়কও হয়নি।’
রসিক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘জমি অধিগ্রহণ করে নতুন কোনো রাস্তা নির্মিত হয়নি। ফলে প্রায় দেড়শ বছর আগের রাস্তা দিয়েই নগরবাসীকে চলাচল করতে হচ্ছে। নগরীর মাস্টারপ্ল্যান পাস হয়নি। কোনো প্রজেক্ট গেলে তা মন্ত্রণালয়ে গিয়ে ফ্রিজ হয়ে থাকে। কথা বলার মতো হেভিওয়েট নেতা নেই, যার কারণে উন্নয়নকাজ ত্বরান্বিত হচ্ছে না। নগরীর যানজট নিরসনে নতুন ট্রাফিক ব্যবস্থার প্রচলনই এখন একমাত্র পথ।’