× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আপাতত ‘অরাজনৈতিক’ বেশেই থাকছে হেফাজত

আবু রায়হান তানিন, চট্টগ্রাম ও ওবাইদুল আকবর রুবেল, ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম)

প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:৩৯ এএম

আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:০৯ এএম

আপাতত ‘অরাজনৈতিক’ বেশেই থাকছে হেফাজত

ঘটনাস্থল চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বাবুনগর মাদ্রাসার অতিথি ভবন। সেখানে একটি কক্ষে বিশ্রাম করছিলেন হেফাজতে ইসলামের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব জুনায়েদ আল হাবীব। হঠাৎ সেখানে এলেন সংগঠনটির কয়েকজন তরুণ নেতা। তাদের চেহারায় হতাশার ছাপ। কথোপকথনের একপর্যায়ে তারা জুনায়েদ আল হাবীবের উদ্দেশে বলে উঠলেন, ‘ফ্রান্সের বিরুদ্ধে জুনায়েদ বাবুনগরী হুজুরের নেতৃত্বে কত বড় একটা বিক্ষোভ হয়েছিল। সেই ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি এসে ঢাকা ঘুরে গেল। অথচ একটা বিবৃতিও দেওয়া হলো না। মামুনুল হক সাহেবকে কোনো পদ দেওয়া হলো না। তাকে মুক্তি দিচ্ছে না, তা নিয়েও কোনো কর্মসূচি নেই। কোনো কিছুই ঠিকভাবে হচ্ছে না।’ 

এই পর্যায়ে তাকে থামিয়ে দেন জুনায়েদ আল হাবীব। বলেন, ‘এত বড় একটা ধকলের পর আমরা মাত্র যাত্রা শুরু করলাম। আস্তে আস্তে সব ঠিক হবে। এত অধৈর্য হওয়ার কী আছে?’

এ ঘটনা ঘটেছে গতকাল বৃহস্পতিবার হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভা হয়ে যাওয়ার পর। রুদ্ধদ্বার সভাটি চলে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত। সংগঠনটির একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অতিথি ভবনের ওই কক্ষের মতোই উত্তপ্ত ছিল সেই সভা। সেখানে অধিকাংশ নেতাই বিভিন্ন ইস্যুতে আগের মতো সক্রিয় অবস্থান নেওয়ার পাশাপাশি রাজপথে কর্মসূচির দাবি তোলেন। তারা অভিমত দেন, সরকারের সঙ্গে আলোচনা থেকে ইতিবাচক কোনো ফল মেলেনি। অনেক নেতাই এখনও কারাবন্দি। যারা মুক্তি পেয়েছেন, তাদেরও বারবার আদালতে যেতে হচ্ছে হাজিরা দিতে। একটি মামলাও এখনও প্রত্যাহার করা হয়নি। এসবের উত্তরে বড় নেতারা বলেছেন, শান্তিপূর্ণ পথে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতেই সমাধান খুঁজতে হবে।

‘কাউকে ক্ষমতায় বসানো বা নামানো আমাদের এজেন্ডা নয়’

কেন্দ্রীয় কমিটির এই সভার আগে কয়েকদিন ধরে হেফাজতের বিভিন্ন স্তরের নেতারা ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন, বিভিন্ন দাবিতে তারা রাজপথে সক্রিয় হবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেভাবে সক্রিয় হচ্ছে না হেফাজত। গতকালের সভায় নেতাদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় ওলামা মাশায়েখ সম্মেলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। এই সময়ের মধ্যে দেশব্যাপী জেলা, উপজেলা ও মহানগর কমিটি গঠন করে প্রত্যেক জেলায় শানে রিসালত সম্মেলনের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। এ সময় রাজনৈতিক বিষয়ে সম্পৃক্ত না হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন হেফাজত নেতারা। সভায় হেফাজতের আমির মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেছেন, ‘আমরা সরকারের শত্রু নই, বন্ধুও নই। হেফাজতে ইসলাম অরাজনৈতিক সংগঠন। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও সংশ্লিষ্টতা নেই। বারবার বলেছি, এখনও বলছি, কাউকে ক্ষমতায় বসানো বা ক্ষমতা থেকে নামানো আমাদের এজেন্ডা নয়।’ 

সংগঠনের অবস্থান নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

এদিকে সংগঠনটির দায়িত্বশীল একাংশ মনে করছে, কয়েক বছর ধরে সরকার হেফাজতের ওপর চরম নিপীড়ন চালিয়েছে। রাজপথের কর্মসূচি ছাড়া এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি মিলবে না। এসব বিষয় নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে দলটির মধ্যে। এ বিষয়ে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মীর ইদ্রীস প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘অস্বস্তি তো একটু থাকবেই। কম কিছু তো হয়নি। তরুণদের একটু ক্ষোভ আছে। তবে আমরা আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতেই সমাধান চাই।’

হেফাজতের এ অবস্থান নিয়ে সমর্থক পর্যায়েও রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। গতকাল সভা চলার সময় সভাস্থলের বাইরে কথা হয় সংগঠনটির কর্মী মইনুল ইসলামের সঙ্গে। ঢাকার ধানমন্ডি থেকে আসা মইনুল বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম অরাজনৈতিকভাবে ইসলামি নীতি-আদর্শ রক্ষায় কাজ করুক। সরকারেরও উচিত আলেম-ওলামাদের মুক্তি দেওয়া।’ তবে অপর কর্মী জুনায়েদ হোসেন বলেন, ‘এই হেফাজতের কাছে কোনো প্রত্যাশা নেই। তারা কোনো প্রত্যাশা পূরণ করার মতো জায়গাতেও নেই। তাদের কোনো দোষ দিতে চাই না। সময়ই সব নির্ধারণ করে দেবে।’ 

এসব প্রসঙ্গে সংগঠনটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, ‘আমরা ধৈর্য ধরতে চাই। কিন্তু ধৈর্যেরও একটা শেষ আছে। ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলে যেকোনো কিছুই হতে পারে।’

সতর্ক দৃষ্টি রাখছে প্রশাসন

এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসন থেকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে হেফাজত নেতাদের ওপর। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার গুরুত্বপূর্ণ একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে সব ইস্যুতেই তারা বিবৃতি দিচ্ছে। কমিটিতে বিতর্কিত অনেক নেতাকেও পদায়ন করা হয়েছে। এসব বিষয় সতর্কতার সঙ্গে লক্ষ করা হচ্ছে।’

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠিত হয়েছিল হেফাজতে ইসলামের কমিটি। তবে নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংসতার জেরে সেই কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। মাওলানা মামুনুল হক, আজিজুল হক ইসলামাবাদীসহ সেই কমিটির প্রভাবশালী নেতাদের অনেকেই কারাগারে বন্দি হন। চলতি বছরের শুরু থেকে ধারাবাহিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতা মুক্তি পেতে থাকেন। এরপর হেফাজতকে পুনর্গঠনে উদ্যোগ নেওয়া হয়। ৩১ আগস্ট ২১১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটি ও ৫৩ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন দেন হেফাজতের আমির।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা