আবুল হাসান, মোংলা (বাগেরহাট)
প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৮:২৩ পিএম
আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২১:৫২ পিএম
সুন্দরবনের পশুর নদীতে মাছ ধরছেন জেলেরা। প্রবা ফটো
মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের কানাইমারী এলাকার জেলে সঞ্জয় ফকির সুন্দরবনের পশুর নদীতে টানা ১৫ দিন জাল ফেলে পেয়েছেন মাত্র চারটি ইলিশ। তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশ ধরতে যাওয়ার আগে মহাজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কিনেছেন জাল, দড়িসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম। মাছ বিক্রি করেই সে টাকা পরিশোধ করবেন—ছিল এমন আশা।
তবে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ মাছ না পেয়ে চিন্তিত সঞ্জয় ফকির। আক্ষেপ করে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ’চারটি মাছ বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করব না সংসার চালাব, তা বুঝে উঠতে পারছি না। গলায় দড়ি দেওয়া ছাড়া আর উপায় নেই।’
শুধু সঞ্জয় ফকির নন, একই এলাকার শিমুল বিশ্বাস, সাইমন সরকার, টিটো বাড়ই, করিম ফকির, মিল্টন বিশ্বাস ও অসিম মণ্ডলরাও স্ত্রীর গয়না বিক্রি করে বা মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে জাল-দড়ি কিনে ইলিশ ধরতে নেমেছিলেন। কিন্তু কারও জালেই দুই থেকে চারটার বেশি মাছ ধরা পড়েনি।
তারা বলেন, জেলে নামধারী একদল দুর্বৃত্ত প্রতিনিয়ত বিষ দিয়ে সুন্দরবনের বিভিন্ন নদ-নদীতে মাছ শিকার করছে। ফলে এই ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছে।
জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতি, মোংলার সভাপতি বিদ্যুৎ মণ্ডল বলেন, ‘বিষের কারণে ইলিশশূন্য নদীর পানি এখন আর মুখে নেওয়া যায় না। গত কয়েক বছরেও সুন্দরবনের বিভিন্ন নদ-নদীতে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা দিত। কিন্তু বিষ দিয়ে মাছ শিকারের ফলে সেই বিষ পানিতে মিশে যাচ্ছে। এ কারণে নদীতে ইলিশ মাছ তো পাওয়াই যাচ্ছে না; অন্য মাছেরও দেখা মিলছে না।’
তিনি বলেন, ‘বিষ দিয়ে মাছ শিকারের সঙ্গে বন বিভাগের কর্মকর্তারা জড়িত রয়েছেন। বিষ দেওয়া বন্ধ না হলে ইলিশ কেন, সুন্দরবনের অভ্যন্তরে নদ-নদীতে কোনো মাছই পাওয়া যাবে না।’
বিষ দিয়ে মাছ শিকারের বিষয়ে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) রানা দেব বলেন, ‘ঢালাওভাবে বন কর্তাদের ওপর দোষ চাপালে হবে না। আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে এক শ্রেণির অসাধু জেলে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করছে; তা সত্য। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বন বিভাগ। যেসব জেলেরা এর সঙ্গে জড়িত তাদের আটক করা হচ্ছে।’
জানা গেছে, সুন্দরবনসহ মোংলা উপকূলে ৬ হাজার ৬৯৫ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন। এসব জেলে নিষেধাজ্ঞা শেষে নদ-নদী ও সাগরে ১ সেপ্টেম্বর থেকে ইলিশ মাছ ধরতে নামেন। কিন্তু মৌসুমের প্রথম থেকে এ পর্যন্ত এই এলাকার জেলেরা আশানুরূপ ইলিশ না পাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
মোংলার প্রধান বাজার মৎস্য সমিতির সভাপতি আফজাল ফরাজি বলেন, ’মৌসুমের শুরুতে নদী ও সাগরে কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা মেলেনি। নদী প্রায় ইলিশশূন্য। মাছ না পাওয়ায় জেলেরা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এদিকে স্থানীয়দের চাহিদা মেটাতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চড়া দামে ইলিশ এনে মোংলা বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে।’
মোংলা উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ’সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীতে বিষ দিয়ে শিকারসহ জলবায়ু পরিবর্তন এবং ডিম ছাড়ার পরিবেশ অনুকূলে না থাকার কারণে মা ইলিশ তাদের গতিপথ পরিবর্তন করে অন্যদিকে চলে যাচ্ছে। যে কারণে সুন্দরবনের নদ-নদীতে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু ইলিশ না, বিষমিশ্রিত পানিতে অন্য মাছের প্রজননও বিঘ্নিত হয়। তাই সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ শিকার বন্ধে জনসচেতনতা এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে।’