বগুড়া অফিস
প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৮:০৩ পিএম
আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৮:৩২ পিএম
অভিযানের পরও বগুড়ায় কমেনি আলুর দাম। ছবি : প্রবা
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযান এবং দাম না কমলে ভারত থেকে আমদানির হুমকি সত্ত্বেও বগুড়ার বাজারগুলোতে আলুর দাম কমেনি। উল্টো সরকারের বেঁধে দেওয়া দরের চেয়ে ১৫ টাকা বেশি দামে আলু বিক্রি হচ্ছে। দাম না কমলে অভিযান চালিয়ে কী লাভ, সেই প্রশ্ন তুলেছেন ক্ষুব্ধ ক্রেতারা।
বাজারে এমন অস্থিরতার মধ্যে লাভ কমে যাবে—এমন শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা হিমাগারে মজুদ করা আলু বিক্রি বন্ধ রেখেছে। শুধু কৃষকরাই টাকার প্রয়োজনে হিমাগারে রাখা আলু থেকে স্বল্প পরিমাণ বিক্রি করছে।
বাজার স্থিতিশীল রাখতে ১৪ সেপ্টেম্বর সরকারের পক্ষ থেকে প্রথমবারের মতো আলুর দাম বেঁধে দেওয়া হয়। ঘোষণা অনুযায়ী, হিমাগার পর্যায়ে প্রতি কেজি আলুর দাম হবে ২৬ থেকে ২৭ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে তা ৩৫ থেকে ৩৬ টাকায় বিক্রির জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে বাস্তবতা হলো, হিমাগার ও বাজারে ওই দরের চেয়ে প্রকারভেদে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেশি দরে আলু কেনাবেচা হচ্ছিল।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারি দামে আলু কেনাবেচা নিশ্চিত করতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম শফিকুজ্জামানের নেতৃত্বে ১৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার শিবগঞ্জ উপজেলার একটি হিমাগারে অভিযান চালানো হয়। এ সময় তথ্য কারসাজির মাধ্যমে আলুর বাজার অস্থিতিশীল করার অভিযোগে স্থানীয় আর অ্যান্ড আর পটেটো কোল্ড স্টোরেজে তৎপর তিন দালালকে আটক করে পুলিশে দেওয়া হয়।
অভিযান শেষে তিনি জানান, আগামী সপ্তাহের মধ্যে যদি আলুর বাজার দর নিয়ন্ত্রণে না আসে, তাহলে আমদানির জন্য বর্ডার খুলে দিতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানানো হবে।
জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অভিযান এবং আলু আমদানির ঘোষণার পর অনেকেই ধারণা করেছিলেন বাজারগুলোতে আলুর দাম কমে আসবে। কিন্তু বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) বগুড়ার পাইকারি ও খুচরা কোনো বাজারেই আলুর দাম তেমন কমেনি। ভালো জাতের আলু আগের মতোই প্রতি কেজি ৫০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে হিমাগারগুলোতে মজুদ আলুর বিক্রিও কমে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি করলে লাভ কমে আসবে—এমন চিন্তাভাবনা থেকেই মজুদদাররা আলু বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। কেবল কৃষকরা তাদের আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে স্বল্প পরিমাণ আলু বিক্রি করছেন।
বুধবার দুপুরে বগুড়া শহরের সাবগ্রাম এলাকায় নর্দান কোল্ড স্টোরেজে গিয়ে আলুর ক্রেতা-বিক্রেতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মজুদদাররা কেউ আলু বিক্রি করতে রাজি নন। শুধু কৃষকরা তাদের মজুদ করা দুয়েক বস্তা আলু বিক্রি করতে আসছেন। সেখানেই কথা হয় সাবগ্রামের কৃষক আব্দুস সোবহানের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘এই হিমাগারে আমার চার বস্তা আলু আছে। আজ সেই আলু বিক্রি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কোনো ক্রেতা নেই। তাই খাওয়ার জন্য এক বস্তা আলু নিয়ে যাচ্ছি।’
ওই হিমাগারের মালিক আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, কোনো ব্যবসায়ীই যাতে সরকারের বেঁধে দেওয়া দরের চেয়ে বেশি দামে আলু কেনাবেচা করতে না পারে, সেজন্য ক্রেতা-বিক্রেতার কাছ থেকে রসিদ সংগ্রহ করে রাখা হচ্ছে।
বগুড়ার পাইকারি ও খুচরা বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে আগের মতোই ভালো জাতের আলু ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। শহরের রাজাবাজারের পাইকারি বিক্রেতা সলিম উদ্দিন অবশ্য দাবি করেছেন, এক দিনের ব্যবধানে পাকরি জাতের আলুর দাম কেজিপ্রতি ২ টাকা কমে এখন ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশের ফতেহ্ আলী বাজারে খুচরা দোকানিরা সেই আলু ৫২ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন।
সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রির কারণ জানতে চাইলে ফতেহ্ আলী বাজারের দোকানি আব্দুর রহিম বলেন, ‘আমাদের বেশি দামে কিনতে হয়েছে। সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া দামে বিক্রি করলে আমাদের লোকসান গুনতে হবে।’ তবে আলু কিনতে আসা আফজাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘গতকাল ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বগুড়ায় অভিযান পরিচালনা করলেন এবং আলুর দাম না কমলে ভারত থেকে আমদানির কথাও জানালেন। যেগুলো মিডিয়ায় প্রচারিত হলো। আমরা ভেবেছিলাম এবার আলুর দাম কমবে; অন্তত সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের কাছাকাছি থাকবে। কিন্তু তা তো হলো না। তাহলে এসব অভিযান চালিয়ে কী লাভ হলো?’
আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না, সে ব্যাপারে জানতে ওই অধিদপ্তরের বগুড়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ইফতেখারুল আলম রিজভীকে কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।