× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

চট্টগ্রামে তুচ্ছ কারণে খুনোখুনি বাড়ছে

আবু রায়হান তানিন, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৪:৪৬ পিএম

আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৪:৫০ পিএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রামের রাউজানে কলেজছাত্র শিবলী সাদিক (১৯) পড়ালেখার পাশাপাশি তত্ত্বাবধায়কের কাজ করতেন একটি মুরগির খামারে। কাজকর্মের ব্যাপারে খুব কড়াকড়ি করতেন তিনি। যা নিয়ে মাসখানেক আগে কর্মরত ৫-৭ জন শ্রমিকের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় তার। এরই জের ধরে শিবলীকে অপহরণ করে হত্যা করে তার সহকর্মীরা। 

শিবলীকে অপহরণ করা হয়েছিল গত ২৮ আগস্ট। এক পক্ষকাল বাদে গত ১৪ সেপ্টেম্বর একটি পাহাড় থেকে তার খণ্ডিত দেহাবশেষ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশ উদ্ধার করে ফেরার পথে পুলিশ ভ্যান থেকে ছিনিয়ে নিয়ে উমং চিং মারমা (২৬) নামের এক আসামিকে হত্যা করে শিবলীর গ্রামবাসীরা। 

শিবলী সাদিকের সঙ্গে তার অপহরণকারীদের কী বিরোধ ঘটেছিল, তা জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন বলেন, ‘শিবলী ছিল খামারের ইনচার্জ। কর্মীদের সে সকালেই জাগিয়ে তুলত এবং কাজ আদায় করে নিতে চাইত। এসব নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া ছিল।’

একই ধরনের তুচ্ছ কারণে হত্যার শিকার হয়েছেন বাঁশখালী উপজেলার পুঁইছড়ি ইউনিয়নের পূর্ব পুঁইছড়ি মাইজপাড়া এলাকার ডেকোরেটর ব্যবসায়ী মোহাম্মদ বাদশাও। গত পহেলা সেপ্টেম্বর তার ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ হত্যার ঘটনায় তার ছেলে এনামুল হককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী পুলিশ জানাচ্ছে, মোহাম্মদ বাদশা কাজের সময় তার পুত্র এনামুলকে নানা সময় বকাঝকা করতেন। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন এনামুল। সেই ক্ষোভ থেকেই দেশি অস্ত্রের আঘাতে পিতাকে হত্যা করেন তিনি।

গত ১৯ দিনে চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলায় মোট ১০টি হত্যার ঘটনা ঘটেছেÑযার বেশিরভাগই ঘটেছে এমন তুচ্ছ কারণে। এর মধ্যে মহানগর এলাকায় চারটি ও বাকি ছয়টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে জেলার বিভিন্ন উপজেলায়। ডিএসবি আরিফ হোসেন বলেন, ‘ঠুনকো বিষয়ে ঝগড়া ও সম্পত্তির দ্বন্দ্ব থেকে এসব হত্যার ঘটনা ঘটছে। আমরা প্রতিটি ঘটনাই গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। জড়িতদের আইনের আওতায় আনার জন্য কাজ করছি।’

আটটি হত্যার কারণ ও হত্যাকারী শনাক্ত

চলতি মাসে সংঘটিত ১০টি হত্যাকাণ্ডের আটটি হত্যার কারণ ও হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। বাকি দুটি ঘটনা এখনও শনাক্ত করা যায়নি। ১৭ সেপ্টেম্বর সকালে নগরীর চান্দগাঁও থানা এলাকায় হাত-পা বেঁধে ধর্ষণের পর গলা টিপে মাত্র সাত বছরের কন্যাশিশু তানহা আক্তার মারিয়াকে হত্যা করা হয়। এর দুই দিন আগে খুলশী এলাকায় ছাত্রলীগ নেতা আব্দুর রহমান সুজনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। সিনিয়র-জুনিয়র তর্কাতর্কির জের ধরে তাকে হত্যা করা হয়। 

গত ১০ সেপ্টেম্বর নগরীর বন্দর থানা এলাকায় পারিবারিক ঝগড়ার জেরে বালিশ চাপা দিয়ে শাশুড়ি রুমা আক্তারকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে মেয়ের জামাই মো. আজিমের বিরুদ্ধে। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে। একই দিন দুপুরে নগরীর পাহাড়তলী থানা এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা মান্নাকে ছুরির আঘাতে হত্যা করে তার বন্ধু জসিম। উপনির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের দায়িত্ব পাওয়া নিয়ে বিরোধের জের ধরে এ হত্যার ঘটনা ঘটে। ১৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে মারা যান বাঁশখালীর দুলা মিয়া। এর আগে আটই সেপ্টেম্বর জমি নিয়ে দ্বন্দ্বে প্রতিবেশীদের হাতে ছুরিকাহত হন তিনি।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) আ স ম মাহতাব উদ্দিন বলেন, ‘অপরাধীদের ধরতে আমরা সব সময়ই তৎপর রয়েছি। বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনায় আমরা কম সময়ের মধ্যেই অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছি। নগর পুলিশ অপরাধ থামাতে সব সময় সোচ্চার।’

পটিয়ায় দুটি হত্যায় কোনো ক্লু পায়নি পুলিশ

গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে পটিয়া পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের জুগিপুকুরের পাশে ধানক্ষেত থেকে কৃষক মনির আহমদের (৭০) ঝলসে যাওয়া দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর তিন দিন আগে মধ্যরাতে পটিয়ার ধলঘাট ইউনিয়নের মুটুকনাইট বাজারের সড়কের পাশ থেকে এক আদিবাসী তরুণীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই দুটি ঘটনার বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্তে যেতে পারেনি পুলিশ। নিহত তরুণীর পরিচয়ও এখনও শনাক্ত করা যায়নি। 

এ প্রসঙ্গে পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রিটন সরকার বলেন, ‘তরুণীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় হত্যা মামলা করা হয়েছে। তার পরিচয় এখনও জানা যায়নি। কৃষকের লাশের বিষয়টা হত্যা কি না, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে নিশ্চিত হওয়া যাবে। এই ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।‘

বিশেষজ্ঞ অভিমত 

মানুষের মধ্যে আত্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে এমন ঘটনা ঘটছে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক মো. সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেছেন, ‘মূলত আত্মনিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েই মানুষ অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে। যেকোনো অপরাধের কার্যকারণের ক্ষেত্রে দেখা যায়, লাভ-ক্ষতির হিসাব বিবেচনায় নিয়ে মানুষ অপরাধ করে থাকে। যখন দেখে অপরাধ করার ফলে ক্ষতির তুলনায় লাভ বেশি, সে ক্ষেত্রে অপরাধের ঝোঁকও বাড়ে অপরাধীদের মধ্যে। এ কারণেই সমাজে ভাড়াটে খুনির দৌরাত্ম্যও রয়েছে। সর্বোপরি, সমাজে মানবিক মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার দীক্ষা দেওয়ার প্রক্রিয়া সুপ্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় অপরাধের প্রবণতা বহুমুখী হয়ে উঠেছে। নানা পারিপার্শ্বিকতার কারণে মানুষ অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় উগ্র।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা