× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ফেনী নদী

বালুবাণিজ্যে আওয়ামী লীগ-বিএনপি একাট্টা

সুবল বড়ুয়া, মিরসরাই (চট্টগ্রাম) থেকে ফিরে

প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:১১ পিএম

ফেনী নদীর মিরসরাই অংশে শুভপুর ব্রিজের দুই পাশে ড্রেজার দিয়ে তোলা বালু বিক্রির জন্য স্তূপ করে রাখা হয়েছে। প্রবা ফটো

ফেনী নদীর মিরসরাই অংশে শুভপুর ব্রিজের দুই পাশে ড্রেজার দিয়ে তোলা বালু বিক্রির জন্য স্তূপ করে রাখা হয়েছে। প্রবা ফটো

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ফেনী নদীর বিভিন্ন অংশ গিলে খাচ্ছে বালুখেকোরা। নদীতে ছোট ছোট মেশিন ও ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে নদীগর্ভে হারিয়ে যেতে বসেছে মিরসরাইয়ের বিস্তীর্ণ এলাকা। ঝুঁকির মুখে পড়েছে উপজেলার হিঙ্গুলী, করেরহাট ও ধুম ইউনিয়ন এবং ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার বিভিন্ন অংশ। 

প্রতিদিন ফেনী নদীর এসব এলাকা থেকে শত শত ট্রাকে করে বিভিন্ন ঘাট থেকে হাজার হাজার ঘনফুট বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। সিন্ডিকেট করে এসব বালু বিক্রি করে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা নিজেদের পকেটে নিচ্ছে বালুখেকোরা। এই সিন্ডিকেটে স্থানীয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে রয়েছেন বিএনপি নেতারাও। 

এদিকে, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তথ্যানুযায়ী মিরসরাই উপজেলার শুভপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ফেনী নদী বালুমহাল থেকে শর্ত সাপেক্ষে বছরে ৪৫ লাখ ৮৩ হাজার টাকায় ৩০ লাখ ঘনফুট ও মোল্লাঘাট বালুমহাল থেকে ৪৬ লাখ ৩৮ হাজার টাকায় বছরে ৫০ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলনের জন্য ১২ মার্চ থেকে গত সোমবার পর্যন্ত আটবার ইজারার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলেও কেউ দরপত্র দাখিল করেননি। 

অথচ সরেজমিন দেখা যায়, এসব এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে এক দিনেই হাজার হাজার ঘনঘুট বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এমনকি শুভপুর ব্রিজের কাছ থেকেও বালু উত্তোলন করতে দেখা গেছে। এতে চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এই শুভপুর ব্রিজটি। যদিও শুভপুর ব্রিজ থেকে ৫শ গজ দূরে গিয়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে বালু উত্তোলনের নির্দেশনা ছিল। কিন্তু নির্দেশনা উপেক্ষা করে স্থানীয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ-বিএনপির একটি সিন্ডিকেট নদীতে একশ থেকে দুইশ গজের মধ্যে অন্তত দশটি ড্রেজার বসিয়ে অবাধে বালু বিক্রি করছে। 

এসব বালুবাণিজ্যে প্রভাবশালী মহল জড়িত থাকায় স্থানীয় কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যক্তি বলেন, সোনা মিয়া চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে এখানে দীর্ঘদিন ধরে বালুমহাল পরিচালিত হচ্ছে। দিনে-রাতে ফেনী নদী থেকে ডেজ্রার ও মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে পার্শ্ববর্তী স্থানে রাখা হয়। পরে বালুগুলো শুকিয়ে এলে ট্রাকে করে অন্যত্র নিয়ে বিক্রি করা হয়।

সরেজমিন ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফেনী নদীর মিরসরাই উপজেলার হিঙ্গুলী ইউনিয়ন, করেরহাট ইউনিয়ন ও ধুম ইউনিয়ন এবং ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার বিভিন্ন অংশ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের নেতৃত্বে দেন সোনা মিয়া সওদাগর। যিনি স্থানীয় হিঙ্গুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ফেনী নদী বালুমহাল সমিতির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। এই সোনা মিয়া চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন থেকে ফেনী নদীর বিভিন্ন অংশ থেকে বালু উত্তোলন করে আসছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তার সিন্ডিকেটে রয়েছেÑমিরসরাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান গিয়াস উদ্দিন জসীম ও সাধারণ সম্পাদক শেখ সেলিম এবং মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাখাওয়াত উল্লাহ রিপন। বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে আরও রয়েছেন সাবেক চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রদল নেতা এবং বর্তমানের স্থানীয় বিএনপি নেতা মোহাম্মদ মহসীন। এই মহসীনের মাধ্যমেই ফেনী নদী থেকে বালু উত্তোলন করে বিভিন্ন এলাকায় সাপ্লাই দেওয়া হয়। 

অভিযুক্ত সোনা মিয়া চেয়ারম্যান বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে বালু বিক্রি প্রসঙ্গে বিএনপি নেতা মোহাম্মদ মহসীন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘সোনা মিয়া চেয়ারম্যানের বালুর ব্যবসা আমি দেখাশোনা করি। কারও বালু লাগলে আমাকে ফোন দিলে দরদাম ঠিক করে গাড়িতে করে আমি বালু পৌঁছে দিয়ে থাকি।’ 

ফেনী নদী থেকে বালু উত্তোলন প্রসঙ্গে করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. এনায়েত হোসেন নয়ন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘সরকার যেখানে ইজারা দিয়েছে সেখান থেকে বালু উত্তোলন করুক। কিন্তু নির্দিষ্ট স্থানের বাইরে গিয়ে নদীতে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করার কারণে নদীর ক্ষতি হচ্ছে। এমনকি অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের কারণে স্থানীয় কৃষকদেরও ক্ষতি হচ্ছে। সেটা থামানো প্রয়োজন।’ 

অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনী নদী বালুমহাল সমিতি ও করেরহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ সেলিম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আপনারা খালি আমাদের দেখেন। ইকোনমিক জোন এলাকার পাশে যে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে, সেটা দেখেন না। ইজারা নিয়েই নির্দিষ্ট স্থান থেকে আমরা ফেনী নদী থেকে বালু তুলছি। ২৪০ জনের মধ্যে আমিও একজন। আমরা সবাই সিন্ডিকেট করে বৈধভাবে বালুর ব্যবসা করছি।’

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) তানভীর আল নাসীফ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ড্রেজার বসিয়ে ইচ্ছেমতো নদী থেকে বালু উত্তোলন করাটা সম্পূর্ণ অনৈতিক। কারা এভাবে বালু তুলছে, আমাদের কাছে তালিকা দেন। বালুখেকোরা যত বড় প্রভাবশালী হোক না কেন, তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ফেনী নদীর মিরসরাইয়ের অংশ দেখভালের দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) চট্টগ্রাম ডিভিশন-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী নাজিদ-উজ-জামান খান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ফেনী নদীর অংশটি মিরসরাইয়ের বিভিন্ন এলাকায় পড়েছে। সেখানকার কিছু অংশে পাউবোর প্রকল্পও রয়েছে। কিন্তু নদীটির মিরসরাই অংশের বিভিন্ন এলাকায় ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করা হলে নদীর ক্ষতি হবে। এমনকি নদীর পাড় ভেঙে স্থানীয়রা দুর্ভোগে পড়বেন। সেক্ষেত্রে অবশ্যই অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করা প্রয়োজন। অন্যথায় নদীর ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যাবে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা