আব্দুল্লাহ আল মামুন, পার্বতীপুর (দিনাজপুর)
প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:৪৮ এএম
দিনাজপুরের পার্বতীপুর রেলওয়ে হাসপাতাল। প্রবা ফটো
বাংলাদেশ রেলওয়ের বৃহত্তম চার লাইনের জংশন দিনাজপুরের পার্বতীপুর রেলওয়ে স্টেশন। পশ্চিম অঞ্চলে রেলওয়ের একমাত্র কেন্দ্রীয় লোকোমটিভ কারখানা (কেলোকা) ছাড়াও ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন ডিপো, রেলওয়ে লোকোশেডসহ ডিজেল ওয়ার্কশপের অবস্থান পার্বতীপুরে। এখানে কর্মরত বিভিন্ন দপ্তরের রেল কর্মকর্তা, শ্রমিক কর্মচারীদের পরিবারের প্রায় ১৫ হাজার সদস্যের চিকিৎসাসেবার জন্য রয়েছে ১৬ শয্যাবিশিষ্ট একটি রেলওয়ে হাসপাতাল। তবে নানা সংকটের মুখে নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে হাসপাতালটি।
রেলওয়ের সংশ্লিষ্টদের জন্য নির্ধারিত হাসপাতালটিতে চিকিৎসকের পদ শূন্য থাকায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। ফলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা স্থানীয় বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছে সুবিধাভোগী রেল কর্মচারীরা। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক না থাকায় বহিরাগত রোগীদের একমাত্র ভরসা ফার্মাসিস্ট রমজান আলী। লোকবল না থাকায় প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রোগীদের প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রদানের পাশাপাশি একাই সামলান আউটডোরের সব কার্যক্রম। এতে হাসপাতালের অন্যান্য কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ব্রিটিশ আমলে নির্মিত পার্বতীপুর রেলওয়ে হাসপাতালে মঞ্জুরিকৃত পদে সহকারী বিভাগীয় মেডিকেল অফিসার ১ জন, সহকারী সার্জন ২ জন, ফার্মাসিস্ট ২ জন, সিস্টার ইনচার্জ ১ জন, সিনিয়র নার্স ৩ জন, জুনিয়র নার্স ১ জন, ড্রেসার ১ জন, ওয়ার্ড এটেনডেন্ট ৬ জন, ওষুধ ক্যারিয়ার (এমসি) ১ জন, বাবুর্চি ১ জন, মশালচি ১ জন, আয়া ২ জন, নিরাপত্তা প্রহরী ২ জন ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী ৫ জন থাকার কথা। তবে ১৪টি পদে ২৯ জনের বিপরীতে ১ জন ফার্মাসিস্ট, ১ জন সিস্টার ইনচার্জ, ২ জন সিনিয়র নার্স, ১ জন জুনিয়র নার্স, ১ জন ওয়ার্ড এটেনডেন্ট, ১ জন আয়া ও ৪ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ ১৩ জন লোকবল নিয়ে খুঁড়িয়ে চলছে হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম। এদিকে নিরাপত্তা প্রহরীর মঞ্জুরিকৃত ২টি পদ শূন্য থাকায় হাসপাতালের ওষুধ ও মূল্যবান চিকিৎসা উপকরণ যেকোনো সময় চুরির আশঙ্কা রয়েছে।
চিকিৎসা নিতে আসা রেল পরিবারের সদস্য জাকির হোসেন বলেন, ডাক্তার দেখাতে এসেছি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক না থাকায় তার মতো অনেকে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ কারণে বাধ্য হয়ে ক্লিনিকে ৫০০ টাকা ফি দিয়ে ডাক্তার দেখাতে হচ্ছে। স্থায়ী ডাক্তার নিয়োগসহ সব সমস্যা সমাধানের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
সেবা নিতে আসা আব্দুল আলিম নামের এক কর্মী বলেন, ‘আগে হাসপাতালে নিয়মিত ডাক্তার বসতেন। পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে এখানেই ভর্তি করাতাম। এখন ডাক্তার নেই। আগের মতো সেবাও পাই না। গুরুতর অসুস্থ কাউকে এখানে আনলে বাইরে পাঠায় তারা। তাই এখানে না এনে সবাই সরাসরি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যায়।’
ফার্মাসিস্ট রমজান আলী জানান, পার্বতীপুরে কর্মরত রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য এই হাসপাতালটি স্থাপন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানায় একটি সরকারি ফার্মেসি রয়েছে। রেলে কর্মরত ছাড়াও তাদের পরিবারসহ প্রায় ৫০০-৬০০ মানুষ প্রতি মাসে এ হাসপাতাল থেকে স্বাস্থ্যসেবা নেয়। দীর্ঘদিন ধরে এখানে স্থায়ী কোনো চিকিৎসক না থাকায় বাধ্য হয়েই তারা বাইরে যাচ্ছেন। উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ব্যথা, আহতসহ বিভিন্ন রোগের ওষুধ হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা হয়। ওষুধ থাকলেও রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগীদের বাইরে ডাক্তার দেখাতে হয়। একসময় হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার থাকলেও বর্তমানে প্রয়োজনীয় লোকবল ও চিকিৎসা উপকরণের অভাবে দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে তা বন্ধ। ফলে গুরুতর রোগী এলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ওষুধ দেওয়ার পাশাপাশি আউটডোরের সব কার্যক্রম তাকে একাই সামলাতে হয়।
লালমনিরহাটের বিভাগীয় চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মাহফুজ ইফতেখার ভুইয়া বলেন, জনবল সংকটের কারণে পার্বতীপুর রেলওয়ে হাসপাতালে তিনজন চিকিৎসকের বিপরীতে একজনও নেই। পশ্চিম জোনের তিস্তামুখ ঘাট, বোনারপাড়া ও পার্বতীপুরকে দেখতে হয় আমাকে। তবে অফিসিয়াল কাজের চাপ সামলানোর পাশাপাশি অনেক সময় পার্বতীপুরে যাওয়া হয় না। তবে গুরুতর রোগী এলে ফার্মাসিস্টরা ফোনে পরামর্শ নেন। সংকট নিরসনে রেল ভবন কর্তৃক চিকিৎসক নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন। দ্রুত নিয়োগ সম্পন্ন হলে এ সমস্যার সমাধান হবে।