মেরিনা লাভলী, রংপুর
প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:৩৮ এএম
আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:৪৮ এএম
রংপুর চিড়িয়াখানায় বাঘের খাঁচায় চট্টগ্রাম থেকে আনা জুলিয়েট। প্রবা ফটো
রংপুর চিড়িয়াখানার বাঘের খাঁচার সামনে সাজ সাজ রব। ফুল-কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়েছে গেট। খাঁচা ও এর চারদিকের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা হয়েছে। নতুন রঙে চকচকে করা হয়েছে খাঁচা। রোমিও-জুলিয়েট আসবে বলে কথা! চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বড় হওয়া এ বাঘযুগল রংপুর চিড়িয়াখানায় নিয়ে আসা উপলক্ষে মঙ্গলবার চারদিকে ছিল হইচই। কোনো কমতি ছিল না আয়োজনের।
সকাল থেকে বাঘ দর্শনের অপেক্ষায় দর্শনার্থী ও গণমাধ্যমকর্মীরা। দুপুর আড়াইটার দিকে ট্রাকে করে এলো বাঘযুগল। ট্রাকে থাকা দুটি খাঁচা লাল কাপড়ে মোড়ানো। খাঁচার আশপাশে মানুষের কোলাহল বাড়ায় হুঙ্কার দিয়ে ওঠে বাঘ। এতেই উৎসুক শিশুসহ বিভিন্ন বয়সি মানুষ দৌড়ে সরে দাঁড়ায়। দায়িত্বশীলরা ক্রেন দিয়ে খাঁচাবন্দি বাঘকে চিড়িয়াখানায় বাঘের খাঁচার পেছনের দরজায় নিয়ে যান। এরপর খাঁচার দরজা খুলে চিড়িয়াখানার স্থায়ী বাড়িতে প্রবেশ করানো হয় রোমিও-জুলিয়েটকে। এরপর বাঘের খাঁচার সামনে রোমিও জুলিয়েটকে স্বাগত জানিয়ে স্লোগান দিতে থাকে উৎসুক জনতা। মানুষের আনাগোনা বাড়ার সঙ্গে থেমে থেমে বাঘযুগল গর্জে ওঠে তাদের উপস্থিতি জানান দেয় দর্শনার্থীদের।
রংপুর চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা যায়, বার্ধক্যজনিত কারণে ২০২২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি চিড়িয়াখানার একমাত্র বাঘ শাওন মারা যায়। এ সময় বাঘের বয়স হয়েছিল ১৮ বছর ৭ মাস। এরপর দীর্ঘ এক বছর সাত মাস বাঘের খাঁচা শূন্য থাকে রংপুর চিড়িয়াখানায়। বাংলাদেশের জাতীয় পশু বাঘ চিড়িয়াখানায় না থাকায় বিনোদনপ্রেমীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে। বিশেষ করে ঈদ-পুজোর ছুটি এবং বিভিন্ন সরকারি ছুটির দিনে পরিবার নিয়ে চিড়িয়াখানায় বেড়াতে এসে বাঘ দেখতে না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যান বিনোদনপ্রেমীরা। এ নিয়ে রংপুর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানালে তারা বিষয়টি আমলে নিয়ে আন্তঃচিড়িয়াখানায় প্রাণী বিনিময়ের সিদ্ধান্ত নেয়। এরই অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা থেকে বাঘ ও বাঘিনীকে মঙ্গলবার রংপুর চিড়িয়াখানায় স্থানান্তর করা হয়। এই বাঘযুগল চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় ২০২১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করে। তাই রংপুর চিড়িয়াখানায় আনার পর কেক কেটে তাদের জন্মদিন পালন করা হয়। সেই সঙ্গে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে তাদের নাম রাখে রোমিও-জুলিয়েট। এদিকে দেড় বছরেরও বেশি সময় পর রংপুর চিড়িয়াখানায় বাঘ আসায় আনন্দ প্রকাশ করে দর্শনার্থীরা।
শিশু রাকাত আরশ মুজনাবিন বলে, চিড়িয়াখানায় বাঘ ছিল না। এখন বাঘ দেখতে পেয়ে আমি অনেক খুশি।
দর্শনার্থী সাইফুল ইসলাম ও রিতু আক্তার বলেন, আমাদের জাতীয় পশু বাঘ। অথচ রংপুর চিড়িয়াখানায় দীর্ঘদিন বাঘ ছিল না। বাঘ আসছে শুনে আমরা সকাল থেকে অপেক্ষা করছিলাম। বিকালে বাঘের দেখা পাওয়া গেল। এ চিড়িয়াখানায় অনেক বুড়ো এবং জোড়াবিহীন পশু আছে। জিরাফ, জেব্রাসহ অন্যান্য পশু এ চিড়িয়াখানায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
রংপুর চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. আম্বার আলী তালুকদার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ২০২১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বাঘ দুটি জন্মগ্রহণ করে। আজ তাদের বয়স দুই বছর পূর্ণ হলো। তাই কেক কেটে তাদের জন্মদিন পালন করা হয়েছে। আমরা প্রতি বছর তাদের জন্মদিন পালন করব। প্রাথমিকভাবে বাঘ দুটির নাম রাখা হয়েছে রোমিও-জুলিয়েট।