সুনামগঞ্জ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২২:০৬ পিএম
আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২২:২৩ পিএম
সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয় রোধে সচেতনতামূলক সভায় অংশগ্রহণকারীরা। প্রবা ফটো
পরীক্ষায় শুধু বেশি নম্বর নয়, শিক্ষার্থীদের বিনয়ী, শিষ্ঠাচার, সৌন্দর্যবোধ ও নৈতিক চেতনায় সমৃদ্ধ হতে হবে বলে জানিয়েছেন কবি ও লেখক সুখেন্দু সেন।
তিনি বলেন, আত্মিক বিকাশ লাভ শিক্ষার মৌলিক বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত। শুধু শিক্ষা নয়, সুশিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই জাতির ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয়। এ জন্য প্রয়োজন শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো।
মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সুনামগঞ্জ পৌরশহরে শহীদ জগৎজ্যোতি পাঠাগারের মিলনায়তনে সচেতন নাগরিকদের প্লাটফর্ম ‘জনউদ্যোগ’-এর আয়োজনে সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয় রোধে সচেতনতামূলক সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সুনামগঞ্জ জনউদ্যোগের আহ্বায়ক রমেন্দ্র কুমার দে মিন্টুর সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল পরিমল কান্তি দে, পৌরসভার মেয়র নাদের বখত, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) হোসাইন মুহাম্মদ আল মুজাহিদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাহিদুল ইসলাম খান, জেলা প্রগতি লেখক সংঘের সভাপতি নির্মল ভট্টাচার্য, জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি গৌরী ভট্টাচার্য্য, জেলা উদীচীর সহসভাপতি সঞ্চিতা চৌধুরী, বিশ্বম্ভরপুর সরকারি দিগেন্দ্র বর্মণ ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক সবিতা বীর, সৃজন বিদ্যাপীঠের শিক্ষক কানিজ সুলতানা, সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক অনুপ নারায়ণ তালুকদার। অনুষ্ঠানে শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
সুখেন্দু সেন বলেন, একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করে জাপান বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করেছে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাতেও এশিয়ার দেশ জাপানকে অনুকরণ করা উচিত। একজন শিক্ষক শুধু বিদ্যালয়ের শিক্ষকই নন, তিনি হবেন সমাজের একজন অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। শিশু তরুণদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত করে তাদের সুকুমারবৃত্তিগুলো জাগ্রত করে মানবসেবা, সমাজসেবায় অনুপ্রাণিত করা যেতে পারে। দেশ ও সমাজের আর্দশবান ও আলোকিত ব্যক্তিত্বদেরকে শিশু-কিশোরদের সামনে উপস্থাপন করাও শিক্ষক ও অভিভাবকদের নৈতিক দায়িত্ব।
সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পরিমল কান্তি দে বলেন, উপযুক্ত শিক্ষার অভাব নৈতিকতার অবক্ষয়ের আরেকটি কারণ। আজকাল শিক্ষা বলতে অনেকেই বুঝেন পরীক্ষা এবং ডিগ্রি অর্জন। জীবনে উন্নতি বলতে বুঝেন কাড়িকাড়ি টাকা ও প্রতিপত্তি। ফলে শিক্ষার মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় না মহৎ কোনো জীবনবোধ। ফলে আমাদের শিশুরা বড় হচ্ছে একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা, বিরোধ ও বিদ্বেষের মধ্য দিয়ে। সেখানে শিশুরা পারস্পরিক সহমর্মিতা,অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া বিষয়ক কোনো নৈতিক শিক্ষা লাভ করতে পারছে না। শিক্ষার হার বাড়লেও সুশিক্ষায় সুশিক্ষিতের হার নিম্নমুখী।
জেলা প্রগতি লেখক সংঘের সভাপতি নির্মল ভট্টাচার্য বলেন, সামাজিক অবক্ষয়ের জন্য সোস্যাল মিডিয়া বহুলাংশে দায়ী। দেশে ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ায় এবং হাতে হাতে ফোন থাকায় বাস্তব সমাজের বিপরীতে আরেকটি ভার্চুয়াল সমাজ প্রতিষ্ঠা হয়েছে। প্রয়োজনীয় শিক্ষার অভাব এবং ব্যবহার সম্পর্কে উপযুক্ত জ্ঞান অর্জনের আগেই হাতে হাতে ইন্টারনেট পৌঁছে যাওয়ার ফলে এর ভালো দিকগুলোর পরিবর্তে খারাপ দিকগুলো বেশি প্রকাশ পাচ্ছে। এর ফলে অনলাইনে যৌন হয়রানিসহ, সহিংসতা, অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। নানা ধরনের ভিডিও গেমের আসক্তিতে শিশু-কিশোরদের প্রকৃত সৃষ্টিশীলতা বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেক ভিডিও গেম তরুণদেরকে আত্মঘাতী হতেও প্ররোচিত করে। এসব রোধে শিক্ষার্থীদের সচেতন হতে হবে। একইসঙ্গে শিক্ষক ও অভিভাবকদের কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে।
শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তরে পৌরসভার মেয়র নাদের বখত বলেন, বিদ্যালয়ের ১০০ মিটারের ভেতরে থাকা দোকানে তামাকজাত দ্রব, সিগারেট বিক্রি করতে পারবে না। কোনো দোকানি এসব বিক্রি করলে শিক্ষার্থীরা তার শিক্ষকের সহযোগিতায় প্রশাসনকে জানাতে হবে। প্রশাসন দোকানির বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। এ ছাড়া পৌরশহরে কিছু সড়কে নাগরিক ভোগান্তি কমাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন বলে শিক্ষার্থীদের জানান তিনি।