রাশিদুল ইসলাম রাশেদ, কুড়িগ্রাম
প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৮:৫৭ পিএম
আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৯:১৯ পিএম
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার বেরুবাড়ী ছড়ায় নির্মিত সেতুটি ভেঙে গেছে। ছবিটি সম্প্রতি তোলা
বন্যা ও ভূমিকম্পে ২০১৬ সালে ভেঙে পড়ে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার বেরুবাড়ী ছড়ায় (খাল) নির্মিত সেতুটি। এতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে আশপাশের ছয় গ্রামের হাজার হাজার মানুষ। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, পণ্যবাহী পরিবহন, গুরুতর অসুস্থ রোগীদের অ্যাম্বুলেন্সে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিতে না পারা এবং জরুরি প্রয়োজনে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করতে না পারায় দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয়রা। দুর্ভোগ নিরসনে অবিলম্বে নতুন করে সেতু নির্মাণের দাবি তাদের।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নাগেশ্বরী উপজেলার হাজিপাড়া, সরকারপাড়া, মণ্ডলপাড়া, মিরারভিটা, চর বেরুবাড়ী, চর শালমারা, আকন্দপাড়া ও বেরুবাড়ী ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন ওই সেতু ব্যবহার করে থাকে। এ ছাড়া স্কুল-কলেজ, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বেরুবাড়ী বাজার হয়ে উপজেলা শহরে অফিস-আদালতে যেতে এই সেতু দিয়ে পারাপার হতে হয়। স্থানীয় মিরারভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর বেরুবাড়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়, নাগেশ্বরী সরকারি মহিলা কলেজ, নাগেশ্বরী সরকারি কলেজ এবং ওই ইউনিয়নের প্রায় পাঁচটি ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা এই সেতু দিয়ে যাতায়াত করেন।
স্থানীয়রা জানান, পাকিস্তান শাসনামলে বেরুবাড়ীর ছড়ার ওপর প্রায় ৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মিত হওয়ার পর থেকে আর মেরামত করা হয়নি। ২০১৬ সালে ভূমিকম্পে সেতুর পশ্চিম দিকে ২০ মিটার অংশ এবং পূর্ব দিকে ১০ মিটার অংশ দেবে গিয়ে ভেঙে যায়। এতে চলাচলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে সেতুটি। একই বছর নিচ দিয়ে একটি ট্রাক্টর যাওয়ার সময় সেতুটিতে ধাক্কা লেগে আরও ভেঙে যায়। এতে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে সেতুটি। ফলে নাগেশ্বরী উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বেরুবাড়ী ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ।
পরে ২০১৭ সালে বেরুবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সহযোগিতা ও স্থানীয়দের সমন্বয়ে ওই সেতুর ওপর একটি সাঁকো নির্মাণ করা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ওই কাঠের সাঁকোটি সংস্কার না করায় সেটিও ভেঙে যায়। চলতি বছরের বন্যায় একটি অংশ দেবে গিয়ে সেতুটি এখন এলাকাবাসীর মারণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এমতাবস্থায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেতু পারাপার হচ্ছে স্থানীয়রা। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তারা।
নাগেশ্বরী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আতিক হাসান বলেন, ‘তিন বছর ধরে সেতু দিয়ে যাতায়াত করছি। সেতুটি ভেঙে পড়ায় প্রায় ৩ কিলোমিটার পথ ঘুরে কলেজে যেতে হয়। এতে সময় নষ্ট হয়। অনেক সময় নির্দিষ্ট সময়ে ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারি না।’
চর বেরুবাড়ী গ্রামের রোস্তম আলী বলেন, ‘সেতু দিয়ে যাতায়াত করতে না পারায় অনেক দূর ঘুরে নাগেশ্বরী উপজেলা সদরে যেতে হয়। এতে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সময় ও টাকা অপচয় হয়। জরুরি রোগী পরিবহনের ঝুঁকি নিতে হয়। তাই দ্রুত একটা নতুন সেতু নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।’
বেরুবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সোলায়মান আলী বলেন, ‘২০১৬ সালে ভূমিকম্পে সেতুটির দুই পাশে দেবে গিয়ে ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। একাধিকবার লিখিত ও মৌখিকভাবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেও কাজ হচ্ছে না। সেতুতে যাতায়াতের সড়কটি আইডিভুক্ত না হওয়ায় উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার বলেছেন, জটিলতটা আছে। তাই সেতুটি শিগগিরই হচ্ছে না।’
এ বিষয়ে জানতে নাগেশ্বরী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রকৌশলী ওয়াসিম আতাহারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি। কুড়িগ্রাম এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুদুজ্জামান বলেন, ‘২০১৬ সালে সেতুটি ভেঙে যায় বলে শুনেছি। উপজেলা প্রকৌশলী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ২৩৬টি নতুন রাস্তাকে আইডিভুক্তির তালিকায় সেতুটির নাম পাঠানো হয়েছে। সড়কটি আইডিভুক্ত হলে সেতু নির্মাণ সহজ হবে। আশা করছি সেটি দ্রুত সম্ভব হবে।’