এসপিএম প্রকল্প
নুপা আলম, কক্সবাজার
প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:২০ পিএম
আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:২১ পিএম
পাইপলাইনে তেল খালসের জন্য গভীর স্থাপন করা বিশেষ ভয়া। প্রবা ফটো
কক্সবাজারের মহেশখালীতে বাস্তবায়নাধীন সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে ৯৮ শতাংশ শেষ হয়েছে। আগামী অক্টোবরেই এই প্রকল্পের পরীক্ষামূলক কমিশনিং শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তারা বলছেন, বিদেশ থেকে আমদানি করা জ্বালানি তেল খালাসে আর লাগবে না লাইটার জাহাজ। আর ১২ দিন নয়, তেল খালাস হবে মাত্র ৪৮ ঘণ্টায়। এতে বছরে সাশ্রয় হবে ৮০০ কোটি টাকা। অক্টোবরেই গভীর সমুদ্রে নোঙর করা বড় জাহাজ থেকে পাইপলাইনে আসবে জ্বালানি তেল।
এর আগে গত ৩ জুলাই সমুদ্রে জাহাজ থেকে এসপিএমের মাধ্যমে পরীক্ষামূলক তেল খালাস কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছিল। মাত্র পাঁচ ঘণ্টা পর এসপিএমের সঙ্গে জাহাজের সংযোগকারী পাইপলাইনে সমস্যা দেখা দিলে সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এ সমস্যা বা জটিলতা শেষ করে প্রকল্পটি অক্টোবরে কমিশনিংয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. শরিফ হাসনাত জানিয়েছেন, এসপিএম প্রকল্পের আওতায় ২২০ কিলোমিটার পাইপলাইনের পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে ছয়টি বিশালাকার স্টোরেজ ট্যাংক। একই সঙ্গে তৈরি করা হয়েছে পাম্প স্টেশন, বুস্টার পাম্প, জেনারেটর, মিটারিং স্টেশন, ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম। যা এখন পুরোপুরি দৃশ্যমান।
প্রকল্প পরিচালক জানান, দেশের জ্বালানি খাতে যুগান্তকারী মেগাপ্রকল্প ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডাবল পাইপলাইন প্রকল্প শিগগিরই চালু হতে যাচ্ছে। প্রকল্পের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম বা কমিশনিংয়ের কাজ পুরোপুরি অক্টোবরের শেষের দিকে শুরু হবে।
প্রকৌশলী মো. শরিফ হাসনাত বলেন, জ্বালানি তেল সংরক্ষণের জন্য বিশালাকার তিনটি ক্রুড অয়েল (অপরিশোধিত তেল) ট্যাংক ও তিনটি ডিজেল অয়েল (পরিশোধিত তেল) ট্যাংক করা হয়েছে। প্রত্যেকটি ক্রুড অয়েল ট্যাংকে ধারণক্ষমতা ৪২ হাজার মেট্রিক টন করে তিনটি ট্যাংকে ১২৬ মেট্রিক টন এবং প্রত্যেকটি ডিজেল অয়েল ট্যাংকে ধারণক্ষমতা ২৬ হাজার মেট্রিক টন করে তিনটি ট্যাংকে ৭৮ হাজার মেট্রিক টন মজুদের সক্ষমতা রয়েছে। সব মিলিয়ে এই প্রকল্পের মাধ্যমে ২ লাখ ৪ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি তেল মজুদের সক্ষমতা বাড়ছে।
চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড বর্তমানে দেশের প্রথম এসপিএম সিস্টেম তৈরি করেছে। বাংলাদেশ ও চীনের জিটুজি প্রকল্পের আওতায় ৮ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে এসপিএম। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, এই প্রযুক্তিতে অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি তেল পরিবহনেও নৈরাজ্য কমানো সম্ভব। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ বলেন, গভীর সাগর থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে মহেশখালী ট্যাংক পাম্প স্টেশনে তেল মজুদ করা হবে। যার মাধ্যমে তেল আনা হবে সেটি হচ্ছে এসপিএম বয়া, যা গভীর সাগরে স্থাপন করা হয়েছে।
এবিএম আজাদ বলেন, যেখানে জ্বালানি তেল খালাস করতে ১২ থেকে ১৪ দিন সময় লাগত, সেখানে মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় গভীর সাগরে বড় জাহাজ থেকে বিশেষ বয়ার মাধ্যমে সাগরের তলদেশ দিয়ে পাইপলাইনের সাহায্যে মহেশখালীতে স্থাপিত রির্জাভ ট্যাংকে তেল মজুদ করা যাবে। আর্থিক ব্যয়ের ক্ষেত্রে বছরে ন্যূনতম ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে। এই প্রকল্পের যে ব্যয়, তা আগামী চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে উঠে আসবে।
পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘এসপিএম প্রকল্পের ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আমরা আগামী অক্টোবরের শেষের দিকে কমিশনিংয়ের দিকে যাব। কমিশনিংটা শেষ হলে নভেম্বর বা ডিসেম্বরের দিকে পুরো অপারেশনাল কাজে আমরা যেতে পারব বলে আশা করি।’