কুমারখালী পল্লী বিদ্যুৎ
কুষ্টিয়া প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:৩৮ এএম
ট্রান্সফরমারের খোলস পড়ে আছে, যন্ত্রাংশ নেই। বুধবার সকালে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর জোতমোড়া গ্রামে। প্রবা ফটো
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার চুরির হিড়িক পড়েছে। গত ১৬ মাসে ৬৭টি ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৬৬টি ট্রান্সফরমারই কৃষিকাজে ব্যবহৃত সেচ পাম্পের। যার মূল্য প্রায় ২৯ লাখ ২০ হাজার টাকা। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাতে উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের জোতমোড়া গ্রাম থেকে পাঁচ কিলো ভোল্ট অ্যাম্পিয়ার (কেভিএ) ধারণক্ষমতাসম্পন্ন একটি ট্রান্সফরমারের যন্ত্রাংশ চুরির ঘটনা ঘটে।
পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিটি চুরির ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো চোর শনাক্ত হয়নি। উদ্ধার হয়নি চুরি হওয়া মালামালও। সেচ পাম্পের কাজে ব্যবহৃত ট্রান্সফরমার চুরি হওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।
কুমারখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জোনাল কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের মে মাস থেকে চলতি বছরের ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬৭টি ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৫৫টি ৫ কেভিএ। প্রতিটি প্রায় ৪০ হাজার টাকা করে, যার মূল্য প্রায় ২২ লাখ টাকা। আর ১০ কেভিএ ১২টি ট্রান্সফরমার। যার প্রতিটি প্রায় ৬০ হাজার টাকা করে মূল্য ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। চুরি যাওয়া ট্রান্সফরমারের মধ্যে মাত্র একটি আবাসিক এলাকার। বাকি সব কৃষিকাজে ব্যবহৃত সেচ পাম্পের। প্রতিটি চুরির ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে কর্তৃপক্ষ।
গত মঙ্গলবার সরেজমিনে উপজেলার জোতমোড়া গ্রামের নীলের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, কৃষক আমির ফরায়েজির সেচ পাম্পের ট্রান্সফরমারটি বিদ্যুতের খুঁটিতে নেই। পাশে কলাবাগান খোলস পড়ে আছে। কিন্তু ভিতরের কয়েল ও তেল নেই। আমির ফরায়েজি জানান, সকালে মাঠে এসে দেখেন সেচ পাম্পে বিদ্যুৎ নেই। পরে দেখেন বিদ্যুতের খুঁটিতে ট্রান্সফরমারই নেই। পাশের কলাবাগানে সেটির খোলস পড়ে আছে, কিন্তু ভিতরের কয়েল ও তেল নেই।
এর আগে গত ১৪ আগস্ট রাতে যদুবয়রা ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের মাঠে কৃষক আকরাম হোসেনের সেচ পাম্পের ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, ‘ছয় মাসে দুইবার ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। একটি ট্রান্সফরমারের দাম প্রায় ৬০ হাজার টাকা। চুরির আতঙ্কে রাতে ঘুম হয় না।’
যদুবয়রা পল্লী বিদ্যুতের সাবস্টেশন কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান জানান, তার এলাকায় চলতি বছরে ৬টি ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। এতে কৃষকরা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
কুমারখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জোনাল কার্যালয়ের কর্মকর্তা (ডিজিএম) আনসার উদ্দিন বলেন, ‘একটি সংঘবদ্ধ চক্র নিয়মিত ট্রান্সফরমার চুরি করছে। পরিকল্পিতভাবে ফাঁকা ও নির্জন মাঠের সেচ পাম্পের ট্রান্সফরমার চুরি করছে তারা। চক্রটির কাছে পল্লী বিদ্যুৎ ও কৃষক অসহায় হয়ে পড়েছে। থানায় অভিযোগ দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। চলতি বছরে ৩৯টিসহ গত ১৬ মাসে ৬৭টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রায় ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
জানতে চাইলে কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকিবুল ইসলাম বলেন, ‘দক্ষ লোক ছাড়া কেউ ট্রান্সফরমার চুরি করতে পারে না। বিষয়টি মাথায় রেখে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’