কাপ্তাই লেক
রাঙামাটি প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:৫৩ এএম
রাঙামাটির কাপ্তাই লেকের পানি বেড়ে যাওয়ায় শহরের ফিশারি সড়ক সংযোগ বাঁধটি মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে। প্রবা ফটো
টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে রাঙামাটির কাপ্তাই লেকের পানি অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। এতে শহরের ফিশারি সড়ক সংযোগ বাঁধটি মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে। পানি বেড়ে যাওয়ায় কাপ্তাই বাঁধ ঝুঁকিমুক্ত করতে ইতোমধ্যে ১৬টি দরজাই খুলে দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের নির্দেশে বাঁধ রক্ষায় বল্লি গেড়ে পাইলিং করছে রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ।
১৯৬০ সালের দিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কাপ্তাই লেকে বাঁধ নির্মাণের ফলে পুরোনো রাঙামাটি শহরসহ অন্যান্য এলাকা জলমগ্ন হয়ে যায়। এ সময় রিজার্ভ বাজার ও তবলছড়ির সঙ্গে বনরূপার যাতায়াতের জন্য সংযোগ বাঁধ দেওয়া হয়; যা বর্তমানে ফিশারি বাঁধ সংযোগ সড়ক হিসেবে পরিচিত। বাঁধটি শহরের একমাত্র সংযোগ সড়ক হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থাকায় বাঁধটি পর্যটকদেরও আকৃষ্ট করে।
গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে কাপ্তাই লেকেরে পানি বেড়ে গেছে। ঢেউয়ের তোড়ে ফিশারি বাঁধ সংযোগ সড়কটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। গতকাল শনিবার বিকালে সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় আধা কিলোমিটারেরও বেশি দৈর্ঘ্যের বাঁধটির বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে যেকোনো মুহূর্তে বাঁধটি ধসে মারাত্মক বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পানি বেড়ে যাওয়া ছাড়াও বছরজুড়ে নৌযান থেকে বিভিন্ন মালামাল ওঠানো-নামানো ও যাত্রীবাহী স্পিডবোটের কারণে বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
মোহাম্মদ শামসুল আলম নামে স্থানীয় একজন বলেন, ‘শহরের ফিশারি বাঁধের অবৈধ ব্যবহারের ফলে তা দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। ভাঙন ও ধস দেখা দিয়েছে। প্রশাসন পার্কিং নিষেধ করে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেওয়া হলেও তা বন্ধ হচ্ছে না। ব্যবস্থা না নিলে যেকোনো মুহূর্তে বাঁধটি ধসে হ্রদে বিলীন হয়ে যেতে পারে।’
মো. নাজিবুর বিশ্ব নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘লেকের পানি বাড়ায় ও অতিরিক্ত ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে সড়কটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। এভাবে বল্লি গেড়েও বাঁধটি রক্ষা করা সম্ভব হবে না, পদক্ষেপ নিতে হবে।’
রাঙামাটি সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, ‘শহরের ফিশারি বাঁধটি হুমকিতে রয়েছে। খবর পেয়ে পাইলিং শুরু করেছি। বাঁধ রক্ষায় উভয় দিকে ধারক দেওয়াল নির্মাণাধীন থাকলেও বর্ষার কারণে তা বন্ধ রয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পানি না কমলে কাজ করা যাবে না। কাজ শেষ হতে যথেষ্ট সময় লাগবে।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, ‘বাঁধ হুমকিতে পড়ায় সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে জরুরি পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় কাজ চলছে বলে জানানো হয়েছে।’
এ দিকে কাপ্তাই বাঁধের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় গত শুক্রবার ১৬ দরজাই খুলে দেওয়া হয়েছিল। গতকাল সকালে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এদিন বিকাল পর্যন্ত হ্রদে ১০৭ দশমিক ৯ ফুট এমএসএল (মিন সি লেভেল) পানি ছিল বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আব্দুজ্জাহের জানান, রুলকার্ভ অনুযায়ী (সময়সূচিভিত্তিক পানি ওঠা-নামার মাপ) হ্রদের ১০৯ ফুট এমএসএল। ১০৭ ফুট এমএসএল অতিক্রম করলে বিপদসীমা। সম্প্রতি টানা বর্ষণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ১০৮ ফুট এমএসএল হয়ে যায়। তাই গত শুক্রবার সকালে বাঁধের স্প্রিলওয়ের ১৬ দরজা খুলে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। শনিবার সকালে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’