রাজু আহমেদ, রাজশাহী
প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:২৬ এএম
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) সিভিল ডিপার্টমেন্টের জুনিয়র সেকশন অফিসার মো. আব্দুল ওয়াহেদ খান টিটু।
চাকরি করেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। পদ জুনিয়র সেকশন অফিসার। বেতন-ভাতাও নেন; শুধু অফিসটা করেন না। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এই ব্যক্তি হলেন মো. আব্দুল ওয়াহেদ খান টিটু। তিনি রুয়েটে যোগদান করেন ২০১৭ সালের জুলাই মাসে। কিন্তু পরের বছর থেকে প্রায় পাঁচ বছর ধরে অফিস করছেন না। এতটা সময় ধরে তিনি কাজ করছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের এপিএস হিসেবে। এ নিয়ে রুয়েটের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের দাবি অবাক করার মতোই। তিনি জানান, তারা টিটুর অনুপস্থিতির বিষয়টি জানতেন না।
তবে রুয়েট প্রশাসনের কয়েক কর্মকর্তা জানান, মেয়র সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও রুয়েটের অনুমতি না নিয়েই টিটুকে তার এপিএস হিসেবে কাজ করাচ্ছেন। সেই সুযোগে টিটু অফিসে অনুপস্থিত থাকছেন। তবে টিটুর দাবি, তিনি নিয়ম মেনেই ডেপুটেশনে বদলি হয়ে মেয়রের এপিএস হিসেবে কাজ করছেন।
টিটুর অনুপস্থিতির বিষয়টি নিয়ে এতদিন কানাঘুষা হলেও সম্প্রতি প্রকাশ্যে আসার পর তার বেতন স্থগিত করার পাশাপাশি তাকে কারণ দর্শাতে বলেছে রুয়েট প্রশাসন। সিটি করপোরেশন ও রুয়েটের একাধিক সূত্রের দাবি, একসময়ের ছাত্রলীগ এবং বর্তমান স্বেচ্ছাসেবক লীগের এই নেতা প্রভাব খাটিয়ে নিজ কর্মস্থল রুয়েটে বছরের পর বছর কাজ ফাঁকি দিয়েছেন। তবে তুলেছেন বেতন-ভাতাদির ১৮ লক্ষাধিক টাকা।
এদিকে রুয়েটের নতুন ভিসি দায়িত্বভার গ্রহণের পর সিভিল ডিপার্টমেন্টের প্রধান বিষয়টি ভিসিকে লিখিতভাবে জানান। এরপর রুয়েটের রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে গত ৪ সেপ্টেম্বর টিটুকে দীর্ঘদিন অফিসে অনুপস্থিতির কারণ জানাতে বলা হয়। এরপর গতকাল শনিবার তিনি রুয়েটের ওই চিঠির উত্তর দেন বলে জানা গেছে।
রাসিকের বর্তমান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম শরীফ উদ্দিন জানান, টিটুকে রাসিকে প্রেষণে বদলির জন্য রাসিক থেকে রুয়েট প্রশাসনের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। এরপর ওনাকে এখানে পোস্টিং দেওয়ার বিষয়ে রাসিকের ফাইলে কোনো কাগজপত্র দেখিনি। মেয়রের সহকারী হিসেবে কাজ করলেও তিনি রাসিক থেকে কোনো বেতন-ভাতা পান না।
টিটু দাবি করেন, ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর রাসিকের তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাসিকের ক্রীড়া ও সংস্কৃতি কর্মকর্তা পদে তাকে প্রেষণে বদলির জন্য আবেদন করেন। এমনকি বিষয়টি নিয়ে রুয়েটের সিন্ডিকেট সভায় আলোচনার মাধ্যমে অনুদানও দেওয়া হয়। এসবের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তার কাছে আছে।
রুয়েটের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. সেলিম হোসেন বলেন, টিটুকে প্রেষণে বদলির জন্য আবেদন করা হয় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে। পরে বিষয়টি নিয়ে রুয়েটের সিন্ডিকেট সভায় আলোচনা হয়। যেখানে সিন্ডিকেট সদস্যরা টিটুকে প্রেষণে পাঠানোর বিষয়ে সম্মতি দেন এবং রুয়েটের তৎকালীন ভিসি রফিকুল ইসলাম সেখকে নির্বাহী ক্ষমতা অর্পণ করেন। তবে ভিসি তার সেই ছুটি মঞ্জুর করেননি বা এ-সংক্রান্ত কোনো অফিসিয়াল অর্ডার জারি করেননি। জারি করলে তা অফিস ফাইলে থাকত।
তৎকালীন রেজিস্টার আরও জানান, সিভিল বিভাগের বর্তমান প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে টিটুর অনুপস্থিতির বিষয়টি জানানোর পর আমরা অবাক হই। কারণ সিভিল বিভাগ থেকে প্রতিবছর জানানো হচ্ছে অন্যান্য কর্মকর্তা বা কর্মচারীর মতো জুনিয়র সেকশন অফিসার টিটুও নিয়মিত অফিস করছেন ও নিয়মিত বেতন-ভাতাদি পাচ্ছেন।
রুয়েটের সিভিল বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. মাহমুদ সাজ্জাদ বলেন, ‘আমি দায়িত্ব গ্রহণের এক বছরও হয়নি। রুয়েটে এক বছর ভিসির পোস্টটি ফাঁকা ছিল। সম্প্রতি ভিসি নিয়োগের পর টিটুর অনুপস্থিতির বিষয়টি অফিসিয়ালি জানিয়েছি। এরপর প্রশাসন তাকে ৭ দিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে নির্দেশ দেয়।’
রুয়েটের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার আরিফ আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘এতদিন সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ না আসায় টিটুর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়নি। তা ছাড়া আমরা টিটুর অনুপস্থিতির বিষয়টি জানতামও না। অভিযোগের পর রুয়েট প্রশাসন তার বেতন বন্ধসহ কারণ দর্শাতে বলেছে। সেই সঙ্গে তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আগামী সিন্ডিকেটে রুয়েটের গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে টিটোর এই বিষয়টি নিয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
রেজিস্ট্রার আরও বলেন, ‘বিভাগীয় প্রধানের কাছ থেকে লিখিতভাবে টিটুর অনুপস্থিতির বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে তার বেতন বন্ধ করে দিয়েছি। কাজ না করলে বেতন দেওয়ার এখতিয়ার আমাদের নেই।’
রেজিস্ট্রার আরিফ আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘এ ধরনের প্রেষণে জনবল বদলির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ গ্রহণ করতে হয়। মেয়র যদি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ নিয়ে আসতেন, তবে হয়তো আমরা কিছু করতে পারতাম। আর এখানে কাজ না করলে বেতন দেওয়ার এখতিয়ার আমাদের নেই।’
রুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। এর জন্য সময় প্রয়োজন।’