এম আর মাসফি
প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০০:৪৪ এএম
সাজেকের উন্নয়নে ৪৮ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
নন্দিত পর্যটনকেন্দ্র রাঙামাটি জেলার সাজেকসহ আশপাশের এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের পানি ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ৪৮ কোটি ৩১ লাখ টাকার নতুন এক প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় সাজেকসহ রাঙামাটির বিভিন্ন উপজেলার পাথুরে এলাকায় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনার সম্প্রসারণ এবং উন্নয়ন করা হবে। অনুমোদন পেলে প্রকল্পটি জুন ২০২৬ মেয়াদে বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই)।
প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে সাজেক পর্যটন এলাকায় পাইপলাইনের মাধ্যমে নিরাপদ পানি সরবরাহ করা, রাঙামাটি জেলার বিভিন্ন উপজেলার পাথুরে এলাকায় জি এফ এস স্থাপনের মাধ্যমে নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং প্রকল্প এলাকার ইউনিয়ন পর্যায়ের জনসমাগমপূর্ণ স্থান ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে পাবলিক টয়লেট নির্মাণের মাধ্যমে স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন করা।
রাঙামাটির ছাদ সাজেক উপত্যকা
সাজেককে বিখ্যাত পর্যটন স্থান উল্লেখ করে প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, সাজেক রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার একটি ইউনিয়ন। এটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ইউনিয়ন- যার আয়তন ৭০২ বর্গমাইল। সাজেক উপত্যকাকে রাঙামাটির ছাদও বলা হয়। প্রতিদিনই এখানে কমপক্ষে ২০০০ থেকে ২৫০০ পর্যটক আসে। সাপ্তাহিক ও অন্যান্য ছুটির সময় আসে প্রায় আট হাজার থেকে ১০ হাজার পর্যটক। এখানে ১৫০টির বেশি হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। স্থানীয় অধিবাসী ও হোটেল রিসোর্টের পরিচালনাকারী জনগণ নিয়ে এখানে চার হাজারের মতো মানুষ স্থায়ীভাবে বাস করে।
সাজেক পর্যটন এলাকার সংকট তুলে ধরে প্রস্তাবনায় বলা হয়, নৈসর্গিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এই সাজেক উপত্যকায় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। হোটেল/রিসোর্টগুলো ৫ কি.মি. দূরে প্রায় ২৫০০ ফুট নিচে অবস্থিত। পাহাড়ি ছড়া থেকে শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে পানি তুলে এক হাজার লিটার অথবা দুই হাজার লিটারের প্লাস্টিক ট্যাংক পূর্ণ করা হয়। জীপগাড়ি দিয়ে এই পানি নিয়ে আসা হয় হোটেল/রিসোর্টে। শুষ্ক মৌসুমে এসব ছড়ায় পানির প্রবাহ একবারেই কমে যায়। বর্ষাকালে আবার পানি বেশ ঘোলা হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে পর্যটকরা খাওয়ার পানির জন্য বোতলজাত পানি ব্যবহার করে থাকে। স্থানীয় জনগণও পাহাড়ের ঝিরি থেকে গর্ত করে পানি সংগ্রহ করে চাহিদা মেটায়।
প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়, ভৌগোলিক কারণে রাঙামাটির বিভিন্ন এলাকা এবং সাজেকের অধিকাংশ এলাকা পাথুরে হওয়ায় নলকূপ স্থাপন সফল হয় না। পাহাড়বেষ্টিত সাজেকে ভূ-উপরিস্থ ও ভূ-পৃষ্ঠস্থ দুটি উৎস থেকেই পানি পাওয়া খুব কঠিন। পাথুরে কঠিন শিলাস্তরের কারণে নলকূপ স্থাপনও খুব কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল। তা ছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পানিবাহিত বালিস্তর না পাওয়ায় নলকূপ বসালেও পানি পাওয়া যায় না।
পানি সংকট দূর করতে মিনি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট
সাজেকের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে প্রস্তাবনায় বলা হয়, সাজেক পর্যটন এলাকায় পানি সরবরাহের জন্য ৫ কি.মি. দূরে দুই হাজার ফুট নিচের ছড়া থেকে পানি তুলে কয়েকটি বুস্টিং পাম্প দিয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে মিনি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। শুষ্ক মৌসুমে পানির চাহিদা মেটাতে পরীক্ষামূলক নলকূপ এবং উৎপাদক নলকূপ বসানো যেতে পারে।
তবে রাঙামাটি জেলার বেশ কয়েকটি পাথুরে এলাকায় কঠিন শিলাস্তর থাকায় নলকূপ বসানো সম্ভব হয় না। এসব এলকায় প্রাকৃতিক ঝরনা থেকে পাইপলাইনের (জিএফএস) মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা যেতে পারে।
সামগ্রিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে এই প্রকল্পের আওতায় এই এলাকায় চলমান পরিস্থিতি ও বর্তমান চাহিদার ভিত্তিতে ৬টা পরীক্ষামূলক নলকূপ ও তিনটি উৎপাদক নলকূপ বসানোর, ৩টি পাম্প, ট্রান্সফরমার, রিটেইনিং ওয়াল ও নিরাপত্তা দেয়ালসহ পাম্প হাউস নির্মাণের, একটি ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানি পরিশোধনাগার, ১২ কি.মি. সঞ্চালন পাইপলাইন, ৬ কিলোমিটার বিভিন্ন ব্যাসের পাইপলাইন স্থাপন, ৩ কি.মি. আরসিসি ড্রেন নির্মাণ, ৬১টি জিএফএস নির্মাণ, ১০টি টাইপ-বি পাবলিক টয়লেট স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম
প্রস্তাবিত প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছেÑ ছয়টি পরীক্ষামূলক নলকূপ ও তিনটি উৎপাদক নলকূপ স্থাপন; পাম্প, ট্রান্সফরমার, রিটেইনিং ওয়াল ও নিরাপত্তা দেয়ালসহ তিনটি পাম্প হাউস নির্মাণ; একটি ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানি পরিশোধনাগার, পাম্প, ট্রান্সফরমার, রিটেইনিং ওয়াল ও নিরাপত্তা দেয়ালসহ চারটি বুস্টার পাম্প হাউস নির্মাণ; ১২ কি.মি. দীর্ঘ সঞ্চালন পাইপলাইন ও ছয় কি.মি. দীর্ঘ বিভিন্ন ব্যাসের পাইপলাইন স্থাপন; ৩৫০টি গৃহ সংযোগ; তিন কি.মি. দীর্ঘ আরসিসি ড্রেন নির্মাণ; ৬১টি জিএফএস নির্মাণ; ১০টি পাবলিক টয়লেট (টাইপ-বি) নির্মাণ; ২০টি বিদ্যমান জিএফএস মেরামত ও সংস্কার।
ব্যয় বিভাজনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন
পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পটির বেশ কয়েকটি বিষয়ে ব্যয় বিভাজনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এর মধ্যে রয়েছে ৬১টি জিএফএস নির্মাণ, ১০টি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ, ৬টি উৎপাদক নলকূপ স্থাপন, ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ সঞ্চালন পাইপলাইন ও বিভিন্ন বিতরণ পাইপলাইনের ব্যয় বিভাজন। প্রকল্পটির মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে।
প্রকল্পটির বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) এমদাদ উল্লাহ মিয়ান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘সাজেক বিখ্যাত পর্যটন এলাকা। এখানে ভ্রমণের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এই এলাকা অনেক উঁচু হওয়ায় এখানে পানির সংকট খুবই বেশি। তাই এলাকার স্থানীয় জনগণ এবং পর্যটকদের পানি ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটির প্রস্তাবে উল্লিখিত বেশ কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে পিইসি সভায় জানতে চাওয়া হবে।’