× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বঙ্গবন্ধু টানেল

তিন মিনিটেই টানেল পার, অভিভূত গাড়িচালক

এস এম রানা, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৬:৪৪ পিএম

চট্টগ্রামের কর্ণফুলি রদীর তলদেশে নির্মিত টানেলের ভিতরের দৃশ্য। প্রবা ফটো

চট্টগ্রামের কর্ণফুলি রদীর তলদেশে নির্মিত টানেলের ভিতরের দৃশ্য। প্রবা ফটো

মঙ্গলবার দুপুর। সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত এক প্রস্তুতি সভায় সেতু সচিব মো. মনজুর হোসেন ঘোষণা দিলেন, ‘২৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন ২৯ অক্টোবর থেকে গাড়ি চলবে টানেল দিয়ে।’ 

কেমন হবে বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নের দক্ষিণ এশিয়ার এই প্রথম টানেল? কর্ণফুলী নদীর তলদেশ পাড়ি দিতে কত সময় লাগবে? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ মানুষের মনে। তবে এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত। স্বপ্নের টানেলটির নির্মাণ কার্যক্রমের শেষ পর্ব সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন সেতু সচিব মো. মনজুর হোসেন। এ সময় প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশিদসহ তার সঙ্গীরা টানেলের পতেঙ্গা প্রান্ত দিয়ে প্রবেশ করে আনোয়ারা প্রান্তে যান। পরে একই পথে ফিরে আসেন নগরীতে।

সেতু সচিবের গাড়িবহরের চালকদের একজন হাবিবুর রহমান (ছদ্মনাম, সংবাদমাধ্যমে কথা বলতে নিষেধ থাকায় তার চাকরির নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশ করা হলো না)। প্রতিদিনের বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘প্রধানমন্ত্রী এই টানেল পাড়ি দেওয়ার আগে পরীক্ষামূলকভাবে গাড়ি চালানোর সুযোগ পেলেন। আপনার অনুভূতি কী?’ 

প্রশ্ন শুনেই চালক হাবিবুর রহমানের মুখের হাসি আরও কয়েক ইঞ্চি প্রশস্ত হয়ে ওঠে। তারপর বলতে থাকেন, ‘সেতু সচিব স্যারের গাড়ি ছিল আগে। আমাদের গাড়ি ছিল পেছনে। আগে বলি আনোয়ারা প্রান্তের কথা। সেখানে টানেল থেকে বেরিয়ে ওয়াইজংশন যাওয়ার জন্য চার লেনের সড়ক নির্মিত হয়েছে। দুই ধারে বসানো হয়েছে সড়কবাতি। সড়কের মাঝখানে আইল্যান্ড। মসৃণ সড়ক। সূর্যের আলোয় যেন চিকচিক করছে। কিছুদূর যেতেই আমার মনে হলো, এই বুঝি ইউরোপ চলে এসেছি।’ একটু থামলেন হাবিবুর। তারপর আবারও বলতে লাগলেন, ‘আমি অবশ্য ইউরোপ যাইনি। তবে টিভি-সিনেমায় দেখেছি। তা থেকেই গাড়ি চালানোর সময় মনে হলো, মনে হয় ইউরোপ চলে এসেছি।’ 

উচ্ছ্বসিত হাবিবুর রহমান রসিয়ে রসিয়ে বলতে থাকেন, ‘টানেলে প্রবেশের সড়ক দেখে ইউরোপ মনে করেছিলাম। তারপর দেখি সারকারখানার পাশেই ফ্লাইওভার দিয়ে যাচ্ছি। আর সামনেই বঙ্গোপসাগর! ডানে কর্ণফুলীর মোহনা। এরপর বাঁক নিলাম ডানে। দেখি টানেলের প্রবেশমুখের আগেই টোল প্লাজা। পাশে কয়েকটি নতুন ভবন। এরপর এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। আমরা প্রবেশ করব মূল টানেলে। প্রবেশমুখে সড়কের পাশে সাইনবোর্ডে রয়েছে সর্বোচ্চ গতিবেগ ৬০ কিমি রাখার নির্দেশনা। সড়কের ওপর তোরণের মতো কিছু একটা। সবুজ বাতি আমাদের প্রবেশের সংকেত দিচ্ছে। আমি গাড়ি নিয়ে টানেলে ঢুকলাম। মূল টানেলের প্রবেশমুখে বাংলা ও ইংরেজিতে দুই লাইনে লেখা আছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’। 

হাবিবুর বললেন, ‘গাড়ি নিয়ে টানেলে ঢুকলাম, ঘড়িতে তখন ১টা ১৩ মিনিট। প্রবেশমুখেই দেখি একটি বড় ধরনের গেট। সম্ভবত প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় যেন পানি প্রবেশ করতে না পারে সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। গেটটি বন্ধ করে দিলে পানি টানেলে প্রবেশ করতে পারবে না। কিন্তু আমি এসব বিষয়ে কাউকে প্রশ্ন করতে পারলাম না। স্যাররা নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলেন। আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গামুখী লেন ধরে আমরা এগিয়ে গেলাম। দুই লেনেই সড়কের মাঝখানে একটি রেখা টেনে দেওয়া হয়েছে। দুই সারিতে নির্দিষ্ট দূরত্বে বাতি লাগানো হয়েছে। পাশের দেয়ালেও একাধিক সাইন আছে। একইভাবে টানেলের ওপর নির্ধারিত দূরত্বে আছে বাতাসের জন্য লাগানো কিছু মেশিন (অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা)।’ 

টানেলে প্রবেশের পর যেন হাবিবুর রহমান কল্পনা রাজ্যে হারালেন, বললেন, ‘আমি ভাবছি, ওপরে এক নদীভর্তি পানি, পাশেই বঙ্গোপসাগরের মোহনা। সেখানে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে বড় বড় কন্টেইনারবাহী জাহাজ যাওয়া-আসা করছে। অথচ সেই নদীর তলদেশে আমি সাঁইসাঁই করে ৬০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চালাচ্ছি! কী বিস্ময়কর ঘটনা! কিছুটা সামনে যাওয়ার পর মনে হলো, ডানপাশে সুড়ঙ্গের মতো কিছু একটা আছে। সম্ভবত, দুই লেনের মধ্যে যাতায়াত ব্যবস্থাও আছে। আমি তো আর গাড়ি থেকে নামতে পারিনি। তাই ভালোভাবে পরখ করে দেখা হয়নি। দেখতে দেখতেই টানেল পাড়ি দিয়ে ফেললাম। গাড়ি চলে এলো পতেঙ্গা প্রান্তে। দেখি সামনে আবারও হলুদ বর্ণের শেড। সূর্যের আলো দেখে বুঝতে পারি, সুড়ঙ্গপথ ছেড়ে বেরিয়ে আসতে হবে এখনই। আবার ঘড়ির কাঁটা দেখি। ১টা ১৬ মিনিট। অর্থাৎ মাত্র ৩ মিনিটেই পাড়ি দিই কর্ণফুলী নদীর তলদেশের ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার পথ। টানেলে টিউবের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। ভেতরে ব্যাস ১০ দশমিক ৮০ মিটার।’ 

মাত্র তিন মিনিটে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ পাড়ি দেওয়ায় উচ্ছ্বসিত চালক হাবিবুর রহমান। শুধু তিনি নন, পুরো বাঙালি জাতির মধ্যেই এই উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়বে যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই টানেল উদ্বোধনের পর সাধারণ মানুষও তিন মিনিটে পাড়ি দেবেন এই টানেল।

বাঙালির স্বপ্নপূরণের এই টানেলটির নির্মাণকাজের শুরু ২০১৯ সালে। নির্মাণকাজ শেষে উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা টানেলটিতে দুটি টিউব বা সুড়ঙ্গ রয়েছে। একটি চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারামুখী; অন্যটি আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গামুখী। টানেল নির্মাণ প্রকল্পে সরকার অনুমোদন দিয়েছিল ২০১৫ সালের নভেম্বরে। শুরুতে ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হলেও শেষ পর্যন্ত এটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা। টানেলটি নির্মাণ করেছে চীনের চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড। কথা ছিল ২০২০ সালের মধ্যে এর নির্মাণকাজ শেষ হবে। কিন্তু পরে সময় বাড়িয়ে ২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকে এসে এর কাজ শেষ হয়। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা