× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ত্রিমুখী বিরোধে গুমোট চবি

আবু রায়হান তানিন, চট্টগ্রাম ও মো. মাসুদ, চবি

প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:৫৭ পিএম

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি : সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি : সংগৃহীত

আবাসন সংকট ও টিউশনসহ নানা কারণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকে শহরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হয়। তাদের এই যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম শাটল ট্রেন। কিন্তু এই সুবিধা পর্যাপ্ত না হওয়ায় নানা সময় বিভিন্ন ধরনের হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সেবা পেতেও ব্যর্থ হন তারা। নানা কারণে দ্বন্দ্ব লেগেই থাকে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কোনো সংকট সমাধানেই আন্তরিক নয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সব মিলে সাধারণ শিক্ষার্থী-বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন- ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যকার নানামুখী দ্বন্দ্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ধরনের অসহযোগিতামূলক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।

শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দাবি, ছাত্রলীগ নেতাদের চাওয়া-পাওয়ায় গরমিল হলেই শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ উস্কে দিয়ে অস্থিরতার তৈরি করে ছাত্রলীগ। সর্বশেষ উপাচার্যের বাসভবন ও পরিবহন দপ্তরে ভাঙচুরের ঘটনায় ছাত্রলীগের ১৪ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এসব মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ৯০০ জনকে। ফলে ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যেও আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে এই দুই মামলা। 

তবে ছাত্রলীগ নেতারা বলছে, শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ নিয়ে কথা বলার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রশাসনের বিরাগভাজন হচ্ছেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনের সমন্বয়হীনতা ও অনিয়ম আড়াল করতে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময়ে সংগঠনটির মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি করে। 

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী রয়েছেন ২৭ হাজার ৫৫০ জন। ১২টি হল ও ১ হোস্টেল মিলিয়ে মোট পাঁচ হাজার ৩৩৬টি আসন রয়েছে। সে হিসাবে শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে ২০ শতাংশেরও কম। এসব হলে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আসন বরাদ্দ পান না শিক্ষার্থীরা। 

ইতিহাস বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী অন্বেষ চাকমা বলেন, ‘এমনিতেই আসন কম। এর মধ্যে গত দুই বছর ধরে নিয়মতান্ত্রিকভাবে হলে আসন বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না শিক্ষার্থীদের। ফলে শিক্ষার্থীদের উচ্চমূল্যে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে হচ্ছে। যাদের আর্থিক সংগতি কম তাদের শহরে টিউশন করাতে হচ্ছে। এই যাতায়াতে যারা শাটল ট্রেন ব্যবহার করেনÑ প্রয়োজনের তুলনায় শাটল ট্রেন কম হওয়ায় বগির ভেতর গাদাগাদি করে আমাদের যাতায়াত করতে হয়। অনেক সময় বাধ্য হয়ে ট্রেনের ছাদেও যাতায়াত হয়। এতে অনেক রকমের দুর্ঘটনা ঘটে।’

গত বছর ১৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় শাটল ট্রেনে এক ছাত্রীকে দুই বহিরাগত ধর্ষণের চেষ্টা করে। এর দুই মাস পর একদিন সকালে আরও এক শিক্ষার্থী ধর্ষণচেষ্টার শিকার হন। সেদিন ধর্ষণচেষ্টকারীকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। এ ছাড়া হরহামেশাই চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে গত এক বছরে আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। গত তিন মাসে প্রায় ১৫ শিক্ষার্থীর টাকা ও ব্যাগসহ গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র চুরি হয়েছে ট্রেন থেকে।

যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘হলের ক্যান্টিনের খাবার খুবই নিম্নমানের। স্বাদ-গন্ধহীন খাবার পরিবেশিত হয়, তা খেয়েই দিন পার করতে হচ্ছে আমাদের। এমনকি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা হয় না। এসব মানহীন ও পুষ্টিহীন খাবার খেয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত সেদিক নজর দেওয়া।’

চবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল হক বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো প্রশাসন জানে না এমন নয়। কিন্তু প্রশাসনের মনোযোগ বড় প্রজেক্ট, নিয়োগ ও টেন্ডারে। শিক্ষার্থীদের জন্য যে বরাদ্দ তা দিয়ে যদি অতিরিক্ত কর্মচারী ও শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয় তাহলে শিক্ষার্থীদের সমস্যা কীভাবে সমাধান হবে? শিক্ষার্থীদের মৌলিক চাহিদা প্রশাসন পূরণ করতে পারেনি।’ 

শিক্ষার্থীদের নানা ক্ষোভ থেকে বিভিন্ন ইস্যুতে প্রায়ই সংঘাতের সৃষ্টি হয় ক্যাম্পাসে। সর্বশেষ ৭ সেপ্টেম্বর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেনের ছাদে থাকা ১৬ শিক্ষার্থী গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে আহত হন। এই ঘটনাকে পুঁজি করে শিক্ষার্থীরা ওই রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক অবরোধ করে উপাচার্যের বাসভবন, পুলিশ ফাঁড়ি ও ৪৭টি গাড়ি ভাঙচুর করে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠন, মোটরসাইকেল চুরি, ভাড়া নৈরাজ্য, চারুকলা স্থানান্তরসহ বিভিন্ন ঘটনায় অন্তত ১০ বার বিভিন্ন ফটকে তালা দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় অনেকটা অচল হয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষক বাস চলাচল বন্ধ থাকে। বিঘ্ন ঘটে ক্লাস-পরীক্ষায়। তবে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির চিত্র এতে বদলায় না। ২৬ আগস্ট আলাওল হলের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ তুলে প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে হল ফটকে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করে শাখা ছাত্রলীগের বিজয় গ্রুপের অনুসারী। তবে প্রাধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ ফরিদুল আলম জানিয়েছেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিসিপ্লিনারি কমিটির সদস্য। কয়েকজন শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না করায় এই আন্দোলন হয়েছে। 

সর্বশেষ ঘটনাতেও একই দাবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। ওই ঘটনার দুই দিন পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হাটহাজারী থানায় দুটি মামলা করেছে। এজাহারে উঠে এসেছে, চাঁদা না পেয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে নারকীয় তাণ্ডব চালানো হয়েছে। দুই মামলায় মোট ১৪ আসামির নাম উল্লেখ করা হয়। নিশ্চিত হওয়া গেছে, এজাহারনামীয় আসামিরা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। তাদের মধ্যে দুজন সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা। সাধারণ শিক্ষার্থী ও প্রশাসন বলছে, চাওয়া-পাওয়ার গরমিল হলে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ উস্কে দিয়ে এমন পরিস্থিতি তৈরি করে ছাত্রলীগ নেতারা।

তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু দাবি করেন, ‘শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণার কারণেই ছাত্রলীগকে টার্গেট করে মামলা করা হয়েছে। প্রশাসনের ব্যর্থতা, সমন্বয়হীনতা ও অন্তঃকোন্দল আছে। সেসব চাপা দিতেই প্রশাসন ছাত্রলীগের ওপর দায় চাপাচ্ছে।’

উপউপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের সঙ্গে প্রশাসনের কোনো দ্বন্দ্ব নেই। আসামিদের নামের তালিকা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা তৈরি করেছে এই বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না। নিরপরাধ কেউ যদি মামলার আসামি হয় প্রক্টরিয়াল বডি সেটা খতিয়ে দেখবে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা