মানিকগঞ্জ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:৪৭ পিএম
মানিকগঞ্জ পৌরসভার বেউথা-আন্ধারমানিক সড়কের অধিকাংশই খানাখন্দে ভরা। প্রবা ফটো
মানিকগঞ্জ পৌরসভার বেউথা-আন্ধারমানিক সড়কটির বেহাল দশা। প্রায় দুই কিলোমিটার সড়কের অধিকাংশই খানাখন্দ আর গর্তে ভরা। সামান্য বৃষ্টি হলেই গর্তে পানি জমে যায়। প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে ছোটবড় নানা দুর্ঘটনা। এতে করে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে পথচারী, যাত্রীসাধারণসহ পরিবহন চালকদের। সড়কটি সংস্কারে পৌর কর্তৃপক্ষ লাখ লাখ টাকা ব্যয় করলেও কোনো কাজে আসেনি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তারা দ্রুত টেকসই সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বেউথা-আন্ধারমানিক সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হরিরামপুর, ঘিওর, শিবালয় উপজেলার হাজারো মানুষের যাতায়াত। এই সড়ক ব্যবহার করে পণ্য ও মালবাহী ট্রাক সিংগাইর-হেমায়েতপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। প্রতিদিন মুন্নু ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কানিজ ফাতেমা স্কুল, আকিজ ফাউন্ডেশন স্কুল, মানিকগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, এস কে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। সম্প্রতি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে রাস্তার মেরামতের কাজ করা হলেও তা কোনো কাজে আসেনি।
ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় জনিয়ে স্থানীয়রা বলেন, বেহাল অবস্থা দেখে মনে হয় এ সড়কের কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার ছোটবড় যানবাহন চলাচল করে। খানাখন্দের কারণে প্রতিনিয়তই দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। উন্নয়নে বহু বরাদ্দ থাকলেও এ সড়ক নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই।
কথা হয় একাধিক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। তারা বলে, স্কুল বাসে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই ভাঙাচোরা সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। সামান্য একটু বৃষ্টি হলে দুর্ভোগের অন্ত থাকে না। বড় বড় গর্তে বাসের চাকা পড়ে উল্টে যাওয়ার আতঙ্কে থাকতে হয়। যানবাহনের ধীরগতির কারণে যানজট লেগে থাকে। এতে সঠিক সময়ে ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যায় না।
সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক সেলিম হোসেন বলেন, ‘মানিকগঞ্জ-ঝিটকা সড়কে প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার যাতায়াত করি। এ অংশের দেড় কিলোমিটার সড়কের পুরোটাই খানাখন্দ আর গর্তে ভরা। মাঝেমধ্যে গর্তে গাড়ির চাকা পড়ে উল্টে যায়। আর বৃষ্টির দিনে রাস্তায় হাঁটুপানি জমে, তখন আরও সমস্যা হয় গাড়ি চালাতে। মাসে মাসেই গাড়ি সার্ভিসিংয়ের জন্য অনেক টাকা খরচ করতে হয়।’
ট্রাকচালক মহিদুর রহমান বলেন, ‘এই সড়ক দিয়ে মালবোঝাই ট্রাক চালানো দায়। সড়কে বড় বড় গর্ত থাকায় স্বাভাবিকভাবে গাড়ি চালানো যায় না। ১০ মিনিটের জায়গায় ২০ মিনিটের বেশি লাগে। এ ছাড়া কোনো যানবাহন গর্তে পড়ে আটকে গেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। তখন আর দুর্ভোগের শেষ থাকে না।’
মানিকগঞ্জ পৌরসভার মেয়র রমজান আলী বিদেশে অবস্থান করায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবু মো. নাহিদ বলেন, ‘বেউথা-আন্ধারমানিক সড়কে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন যানবাহনের পাশাপাশি মালবাহী ট্রাক, ১০ চাকার বালুবাহী ড্রামট্রাক চলাচল করে। তা ছাড়া সড়কের বিভিন্ন স্থানে দুই পাশ উঁচু থাকায় পানি জমে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বছরখানেক আগে ভাঙা জায়গায় ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ইট-বালু দিয়ে সংস্কার করা হয়। কয়েক মাস পরে আবার নষ্ট হয়ে যায়। এখন সড়কটি সংস্কারে এলজিইডি দায়িত্ব নিয়েছে।’
মানিকগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুল হক বলেন, ‘দেড় কিলোমিটার সড়কটির কোনো অভিভাবক না থাকায় নতুন করে নির্মাণের জন্য এগিয়ে এসেছে এলজিইডি। পৌর কর্তৃপক্ষ এই সড়কটি রক্ষণাবেক্ষণে ব্যর্থ। শিগগিরই সড়কটি সংস্কারের কাজ শুরু হবে।’