রাশড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়
টাঙ্গাইল প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:২৯ পিএম
কচুরিপানায় ভাসছে বাসাইলের রাশড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়। সম্প্রতি তোলা। প্রবা ফটো
চারদিক পানিতে থইথই। পানি ঢেকে আছে সবুজ কচুরিপনায়। এরই মাঝে ভাসছে বিদ্যালয় ভবন। বর্ষা শুরু হলে প্রতিবছরই এমন দৃশ্য দেখা যায় টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার রাশড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এতে ব্যাহত হয় বিদ্যালয়ের পাঠদান। এবারও ব্যতিক্রম নয়, বর্ষার শুরুতেই মাঠে পানি। দুই সপ্তাহ আগে টানা বৃষ্টিতে পানি বেড়ে তলিয়ে যায় মেঝে। এরপর থেকে পাঠদান বন্ধ। প্রতিষ্ঠার পর প্রতিবছর বর্ষায় এমন চিত্র দেখা যায় বলে জানান স্থানীয় লোকজন। নিচু জমি ভরাট না করে ভবন নির্মাণ করায় এমন দুর্ভোগ।
শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় লোকজন জানান, বিদ্যালয়ের মেঝে থেকে পানি নামতে শুরু করলেও মাঠসহ চারপাশে কচুরিপানা থাকায় শ্রেণি কার্যক্রম চালাতে পারছেন না শিক্ষকরা। বিদ্যালয়টি নিম্নাঞ্চলে থাকায় তেমন কোনো রাস্তাঘাটও নেই। ফলে বর্ষার শুরুতেই শিক্ষক ও কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নৌকা নিয়ে বিদ্যালয়ে আসতে হয়। এখন কচুরিপানার চাপে নৌকা নিয়ে আসাও সম্ভব হচ্ছে না। এমন দুরবস্থার সমাধান খুঁজছে শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ স্থানীয় লোকজন।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ৭৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১১টি মাদ্রাসা এবং ৩টি কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে চার-পাঁচটি বিদ্যালয়ে পানি উঠেছে। আরও একটি বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী তানজিলা আক্তার তন্নি বলে, ‘বর্ষা হলে বিদ্যালয়ের চারপাশে পানি উঠে যায়। আমরা পড়াশোনা করতে পারি না। এ ছাড়া কচুরিপানায় ভরে গেছে চারপাশ। তাই নৌকা নিয়ে আসতেও কষ্ট হয়। অন্যান্য স্কুল খোলা থাকলেও আমাদেরটা বন্ধ। পড়াশোনা থেকে পিছিয়ে যাচ্ছি।’
আরেক শিক্ষার্থী প্রসেনজিৎ সরকার বলে, ‘কষ্ট করে আমাদের ক্লাসে আসতে হয়। চারপাশে পানি আর পানায় ভরে গেছে। আমরা এ সমস্যার সমাধান চাই, সুন্দর পরিবেশে পড়াশোনা করতে চাই।’
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি আব্দুল কাদের মিয়া বলেন, দুই বছর ধরে শুনছি বিদ্যালয়টির নতুন ভবন হবে। এখনও নতুন ভবন তৈরি হয়নি। এলাকাটি নিম্নাঞ্চল হওয়াতে বর্ষাকাল এলেই মাঠে ও মেঝেতে পানি উঠে যায়। তখন শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ থাকে। এখন বিদ্যালয়ের মেঝে থেকে পানি নামতে শুরু করলেও চারপাশে কচুরিপানা রয়ে গেছে।
প্রধান শিক্ষক হোসনে আরা আক্তার পপি বলেন, ‘২০১৮ সালে এখানে যোগদান করি। যোগদানের পর থেকেই চেষ্টা করছি নতুন ভবন ও আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের। নিচে খোলা থাকবে আর ওপরে পাঠদান চলবে। গত বছরও আবেদন করছি। ২০২১ সালে যখন বড় বন্যা হয় তখনও ছবিসহ আবেদন করছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ভবন নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এ বছরও ছবি পাঠিয়েছি, আশা করি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে।’
তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয়ের চারপাশে কচুরিপানা রয়েছে। বিদ্যালয়ের মেঝেতে এক ফুট পানি ছিল। দ্বিতীয় সাময়িক মূল্যায়ন পরীক্ষার তিনটি বিষয় বিদ্যালয়ে নিতে পারলেও বাকি তিনটি বেসরকারি একটি কিন্ডারগার্টেনে নিতে হয়েছে। পানি মেঝে থেকে নেমে গেলেও বিদ্যালয়ের চারপাশে কচুরিপানা থাকায় সেখানে যেতে কষ্ট হয়।
বাসাইল উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আনজুম আরা বেগম বীথি বলেন, ‘এখানে নতুন যোগদান করেছি। বিদ্যালয়টি সম্পর্কে জানতে পেরে পরিদর্শনও করেছি। বিদ্যালয়টি নিম্নাঞ্চলে হওয়ায় প্রতিবছরই মাঠে পানি ওঠে। উপজেলার কল্যাণপুর এলাকার আফাজ উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েরও একই অবস্থা। পানির কারণে সেখানেও পাঠদান বন্ধ রয়েছে। বর্ষাকালে নিকস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে এসব নিম্নাঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোর শ্রেণি কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনাও রয়েছে।’