মিঠাপুকুরের ভাংনী মাদ্রাসা
রংপুর অফিস
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:২১ পিএম
রংপুর মিঠাপুকুর উপজেলার ভাংনী আহমাদিয়া ফাজিল মাদ্রাসা। ছবি : সংগৃহীত
রংপুর মিঠাপুকুর উপজেলার ভাংনী আহমাদিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু ছালেহ মোহাম্মদ জাকারিয়ার বিরুদ্ধে ১২ একর জমি বন্ধক রেখে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া নিলাম ছাড়া প্রতিষ্ঠানের গাছ বিক্রি করে অর্থ পকেটস্থ করা, নিয়োগ বাণিজ্য, এমপিও নীতিমালা ভঙ্গ করা, রেজল্যুশন জালিয়াতি, শিক্ষকদের বেতন বন্ধ করা, নিয়মবহির্ভূতভাবে টাকা খরচ করা, ম্যানেজিং কমিটিতে আস্থাভাজনকে সভাপতি ও মৃত ব্যক্তিকে সদস্য করাসহ নানা অভিযোগ উঠেছে।
দুর্নীতির বিষয়ে দাতা পরিবারের সদস্য ও শিক্ষকরা ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, দুদক, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, রংপুর জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগ দিয়েছে। তবে অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাকারিয়া।
অনুসন্ধান ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে জুনিয়র শিক্ষক জাকারিয়া প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির ৯ জনের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ভুয়া-কাগজপত্র দাখিল করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ দখল করেন। পরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনৈতিক আর্থিক সুবিধা লাভের জন্য ১০ জন শিক্ষকের বেতন বন্ধ করে দেন। জালিয়াতি ও দুর্নীতির মামলায় তিনি জেলও খাটেন। বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।
২০২০ সালের ১৯ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক একেএম শাহীন আখতারকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়। জাকারিয়া কৌশলে ২০২২ সালের ১৮ জুলাই তাকে সরিয়ে পুনরায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন। পরে মাদ্রাসার প্রায় ১২ একর জমি ২৫-৩০ লাখ টাকায় বন্ধক রাখেন। ৬ লাখ টাকার গাছ বিক্রি করে কমিটির কিছু সদস্যকে নিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেন। অপকর্ম ঢাকতে পছন্দের ব্যক্তিদের ম্যানেজিং কমিটিতে নিয়ে আসেন। খলিলুর রহমান নামের একজন অভিভাবক না হলেও তাকে সদস্য করেন। কো-অপ্ট সদস্য হিসেবে তিন বছর পূর্বে মৃত্যুবরণ করা ডা. মানস কুমারকে নিয়েছেন। এ ছাড়া নীতিমালা ভঙ্গ করে তার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি ও পার্শ্ববর্তী বেতগাড়া স্কুলের জুনিয়র শিক্ষক ফরিদুজ্জামানকে সভাপতি করেন।
দাতা পরিবারের সদস্য নুরুল হুদা বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাদ্রাসার জমি বন্ধক রেখে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রক্ষায় সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছি। এরপরও বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পদে জনবল নিয়োগ করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।’
শিক্ষক আকবর আলী বলেন, ‘দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে জাকারিয়া আমার অবসর ও কল্যাণ সুবিধার কাগজপত্র আটকে রেখেছেন। এর আগে ১০ মাসের বেতনভাতা বন্ধ রেখেছেন, এখনও উত্তোলন করতে পারিনি। বর্তমানে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আবু ছালেহ মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, ‘একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। আগের অধ্যক্ষ জমি বন্ধক দিয়েছিল। দায়িত্ব পাওয়ার পর কিছু জমি ছাড়িয়েছি। এ ছাড়া টেন্ডারের মাধ্যমে গাছ বিক্রি হয়েছে। শিক্ষকদের বেতন বন্ধ রাখার বিষয়টি পুরো মিথ্যা। বেতন মঞ্জুরির মেয়াদ শেষ হওয়ায় এক মাসের বেতন ছাড় করা সম্ভব হয়নি। অপপ্রচারের বিষয়টি সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়ে দেওয়া হবে।’