বরিশাল অফিস
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:২৮ পিএম
রাজনৈতিক দলের ব্যানার-ফেস্টুনে ঢাকা পড়েছে বরিশালের ফজলুল হক অ্যাভিনিউয়ের বিভাগীয় জাদুঘর। প্রবা ফটো
বরিশাল নগরীর ব্যস্ততম সড়ক ফজলুল হক অ্যাভিনিউ। সড়কটির চারপাশে রয়েছে জেলা ও বিভাগীয় শহরের প্রধান কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনা। সড়ক ধরে চলাচলের সময় নগর ভবনের বিপরীতে লাল রঙের স্থাপনাটি নিয়ে যে-কারও ধারণা হতে পারে, এটি কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যালয় অথবা কোনো জনসভাস্থলের আশপাশ। মূলত এটি বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘর।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী কয়েকটি সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের ছবি সংবলিত ব্যানার ও বিলবোর্ডে ঢাকা পড়েছে জাদুঘরটি। এমনকি জাদুঘরের প্রধান ফটকের ওপর জাদুঘরের পূর্ণাঙ্গ নামসহ স্থাপনের সাল-তারিখ ইত্যাদি তথ্যের ওপরও লটকানো হয়েছে ব্যানার ও বিলবোর্ড। ফলে অপরিচিত কেউ জাদুঘরে এলে প্রবেশদ্বার খুঁজে বের করতে কষ্ট হবে।
স্থানীয়রা জানায়, দুইশ বছরের বেশি পুরোনো বরিশালের কালেক্টরিয়েট ভবনটিকে ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল জাদুঘর হিসেবে রূপান্তর করা হয়। প্রত্নতত্ত্ব ভবনটি অবিকল নকশায় রেখে ওই বছরের ৮ মার্চ জাদুঘর প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। ২০০৫ সালে জাদুঘর প্রকল্পের সংস্কার কাজ শুরু হয়। ২০০৭ সালে সংস্কারকাজ শেষ হলে ২০১৫ সালের ৮ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে জাদুঘরটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
কিন্তু ভবনটি জাদুঘরে রূপান্তরের আগে থেকেই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ব্যানার-বিলবোর্ডের আড়ালে চলে যায়। ফলে অপরিচিত মানুষের কাছে জাদুঘরটি অপরিচিতই থেকে যাচ্ছে।
সম্প্রতি বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরে মনোনয়নবঞ্চিত সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারীরা তাকে সংসদ সদস্য দেখার দাবি জানিয়ে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নামে জাদুঘরের সামনে বিশালাকৃতির বিলবোর্ড টানিয়েছে। এতে জাদুঘরের প্রধান ফটকের সাইনবোর্ডসহ তিনশ মিটারের বেশি লম্বা জাদুঘর ভবনটি আড়ালে পড়ে গেছে। কয়েক মাস ধরে বিলবোর্ডগুলো টানানো থাকলেও অপসারণের কোনো উদ্যোগ নেই।
চারুকলা বরিশালের সাবেক পরিচালক সুশান্ত ঘোষ বলেন, রাজনৈতিক প্রচারের জন্য ব্যানার-বিলবোর্ড ঝুলানো রাজনৈতিক চর্চার একটি অংশ। তবে রাজনৈতিক নেতাদের দেখতে হবে তাদের ব্যানার-বিলবোর্ডের কারণে সরকারি কিংবা দর্শনীয় কোনো স্থাপনা ঢেকে না যায়। জ্যেষ্ঠ নেতাদের নৈতিক দায়িত্ব দর্শনীয় স্থাপনাগুলোর সামনে ব্যানার-বিলবোর্ড স্থাপনে বারণ করা।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলা কমিটির সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের ব্যানার-বিলবোর্ডের কারণে জাদুঘরটি অস্তিত্ব সংকটের মুখে। সিটি করপোরেশনের নিজস্ব উদ্যোগে জাদুঘরের সামনে থেকে এসব বিলবোর্ড ও ব্যানার অপসারণ করা উচিত।
জাদুঘরের মতো একটি স্থাপনার সামনে মাসের পর মাস বিলবোর্ড-সাইনবোর্ড ঝুললেও সেগুলো অপসারণে কেন সিটি করপোরেশনের উদাসীন ভাব রয়েছে তা বোধগম্য নয়।
বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘরের সহকারী কাস্টডিও আরিফ উর রহমান বলেন, সম্প্রতি জাদুঘরটির সামনে যেভাবে বিলবোর্ড টানানো হয়েছে, এতে জাদুঘর ভবনটি বিলবোর্ডগুলোর আড়ালে পড়েছে। বিষয়টি আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।
বরিশালের জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম বলেন, সিটি এলাকায় পোস্টার, বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুনসহ সকল প্রচারসামগ্রী অপসারণের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। যেহেতু বিভাগীয় জাদুঘর সরকারি একটি প্রতিষ্ঠান তাই আমরা সেটির সামনে স্থাপিত বিলবোর্ড ও সাইনবোর্ডগুলো অপসারণের জন্য সিটি করপোরেশনকে অনুরোধ করব।
এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনে সদ্য যোগদানকারী সচিব মাহমুদা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও সিটি করপোরেশনের মুখপাত্র স্বপন কুমান দাসের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি তা রিসিভ করেননি। পরে খুদেবার্তা ও হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠানো হলে তারও কোনো উত্তর দেননি।
মেয়রের ব্যক্তিগত সহকারী-১ মোস্তাফিজুর রহমান মিলনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।