বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:১৪ এএম
আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:১৭ এএম
অভিযুক্ত ভুয়া চক্ষু চিকিৎসক মোল্লা সোয়াইব। প্রবা ফটো
এমবিবিএস ডিগ্রি নেই। নেই বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) অনুমোদনও। তারপরেও চিকিৎসক পদবি ব্যবহার করে দিচ্ছেন চক্ষু চিকিৎসা। মোল্লা সোয়াইব নামের এমনই এক ভুয়া চক্ষু চিকিৎসকের সন্ধান মিলেছে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায়।
মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ কর্পূরকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বাংলাদেশ আই ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড ফ্যাকো সেন্টার লিমিডেটের নামে ঢাকার একটি হাসপাতালের আয়োজনে চিকিৎসার নামে চক্ষু সেবা ক্যাম্প করে। ওই ক্যাম্পে চিকিৎসক না হয়েও চিকিৎসা পরামর্শ দেয় মোল্লা সোয়াইব। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ‘ত্রিশ টাকায় চক্ষু সেবা’ নামের ফাঁদ গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছেন ওই চিকিৎসকসহ একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয় চত্বরে ক্যাম্পেট একটি টেবিলে সাজিয়ে রাখা হয়েছে চক্ষু পরীক্ষার যন্ত্রপাতি। পাশেই রয়েছে বিভিন্ন ওষুধ ও চশমা। গ্রামের সহজ সরল মানুষদের চিকিৎসা দিচ্ছেন চিকিৎসক পরিচয় দেওয়া মোল্লা সোয়াইব। নয়া মাতবর নামে এক প্রবীণ রোগীকে ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন ওই চিকিৎসক। চোখে পানি পড়ার কারণে এন্টিবায়োটিকসহ কয়েক ধরনের ওষুধ লেখা রয়েছে। দেওয়া হয়েছেও চশমাও। সঙ্গে রয়েছেন দুজন সহকারী।
চিকিৎসকের কাছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমোদন দেখতে চাইলে তিনি কোনো অনুমোদনপত্র দেখাতে পারেননি। তার সঙ্গে থাকা কিছু কাগজের ফটোকপি বের করে দেন। ওইসব ফটোকপি কাগজপত্রের কোনো সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। যাতে দেখা যায়, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে ২০০৮ সালে দাখিল (এসএসসি সমান) পাস করেন। ২০১৩ সালে খুলনার বাগেরহাট মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল থেকে মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং কোর্স শেষ করেন। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টের একটি সনদের ফটোকপিও দেখা যায়। তবে ওই সনদে উল্লিখিত রেজিস্ট্রেশন নম্বর বিএমডিসির ওয়েবসাইটে খোঁজ করে পাওয়া যায়নি। সঙ্গে থাকা জাতীয় পরিচয়পত্রে দেখা যায় মোল্লা সোয়াইব তিনি বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার বারুইপাড়া গ্রামের মো. শাহজান মোল্লার ছেলে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ চক্রটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চক্ষু সেবার নামে সাধারণ মানুষকে অপচিকিৎসা দিচ্ছেন। প্রতারণা করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। এ চক্রের প্রধান হোতা উপজেলার দাশপাড়া গ্রামের মো. লিটন। যার পেশা একজন মোটরসাইকেল চালক। লিটনের ছেলে ফজলে রাব্বী বাংলাদেশ আই ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড ফ্যাকো সেন্টার লিমিটেডের অর্গানাইজার পদে চাকরি করেন। মূলত তিনিই মোল্লা সোয়াইবকে বাউফলে চক্ষু ক্যাম্প করতে নিয়ে আসেন। ক্যাম্প করার অনুমতির জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেন। ওই আবেদনে বলা হয়, একজন মহিলা এমবিবিএস চিকিৎসক চক্ষু ক্যাম্পে চিকিৎসা দিবেন। এমন আবেদনের অনুমোদনও দেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। তবে বাস্তবে কোনো এমবিবিএস চিকিৎসক চক্ষু ক্যাম্পে বসেননি। ভুয়া চিকিৎসক দিয়েই চক্ষু ক্যাম্প পরিচালনা করে প্রতারণা করছেন বাপ-ছেলে।
ভুক্তভোগীরা জানান, ক্যাম্পের আগের দিন বড় চিকিৎসক মাত্র ত্রিশ টাকায় চক্ষু চিকিৎসা দিবেন মাইকে এমন প্রচারণা চালান তারা। পরের দিন ওই ভুয়া চিকিৎসক নিয়ে ক্যাম্প বসে। চোখের মতো স্পর্শকাতর অঙ্গের চিকিৎসা দেন ওই ভুয়া চিকিৎসক। লিখেন এন্টিবায়োটিকসহ বিভিন্ন ধরনের ওষুধ। আর এসব ওষুধও বিক্রি হয় ওই ক্যাম্পে। আবার কোনো রোগীর চোখে ভয়ানক রোগ এমন ভয় দেখিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নিয়ে যান প্রতারক চক্র।
অভিযোগের বিষয়ে জানাত চাইলে মোল্লা সোয়াইব বলেন, ‘তারা অনুমোদন নিয়ে আমাকে এখানে এনেছেন। আপনারা (সাংবাদিক) চাইলে ক্যাম্প বন্ধ করে দেন। আমি চলে যাব।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সাহা বলেন, ‘চক্ষু ক্যাম্পে একজন নারী এমবিবিএস চিকিৎসক চক্ষু সেবা দিবেন মর্মে আবেদন করেন। আমি ওই নারী এমবিবিএস চিকিৎসককে সেবা দেওয়ার অনুমতি দেই। তারা যদি ওই নারী চিকিৎসক না এনে ভুয়া চিকিৎসক দিয়ে ক্যাম্প বসিয়ে থাকে তাহলে অপরাধ করেছেন। তাদের আইনের হাতে তুলে দেওয়া হবে।’