× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে নিঃস্ব ৩৫ হাজার পরিবার

রাশিদুল ইসলাম রাশেদ, কুড়িগ্রাম

প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০:৫০ এএম

আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০:৫৪ এএম

কুড়িগ্রামে রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি ও মোহনগঞ্জ ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়িসহ নানা স্থাপনা। প্রবা ফটো

কুড়িগ্রামে রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি ও মোহনগঞ্জ ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়িসহ নানা স্থাপনা। প্রবা ফটো

কুড়িগ্রামে গত ১০ বছরে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে নিঃস্ব হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার পরিবার। এসব পরিবার আশ্রয় নিয়েছে বাঁধ কিংবা অন্যের বসতভিটায়। একসময় যাদের ছিল ডুলি ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ, ফলের বাগান এবং বিঘায় বিঘায় ফসলি জমি, তারাই এখন নাম লিখিয়েছেন ভূমিহীনদের তালিকায়। সব হারিয়ে নির্বাক ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো। 

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগ জানায়, ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত কুড়িগ্রামের ৯টি উপজেলায় ১৬টি নদ-নদীর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার পরিবার। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১ হাজার ৮২১, ভূরুঙ্গামারীতে ৬০৯, নাগেশ্বরীতে ২ হাজার ৪২৬, ফুলবাড়ীতে ১৮৮, রাজারহাটে ৪৩৯, উলিপুরে ৫ হাজার ৯০৪, চিলমারীতে ৪ হাজার ৫১৯, রৌমারীতে ২ হাজার ১৮৩ ও রাজিবপুরে ৩ হাজার ৮৫ পরিবার ঘরবাড়ি-জমি হারিয়েছে।

ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের কবলে পড়েছে রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি ও মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের শত শত ঘরবাড়ি, আবাদি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় স্থাপনা। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে নদীতীরবর্তী এসব মানুষ। সরেজমিন দেখা যায়, কোদালকাটি ইউনিয়নের পাইকানটারী ও সাজাই গ্রামে ব্যাপক নদীভাঙন শুরু হয়েছে। এর মধ্যে কোদালকাটি বাজার, কয়েকটি স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ এবং বাড়িঘর ভাঙনের হুমকির সম্মুখীন। তৃতীয় দফা বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতা ব্যাপক হারে শুরু হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। হুমকিতে রয়েছে এই ইউনিয়নের সবচেয়ে পুরোনো বিদ্যাপীঠ বদরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোদালকাটি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, সাদাকাত হোসেন উচ্চবিদ্যালয়, কোদালকাটি বাজার, ইউনিয়ন পরিষদ, ইউনিয়ন ভূমি অফিসসহ প্রায় ২০টি সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা।

গত সাত মাসে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে বিলীন হয়েছে ৫ শতাধিক বাড়িঘর ও বসতভিটা। ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব এসব এলাকার শত শত পরিবার। ভূমিহীন হয়ে এখন অন্যের বসতভিটা কিংবা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন তারা। অনেকেই পৈতৃক ভিটা, জমিজমা হারিয়ে চলে গেছেন অন্যত্র। ভাঙন-কবলিত এলাকার অনেকেই যাদের যাওয়ার জায়গা নেই, তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবার-পরিজনসহ নদীর তীরেই ভিটেমাটি আঁকড়ে ধরে আছেন।

ভাঙন-কবলিত এসব এলাকার স্থানীয়রা জানান, এর আগেও বেশ কয়েকবার নদীতে ভেঙেছে তাদের বাড়িঘর ও পৈতৃক ভিটা। হারিয়েছেন ফলের বাগান, পুকুরভরা মাছ ও ফসলি জমি। অনেক কষ্টে এসব পরিবার কোনো রকমে মাথা গোঁজার ঠাঁই নিলেও এবারও পিছু নিয়েছে আগ্রাসী ব্রহ্মপুত্র। এ বছর বাড়িঘর ভেঙে যাওয়ায় আর নতুন করে বাড়িঘর তৈরি করতে পারেননি অনেকেই। গত দশ বছরে শুধু কোদালকাটি ইউনিয়নের ৩, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড পুরোপুরি চলে গেছে নদীগর্ভে। এই তিনটি ওয়ার্ডের প্রায় ৭ হাজার মানুষ সবকিছু হারিয়ে এখন ভূমিহীনের তালিকায়। একই চিত্র পার্শ্ববর্তী মোহনগঞ্জ ইউনিয়নেও। নয়ারচর, চর নেওয়াজি, শংকর মাধবপুর, হাজীপাড়া, ফকিরপাড়া ও ব্যাপারীপাড়া ভাঙনে এখন বিলীন। এ ছাড়াও ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছেÑ ইউনিয়ন পরিষদ, মোহনগঞ্জ বাজার, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসা, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ নানা স্থাপনা।

কোদালকাটি ইউনিয়নের পাইকানটারী (বল্লভপাড়া) এলাকার তারা বানু বেগম বলেন, ‘আমাগোর বাড়ি চারবার নদী ভেঙে নিয়ে গেছে। কষ্ট করে কোনো রকমে এবার বাড়ির গার্জিয়ান (অভিভাবক) ঢাকায় কামকাজ করে একটু জায়গা কিনে বাড়ি বানাইছে। কিন্তু ব্রহ্মপুত্র আবারও গত রাতে বাড়িভিটা ভেঙে নিয়ে গেছে। এখন কোথায় যাব, কোথায় থাকব ভেবে পাচ্ছি না।’ 

একই এলাকার বেগম রোকয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমাগো আমবাগান, কাঁঠালবাগান, বাঁশবাগান ছিল, ছিল ধানিজমি। এখন সব নদীতে। এর আগেও তিনবার বাড়ি নদীতে ভাইঙ্গা গেছে। গতকাল (সোমবার) রাত থাইকা আবারও বসতভিটা ভাঙা শুরু হয়েছে। এবার বাড়ি ভাইঙ্গা গেলে থাকার জায়গা নাই। কোথায় যাব, কোথায় থাকব আল্লাহই ভালো জানে।’

বেগম রোকেয়ার অসহায়ত্বের জীবনের গল্পের মধ্য দিয়ে যেন গোটা নদীভাঙনের শিকার সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়া পরিবারগুলোর আকুতি ফুটে ওঠে। বাড়ির পাশে তার দুই বিঘা অবশিষ্ট ধানিজমিটুকুও গত তিন মাস আগে নদীগর্ভে চলে গেছে। প্রমত্তা ব্রহ্মপুত্র নদ। কারও শেষ আশ্রয়, কারও ঘরে তুলবার পাকা ধানিজমি, গাছপালা এবং বাপ-দাদার কবরও রাখার সুযোগ দেয়নি। চোখের সামনে নিজের সর্বস্বান্ত হয়ে যাওয়া দেখে কান্না চেপে রাখতে পারছিল না কেউই।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেন, ‘রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি, মোহনগঞ্জ এবং রৌমারী উপজেলার কত্তিমারী এলাকায় ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। এমতাবস্থায় আপদকালীন সময়ের জন্য জিও ব্যাগ ফেলানো হচ্ছে। শুকনো মৌসুম এলে ভাঙন-কবলিত এলাকায় স্থায়ীভাবে কাজ শুরু করা হবে।’ 

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘নদীভাঙা মানুষÑ যারা একেবারে নিঃস্ব, তাদের তালিকা তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘরে বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যারা আশ্রয়ণ প্রকল্পে আসতে অনিচ্ছুক তাদের আপদকালীন সময়ের জন্য ঢেউ টিন এবং অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে।’ 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা