চুয়াডাঙ্গা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২১:২১ পিএম
আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২২:৩০ পিএম
প্রবা ফটো
চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে ছেলের ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পারায় বৃদ্ধ বাবার ভ্যান নিয়ে গেছেন বেসরকারি সংস্থা আদ-দ্বীন ওয়েল ফেয়ার সেন্টারের এক মাঠকর্মী। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন বৃদ্ধ আব্দুল করিম।
রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলার নারায়ণপুর মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। ছেলে মো. লিটনের স্ত্রীর অসুস্থতার কারণে মাত্র দুটি কিস্তি পরিশোধ না করায় সংস্থার কর্মকর্তারা এই ব্যবস্থা নিয়েছেন।
ভুক্তভোগী পরিবার জানান, গত দুই মাস আগে আদ-দ্বীন ওয়েল ফেয়ার সেন্টার থেকে ৬০ হাজার টাকা ঋণ নেন বৃদ্ধ আব্দুল করিমের ছেলে মো. লিটন। ঋণ নেওয়ার কিছুদিন পর আর্থিক অসচ্ছলতায় পড়ায় তিনি তার স্ত্রীরসহ পরিবার নিয়ে ঢাকায় চলে যায়। ঢাকায় যাওয়ার পর প্রতি সপ্তাহে ১৫০০ টাকা করে ঋণের তিনটা কিস্তির টাকা পাঠায়। গত দুমাস ধরে লিটন ও তার স্ত্রী আসমা খাতুন অসুস্থ হওয়ায় চিকিৎসা করাতে অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এ জন্য কিস্তি বাকি পড়ে। লিটনের বাবা ঋণের জামিনদার হওয়া তাকেসহ তার শ্বশুর বাড়ির লোকজনের ঋণের টাকা আদায়ের জন্য ভয়ভিতি দেখান এনজিও কর্মী ফারিহা। এতে টাকা আদায় না হওয়ায় রবিবার দুপুরে বৃদ্ধ আব্দুল করিমের ভ্যানটি আটকে রাখা হয়।
ভুক্তভোগীর মেয়ে বলেন, ‘আমার ভাই দেনায় জড়িয়ে পড়ায় আদ-দ্বীন থেকে দুই মাস আগে কিস্তি তোলে। তারা তিনটা কিস্তি দিয়েছে। ঢাকায় গিয়ে অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় তারা একটা কিস্তি দিতে পারেননি। এ জন্য ওই এনজিওকর্মী আমার বাবার ভ্যানটা কেড়ে নিয়েছেন।’
আব্দুল করিম বলেন, ‘আমার ছেলে লোন নিয়েছিল। সেখানে আমি স্বাক্ষর করেছিলাম। ওই এনজিওকর্মী একদিন আমার বাড়িতে এসে বলেন, আপনার ছেলে কিস্তি দিচ্ছে না, আমি তাকে জানাই আমার ছেলে-বৌমা অসুস্থ। তারা সামনের কিস্তি পাঠাবে তারপরও তিনি আমাকে বলেন কিস্তি না নিয়ে আমি যাবো না। তিনি আমার কথা না শুনলে আমি আমার ছেলেকে ফোন ধরিয়ে দিই, আমার ছেলেও উনার অনুরোধ করে জানান সামনের কিস্তিতে আপনার টাকা পাঠাবো। পরেরদিন মাধখালী ছেলের ভায়রা ভাইয়ের বাড়ি গিয়ে টাকার কথা জানান। তারা আমার ছেলেকে এ বিষয়ে জানালে আমার ছেলে রাগ করে বলেন, আপনি যেখানে টাকা আনতে গিয়েছেন সেখান থেকে আনেন। রবিবার দুপুরে আমি ভাড়া মেরে বাড়ি আসার সময় আমার ভ্যানটা তিনি কেড়ে নিয়ে গেছেন।
এ বিষয়ে জানতে আদ-দ্বীন ওয়েল ফেয়ার সেন্টারের মাঠকর্মী ফারিহাকে অফিসে পাওয়া যায়নি। পরে মোবাইলে কল দিলেও নাম্বারটি বন্ধ থাকায় বক্তব্য জানা যায়নি।
আদ-দ্বীন ওয়েল ফেয়ার সেন্টারের জীবননগর শাখার ম্যানেজার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, গতকাল অফিস থেকে বের হওয়ার সময় প্যাখিভ্যান চালকের নাতি এসে বিষয়টি জানিয়েছিল। আমি মাঠকর্মীর সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি শুনে তাকে ভ্যান নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলাম। তারপর আর আসেননি।’
গ্রাহকের বাবার ভ্যান নিয়ে আসা অফিশিয়াল কোনো নিয়মে আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা অফিশিয়াল কোনো নিয়ম না। তাছাড়া তারা পরবর্তীতে যোগাযোগ না করায় ভ্যানটি ফেরত দেওয়া সম্ভব হয়নি।’
জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জাবীদ হাসান বলেন, ‘এ বিষয় আমার জানা নেই, কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। ভুক্তভোগীর অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।’
জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসিনা মমতাজ বলেন, ‘রবিবার রাতে একজন আমাকে এ বিষয়ে জানিয়েছে। আমি তাদেরকে আসতে বলেছি। তারা আসেনি; আসলে আমি নিজে সময় দিব, যাতে তারা তার ভ্যানটি ফেরত দেয়।