নওয়াপাড়া রেলস্টেশন
রফিকুল আলম, অভয়নগর (যশোর)
প্রকাশ : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:৩৩ এএম
আপডেট : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:৩৬ এএম
নওয়াপাড়া রেলস্টেশন। সংগৃহীত ফটো
প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের ভিড়। ট্রেনের অপেক্ষায় সবাই। কেউ ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে আছেন প্ল্যাটফর্মের নোংরা মেঝেতে আবার কেউ বসে আছেন বসার জায়গায়। তীব্র তাপে ঘাম ঝরছে সবার শরীর থেকে। বসার জায়গা থাকলেও পরিবেশ খুব নোংরা। ময়লা আবর্জনার স্তূপ পড়ে আছে।
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির যাত্রীদের জন্য দুটি কক্ষ থাকলেও সেটিতে বাথরুমের দুর্গন্ধ। আর প্রথম শ্রেণির বিশ্রামাগার সেটিও বন্ধ থাকে সবসময়। নেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা। প্রতিবন্ধীদের হুইল চেয়ার নিয়ে প্ল্যাটফর্মে ওঠার রাস্তাটিও বন্ধ করে রাখা হয়েছে। অপেক্ষমাণ যাত্রীরা এই পরিবেশে মানিয়ে নিতে রীতিমতো গলদঘর্ম। এরকম অব্যবস্থার কারণে যশোরের নওয়াপাড়া রেলস্টেশনে যাত্রীসেবার মান পৌঁছেছে তলানিতে।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, যাত্রীসেবা বাড়াতে তারা আন্তরিক। অচিরেই সমস্যার সমাধান করা হবে। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, নওয়াপাড়া অন্যতম লাভজনক স্টেশন। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরেও আয় হয়েছে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ টাকা। কিন্তু সেবার মান না বাড়ায় হতাশ যাত্রীরা।
সম্প্রতি সকাল ৯টায় নওয়াপাড়া রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান ফটকের সামনে রিকশা, ভ্যান, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, পিকআপসহ হকারদের ভিড়। ভেতরে ঢুকতেই চোখ পড়ে টিকিট কাউন্টারে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটছেন যাত্রীরা। সেখানে বাতাসের ব্যবস্থা নেই। মাথার ওপর বৈদ্যুতিক পাখাগুলোও ঘোরে না।
প্ল্যাটফর্মে ঢুকতেই দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের শত শত যাত্রীর ভিড়। তাদের বিশ্রামের জন্য রয়েছে মাত্র দুটি বিশ্রামাগার। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণির বিশ্রামাগার তালাবদ্ধ দেখা যায়। বন্ধ রয়েছে প্রতিবন্ধীদের প্ল্যাটফর্মে ওঠার রাস্তাও।
দ্বিতীয় শ্রেণির বিশ্রামাগারে দুটি বড় সোফা রয়েছে। এর মধ্যেই গাদাগাদি করে বসে আছেন যাত্রীরা। ভেতরে নারী-পুরুষের জন্য রয়েছে একটি টয়লেট। এই টয়লেটের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো রুমে। যাত্রীদের পানি পানের জন্য ফিল্টারের ব্যবস্থা থাকলেও সেটা দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ব্রেস্ট ফিডিং (মাতৃদুগ্ধ পান) কর্নার থাকলেও সেটি তালাবদ্ধ ছিল। পুরো বিশ্রামাগারের ফ্লোরে ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে আছে।
দ্বিতীয় শ্রেণির বিশ্রামাগারে ঢাকাগামী চিত্রা ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, এই বিশ্রামাগারে বসে টয়লেটের দুর্গন্ধে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। শত শত যাত্রীর জন্য মাত্র একটি টয়লেট।
পরিবারের তিন সদস্যসহ প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন নওয়াপাড়ার সুকুমার ঘোষ। আলাপকালে তিনি বলেন, এখানে দাঁড়ানোর পরিবেশও নেই। সৈয়দপুরগামী যাত্রী হাসিবুর রহমান বলেন, এই স্টেশনে বিভিন্ন গন্তব্যের লোকাল ট্রেন থামে, প্রচুর যাত্রীচাহিদা রয়েছে। কিন্তু প্ল্যাটফর্মে যাত্রীসেবার কিছুই নেই।
স্টেশন মাস্টার মো. মাসুদ রানা বলেন, দিনে ১২ জোড়া ট্রেনের যাত্রী এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেন। চাহিদা অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা কম, এটা সত্য। তবে প্ল্যাটফর্মে বসার পর্যাপ্ত জায়গা আছে। একজন সুইপার সারাদিন স্টেশন পরিষ্কার করে আবার ময়লা জমে যায়। সমস্যা হয়ে যায় যখন কাছাকাছি সময়ে দুটি ট্রেন প্ল্যাটফর্মে আসে। আমাদের জানালে মাতৃদুগ্ধ কর্নার ও প্রথম শ্রেণির বিশ্রামাগারের তালা খুলে দিই।
রেলওয়ে খুলনার ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআইসি) অংশমান রায় চৌধুরী বলেন, নওয়াপাড়া রেলস্টেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন। এই স্টেশনের সব সমস্যার সমাধান দ্রুতই করা হবে। যাত্রীদের যাতে কোনো সমস্যা না হয় সে ব্যাপারে আমরা খোঁজখবর নেব।