মেরিনা লাভলী, রংপুর
প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:২৪ পিএম
আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:৪৭ পিএম
প্রধান শিক্ষক লোকমান হাকিম। প্রবা ফটো
দায়িত্ব পালনের ১৪ বছর পার হলেও প্রধান শিক্ষকের সুযোগ-সুবিধা পাননি রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ফুলচৌকি খামারপাড়া রেজিস্টার্ড (বর্তমানে সরকারি) প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লোকমান হাকিম। বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি প্রধান শিক্ষক হিসেবে তাকে দায়িত্বভার দিলেও উপজেলা শিক্ষা অফিসের কারসাজিতে প্রধান শিক্ষক হিসেবে গেজেটভুক্ত হতে পারেননি তিনি। এর ওপর ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্বে মিজানুর রহমান নামে এক শিক্ষককে পদায়ন করায় জটিলতা আরও ঘনীভূত হয়েছে। দুই শিক্ষকই প্রধান শিক্ষক হিসেবে আলাদা রেজিস্টারে স্বাক্ষর করছেন। ঘটনাটি উপজেলায় টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে।
উপজেলা শিক্ষা অফিস ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার শুকুরেরহাট এলাকায় ১৯৯১ সালে বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় ফুলচৌকি খামারপাড়া রেজি. প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওই বছর ২৮ ডিসেম্বর বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রধান শিক্ষক হিসেবে আবুল হাসান, সহকারী শিক্ষক হিসেবে লোকমান হাকিম, আমিনুর রহমান ও ছালেহা খাতুনকে নিয়োগ দেয়। এর মধ্যে ১৯৯৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয়টি মঞ্জুরিপ্রাপ্ত হয়। ১৯৯৭ সালের জুলাই মাসে বিদ্যালয়ের চারজন শিক্ষকের মধ্যে লোকমান হাকিম ও ছালেহা খাতুন এমপিওভুক্ত হন। অপর দুজন শিক্ষকের মধ্যে বিদ্যালয়ে যোগদানকালে প্রধান শিক্ষক আবুল হাসানের ১৬ বছর ১ মাস ও আমিনুর রহমানের ১৫ বছর ২ মাস বয়স হওয়ায় এমপিওভুক্তির যোগ্যতা হারান।
এরই মধ্যে আবুল হাসান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে ২০০০ সালের জুন মাসে প্রধান শিক্ষক হিসেবে গেজেটভুক্ত হন। কিন্তু ২০০৫ সালে এক অডিট প্রতিবেদনে আবুল হাসানের বিরুদ্ধে স্ট্যাফিং প্যাটার্ন, বিধিবহির্ভূত, কম শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রতিষ্ঠান পরিত্যাগকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ২০০৯ সালে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে আবুল হাসানকে তৎকালীন বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি সাময়িক বরখাস্ত করে সিনিয়র শিক্ষক লোকমান হাকিমকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেন। ওই বছর ২৬ এপ্রিল ম্যানেজিং কমিটি লোকমান হাকিমকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি প্রদানের বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। সেই সঙ্গে তাকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে গেজেটভুক্ত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়।
প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে ২০১০ সালে লোকমান হাকিমকে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষার পরীক্ষক হিসেবে নিয়োগ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এ ছাড়া প্রধান শিক্ষক হিসেবে বিভিন্ন কর্মশালা, নির্বাচনী দায়িত্ব পালন, ভোটার রেজিস্ট্রেশনসহ সরকারি নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
এরপর ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে উপজেলা শিক্ষা অফিসকে ম্যানেজ করে বরখাস্ত প্রধান শিক্ষক আবুল হাসান স্বপদে ফিরে আসেন। তবে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি ও শিক্ষা অফিস লোকমান হাকিমকে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে সরিয়ে না দিয়ে সেই দায়িত্বে বহাল রাখেন। আবুল হাসান প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পাওয়ার পর ২০১৭ সালে মনগড়া ম্যানেজিং কমিটি গঠন করে বিদ্যালয় পরিচালনা করে আসছিলেন। এতে বিদ্যালয়ের জমিদাতা মজিবর রহমানকে বাদ দিয়ে ভুয়া দাতা সদস্য মিজানুর রহমানকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করেন। বিষয়টি জানতে পেরে মজিবর রহমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর চিঠি দিয়ে প্রতিবাদ জানান। অবস্থা বেগতিক দেখে ২০১৮ সালে অন্যত্র বদলি হয়ে যান আবুল হাসান।
লোকমান হাকিম গেজেটভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষা অফিস ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর মিজানুর রহমান নামে একজনকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদায়ন করে। এক বিদ্যালয়ে দুই প্রধান শিক্ষক হওয়ায় পাঠদান, ম্যানেজিং কমিটি গঠনসহ নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে।
লোকমান হাকিম বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আমি প্রথম এমপিওভুক্ত শিক্ষক। ২০০৯ সালে যোগ্যতা ও জ্যেষ্ঠতা দেখে ম্যানেজিং কমিটি আমাকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদায়ন করে। দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছি। বর্তমানে আমাকে প্রধান শিক্ষক পদে বহাল রেখে মিজানুর রহমান নামে আরেকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেও নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আমি শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুষ্ঠু সমাধান চাই।’
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আক্তারুল ইসলাম বলেন, ‘লোকমান হাকিম দীর্ঘ দিন ধরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ওই স্কুলের জটিলতা নিরসনের বিষয়টি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার। তারাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, এখানে আমার করার কিছু নেই।’