শুনতে কি পাও
মনিরুজ্জামান বাবলু, চাঁদপুর
প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:৫০ পিএম
অবৈধ বালুমহালের কারণে সরু হয়েছে, পলি জমে চর জাগছে প্রমত্তা ডাকাতিয়া নদীতে
কুমিল্লা-লাকসাম-চাঁদপুর হয়ে মেঘনা নদীতে মিলেছে একসময়ের খরস্রোতা ডাকাতিয়া। ১৪১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের নদীটির প্রস্থ নেই আগের মতো। বালু ব্যবসায়ীদের রমরমা বাণিজ্যের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে নদীর অস্তিত্ব। অবৈধ দখল, অভ্যন্তরীণ বর্জ্য ও বর্ষায় ভেসে আসা পলিতে বিভিন্ন স্থানে চর জেগে উঠেছে। কয়েক স্থানে ড্রেজিং করা হলেও বালু ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ বা নিয়ন্ত্রণে নেই কোনো পদক্ষেপ।
গত দুই দশক আগেও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত না থাকায় নৌপথে পণ্য ও কৃষি মালামাল পরিবহনে এ নদীটির ভূমিকা ছিল অনেক। কিন্তু এখন ইঞ্জিনচালিত নৌযান দিয়ে পণ্য পরিবহন হলেও বিভিন্ন স্থানে চর জেগে ওঠায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। শুকনো মৌসুমে সমস্যা বেশি সৃষ্টি হয়। নদীর চাঁদপুর অংশে অবৈধ দখল উচ্ছেদে তালিকা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চাঁদপুর শহরের তিন নদীর মোহনা থেকে শুরু করে ইচলী, সদরের বাগাদী, মৈশাদী, শাহমাহমুদপুর, রামপুর; ফরিদগঞ্জের বালিথুবা, সুবিদপুর; হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি উপজেলার বাজারকেন্দ্রিক ডাকাতিয়া নদীতে অবৈধ দখলদারের সংখ্যা বেশি। বিশেষ করে এখন বালু ব্যবসায়ীরা নদীর অংশ দখল করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
শহরের ঢালীঘাট এলাকায় নদী দখল করে স্থাপিত হয়েছে অবৈধ জাহাজ মেরামতের ডকইয়ার্ড এবং বেশ কয়েকটি বালুমহাল। সদরের বাগাদী নিজগাছতলা ব্রিজসংলগ্ন, রামপুর ইউনিয়নের ছোট সুন্দর বাজার এবং হাজীগঞ্জ বাজারের ব্রিজসংলগ্ন এলাকায় বালুমহাল তৈরি করে নদী দখল করেছে একশ্রেণির ব্যবসায়ী। ফলে নদী সরু হয়ে নৌযান চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, বালু আনলোড করার সময় বালু থেকে আরেকটা বালুর পানিতে নামে। এতে নদীর নাব্য হ্রাস পায়।
সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের রাজার বাজারের ব্যবসায়ী মো. নুরুজ্জামান ও সোলাইমান জানান, ‘একসময় চাঁদপুর থেকে আমাদের বাজার, শাহতলী বাজার, ছোট সুন্দর বাজার, কামরাঙ্গা বাজার ব্যবসায়ীদের পণ্য পরিবহন হয়েছে নৌকায়। পরিবহন খরচও ছিল কম। এখন সড়কপথে পরিবহন খরচ অনেক বেশি। ডাকাতিয়া নদী নাব্যতা হরিয়েছে, ইঞ্জিনচালিত নৌকা আসতেও সমস্যা হয়। নদী খননের উদ্যোগ নেওয়া দরকার।’
কথা হয় বালু ব্যবসায়ী শামছুজ্জামান শামছুর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘নদী আগের চেয়ে প্রস্থ বেশি। নদীর সীমানা নির্ধারণ করে একটি সার্ভের মাধ্যমে নিশানা দেওয়া দরকার। তাহলে বালু ব্যবসায়ীদের আর বেকায়দায় পড়তে হয় না।’
চাঁদপুর-রায়পুর সড়কের চাঁদপুর সেতুর উত্তর ও দক্ষিণ পাশে নদী দখল করে তৈরি হয়েছে বড় আকারে বালুমহাল। নদীর বেশকিছু অংশ দখল করা হয়েছে এ স্থানে। একাধিকবার তাদের বালুমহাল সরিয়ে নিতে নির্দেশনা দেন সদর উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা। ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানাও করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত নদী অবৈধ দখল করে স্থানীয়রা বালু ব্যবসা অব্যাহত রেখেছেন।
চাঁদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. হান্নান বলেন, ‘নদীতে দূষণ হলে আমরা সে বিষয় নিয়ে কাজ করি। তবে আমাদের নিজস্ব পরীক্ষাগারের তথ্য হচ্ছে, ডাকাতিয়া নদীর পানি ব্যবহারে কোনো সমস্যা নেই। তবে অভ্যন্তরীণ বর্জ্য এ নদীতে গিয়েই পড়ে। কারণ জেলা সদর, হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি উপজেলায় অধিকাংশ খাল এ নদীর সঙ্গে সংযুক্ত।’
বিআইডব্লিউটিএ চাঁদপুর কার্যালয়ের বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ডাকাতিয়া নদী রক্ষায় তিন নদীর মোহনা থেকে শুরু করে শাহরাস্তি পর্যন্ত দুই পাড়ে যেসব অবৈধ দখলদার রয়েছে, তাদের নামের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এগুলো মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হবে। পরে সমন্বয়ের মাধ্যমে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করা হবে। আর যারা বিআইডব্লিউটিএ’র স্থানে ব্যবসা করবেন, তাদের সরকারকে রাজস্ব দিয়েই ব্যবসা করতে হবে।’