× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

চমেক হাসপাতালের বার্ন ওয়ার্ড

‘এখানে কেউ কথা শোনে না, কোনো কথা বলে না’

আবু রায়হান তানিন, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০:০৮ এএম

আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০:৪৮ এএম

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। সংগৃহীত ছবি

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। সংগৃহীত ছবি

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ওয়ার্ডের মেঝেতে একজন শুয়ে আছেন। হাত, পা, বুক ব্যান্ডেজ মোড়ানো, ছটফট করছিলেন তিনি। দুই-তিন জন স্বজন তাকে ঘিরে আছে। পাশেই গড়াগড়ি খেয়ে কাঁদছিলেন এক নারী। কান্না ছড়িয়ে পড়ছে ওয়ার্ডে থাকা অন্য রোগী ও স্বজনদের মধ্যে।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এমন দৃশ্য দেখা যায়। ছটফট করা রোগীর নাম মো. আরমান। আর বিলাপ করা ওই নারী আরমানের স্ত্রী সুইটি আক্তার। আরমান কক্সবাজারে ট্রলারে বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত জেলেদের একজন। ওয়ার্ডের ৫ নম্বর শয্যায় তার চিকিৎসা চলছিল। সকাল থেকে চরম অস্থিরতায় ভুগছিলেন তিনি। একপর্যায়ে ছটফট করতে করতে শয্যা থেকে গড়িয়ে নিচে পড়ে যান।

মিনিট পাঁচেক এ অবস্থা চলার পর স্ট্রেচার নিয়ে আসেন ওয়ার্ডবয়। এরপর ওই ওয়ার্ডবয় আর স্বজনরা ধরাধরি করে তাকে স্ট্রেচারে তোলেন। ওয়ার্ডবয় তাদের নির্দেশনা দেন নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) নিয়ে যেতে। পিছু পিছু যান তিনিও। এর মিনিট বিশেকের মধ্যে সেই স্ট্রেচারে করেই আরমানের মরদেহ নিয়ে ওয়ার্ডে ফিরে আসেন তারা। আইসিইউতে নেওয়ার পথেই আরমানের মৃত্যু হয়েছে। লাশ নিয়ে ফেরার পর পাশে ঘুরে ঘুরে বিলাপ করছিলেন সুইটি। বলছিলেন, ‘কতবার ডাকলাম, কেউ আসল না। কেউ কোনো কথা শোনে না। কোনো কথা বলে না।’

অবশ্য সুইটি আক্তারের এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে গেলে স্বজনদের বিরুদ্ধে উল্টো অভিযোগ দেন দায়িত্বরত একাধিক নার্স। তারা জানান, রোগীর স্বজনরা সবসময় অস্থিরতা দেখান। তাদের সেবা দিতে গেলেও অনেক সেবা তারা রিফিউজ করেন। পরে অস্বীকার করেন, নানা অনুযোগ করেন। আরমানকে স্যালাইন, ইনজেকশনসহ যা-ই দেওয়া হচ্ছিল, সে ও তার পরিবার সেগুলো নিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্বজনদের বন্ডসইও নিয়েছেন তারা।

জানতে চাইলে ওয়ার্ডের সহকারী রেজিস্ট্রার রাশেদ উল করিম বলেন, ‘অতিরিক্ত রোগীর চাপ থাকায় সবার ওপরই একটা বাড়তি চাপ থাকে। এর মধ্যে স্বজন ও রোগীদের সামাল দেওয়া একটু কঠিন। অনেক সময় রোগীদের কাউন্সেলিং করার পরও তারা সহযোগিতা না করায় পরিস্থিতি অনুযায়ী বন্ডে সাইন নেওয়া হয়।’

চট্টগ্রাম ও আশপাশের ৯ জেলার প্রায় চার কোটি মানুষের অগ্নিদগ্ধ চিকিৎসার ঠিকানা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এই বার্ন ওয়ার্ড। হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, ২৬ শয্যার এই ওয়ার্ডে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকে ৫০-৬০ জন। রোগী আরও থাকলেও স্থানসংকুলান না হওয়ায় তাদের আউটডোর থেকেই ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

চিকিৎসকরা বার্ন ইউনিটের তিন ধরনের সমস্যার কথা জানিয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো সুযোগ-সুবিধার অভাব। এই ওয়ার্ডে কোনো আইসিইউ, এইচডিইউ এবং আধুনিক অপারেশন থিয়েটার নেই। এমনকি দগ্ধদের ইসিজিসহ বিভিন্ন টেস্ট করার ব্যবস্থাও নেই। রোগীদের এগুলো করার জন্য বাইরে আনা-নেওয়াও কষ্টসাধ্য।

ওয়ার্ডের প্রধান চিকিৎসক রফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আইসিইউ ওয়ার্ডে শয্যা খালি থাকাসাপেক্ষে রোগী পাঠাতে পারি। কিন্তু এমন বার্নের আলাদা আইসিইউ, এইচডিইউ থাকা দরকার। আরমানের পর আরও দুজন রোগীকে পরপর আইসিইউতে পাঠানো হয়। যাদের সকাল থেকে আইসিইউর জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছিল।’ শয্যা খালি হওয়ার পর আইসিইউ ওয়ার্ড থেকে জানানো হলে এই দুই রোগীকে আইসিইউতে পাঠানো হয় বলেও জানান তিনি।

দ্বিগুণের বেশি রোগী সেবা নিলেও ২৬ শয্যার জন্য যে লোকবল থাকার কথা, তা-ও নেই। ফলে রোগীর চাপ সামলানো বেশ কঠিন হয়ে পড়ে সংশ্লিষ্টদের জন্য। রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অনুমোদিত চিকিৎসকের সংখ্যা ৮ জন, কিন্তু আছে ৬ জন। নার্স আছে ১০ জন। যেখানে প্রতি তিনজনের জন্য একজন নার্স থাকা আবশ্যক। আর ক্রিটিক্যাল রোগীর জন্য একজন নার্স দরকার।’ 

পাশাপাশি তৃতীয় হলো স্থানের সংকট। প্রতিদিন আউটডোরে দেড় শতাধিক রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘স্থানসংকুলান না হওয়ায় ভর্তির দরকার হলেও অনেককে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।’

তবে চীন সরকারের সহায়তার একটি বিশেষায়িত বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট স্থাপনের কাজ চলছে। এটি শেষ হলে এমন চিত্র বদলে যাবে জানিয়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘কাজটি শেষ হতে আরও বছর দুয়েক লাগবে।’ ততদিন পর্যন্ত সংকট সমাধান হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাস্তবতা আসলে ওই রকমই। তবে চেষ্টা করছি সামর্থ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ দিতে।’

নতুন ইউনিটে যা আছে

বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারির ইউনিট উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) হাসপাতালের নকশা, যন্ত্রপাতি, ফার্নিচার, যানবাহন, প্রয়োজনীয় ওষুধ, স্টেশনারি, প্রস্তাবিত জনবলসহ ১৯টি বিষয়ের তালিকা প্রেরণ করা হয়। পুরো প্রকল্পটি চীনের অর্থায়নে বাস্তবায়ন হচ্ছে। এর মধ্যে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, ফার্নিচার চীন থেকে আনা হবে। জনবলের তালিকায় ২ জন চিফ কনসালট্যান্ট, ১০ জন সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ৮৭ জন কনসালট্যান্ট, ১ জন সহকারী পরিচালক, ৪ জন আবাসিক সার্জন, ৯ জন রেজিস্ট্রার, ১৮ জন সহকারী রেজিস্ট্রার, ১১০ জন সহকারী সার্জন, ৩১০ জন নার্স, ৪ জন দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা, ৯২ জন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ও ৪১৮ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী রয়েছে।

যেসব সুবিধা থাকবে 

ছয়তলা ইউনিট ভবনের নিচতলায় থাকবে জরুরি ও বহির্বিভাগ। দ্বিতীয় তলায় থাকবে ২৫টি নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র (আইসিইউ)। তৃতীয় তলার পুরোটাতেই থাকবে ২৫টি হাইডিপেনডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ)। চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় থাকবে সাধারণ ওয়ার্ড এবং ষষ্ঠ তলায় ওয়ার্ডের সঙ্গে থাকবে অফিস।

এর মধ্যে নতুন ইউনিটের ভবনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া পাহাড় কাটার অভিযোগ উঠলেও সেটি অস্বীকার করেছেন পরিচালক। তিনি বলেন, ‘পাহাড় কাটা হয়নি। পাহাড়ের পাদদেশের কিছু মাটি কেটে প্রকল্পের জায়গাটা সমান করা হয়েছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা