বাকেরগঞ্জ (বরিশাল) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৮:৩৭ পিএম
আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৭:৫০ পিএম
মো. রিয়াজ উদ্দিন হাওলাদার। প্রবা ফটো
বরিশালের
বাকেরগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম ডাটা এন্ট্রি
অপারেটর মো. রিয়াজ উদ্দিন হাওলাদারের ঘুষ নেওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল
হয়েছে। ভিডিও ভাইরাল হলেও অজানা কারণে বহাল তবিয়েতে রয়েছেন তিনি।
নতুন
এমপিও এবং পদোন্নতিপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ট্রেনিং, মাধ্যমিক স্তরে সরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের
খেলাধুলা, বেতন ভাতা ও এরিয়া বিল থেকে ঘুষ নেওয়া ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার
(৫ সেপ্টেম্বর) এ বিষয়ে জানতে চাইলে রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র
করা হয়েছে।’ তবে ঘুষ নেওয়ার বিষয়ে কোনো
সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
নাম
প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, বাকেরগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার
কার্যালয়ের অফিস সহকারী মো. রিয়াজ উদ্দিন হাওলাদার ২০২০ সালের অক্টোবরে যোগদান করেন।
যোগদান করার পর থেকেই ৬৩টি মাদ্রাসা, ৮৭টি মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং
২৪টি কলেজের শিক্ষক এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ
করেছেন প্রায় অর্ধ কোটি টাকা।
তারা
আরও জানান, প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানকে মাসিক বেতন পাস করার জন্য কমপক্ষে প্রতি মাসে ২০০০
টাকা দিতে হতো। নতুন এমপিওকরণ, সিনিয়র স্কেল এরিয়া বিল ও টাইম স্কেলে ঘুষ ছাড়া কোনো
কাজই করেন না রিয়াজ। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে কয়েকদিন
আগে নতুন যোগদানকারী করনিক ও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের এমপিওতে নাম উঠানোর কথা বলে
ডিজি অফিসে কাগজ পাঠানোর জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে ২৫-৩০ হাজার টাকা নেন। সেই ভিডিও
ভাইরাল হয়েছে।
দক্ষিণ
সাহেবপুর মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা মাসুম বিল্লাহ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে
বলেন, ‘প্রতিটি কাজেই অফিস সহকারী রিয়াজ
উদ্দিনকে ঘুষ দিতে হয়। টাকা ছাড়া তিনি কোনো কাজ করেন না। আমিও বিভিন্ন কাজে একাধিকবার
তাকে ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছি।’
এ
বিষয়ে সাহেবপুর সিনিয়র মাদ্রাসার প্রভাষক মো. নুরুল আমিন বলেন, ‘সিনিয়র স্কেল পাওয়ার জন্য
৪০ হাজার টাকা দাবি করে অফিস সহকারী রিয়াজ। বাধ্য হয়ে ৩০ হাজার টাকা দিয়েছি।’
চরাদী
মাদ্রাসা, মোহাম্মাদিয়া ফাজিল মাদ্রাসা, দেউলিয়া আলিম মাদ্রাসাসহ উপজেলার কয়েকটি মাদ্রাসার
প্রভাষকরা জানান, সিনিয়র স্কেল নেওয়ার জন্য রিয়াজুল ইসলামকে কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০
হাজার টাকা না দিলে কোনো কাজ করেন না। বাধ্য হয়ে রিয়াজের দাবিকৃত টাকা দিতে হয়।
এ
ছাড়া মাধ্যমিক স্তরের প্রতিষ্ঠানগুলোর তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের সময়
চুক্তি করে এক থেকে দুই লাখ টাকা এবং স্কুল সংক্রান্ত কোনো ঝামেলার তদন্তে গেলে মোটা
অংকের অর্থ নিয়ে রিপোর্ট দিতেন।
এ
বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা তপন কুমার জানান, ‘তার বিরুদ্ধে মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি।
শিক্ষকদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল কার্যক্রম থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। জেলা শিক্ষা
কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মহোদয়কে তার বিষয়ে মৌখিকভাবে অবহিত করা হয়েছে। তিনি
অচিরেই তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস দিয়েছেন।’
এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা
মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে
ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’