প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২২:৩৩ পিএম
আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২৩:২১ পিএম
জব্দ হওয়া স্বর্ণ । ফাইল ফটো
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাস্টম হাউসের গুদাম থেকে ৫৫ কেজি স্বর্ণ খোয়া যাওয়ার ঘটনায় এখনো কূল-কিনারা পায়নি পুলিশ। কীভাবে কবে এ ঘটনা ঘটেছে, স্বর্ণ গায়েবের সঙ্গে কারা জড়িত সে বিষয়ে কোনও তথ্য মেলেনি। অবশ্য তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে দূর্ধর্ষ এই চুরির ঘটনায় কাস্টমস কর্মকর্তা ও দায়িত্বরত নিরাপত্তারক্ষীদের একটি চক্র জড়িত বলে তথ্য মিলেছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ওই গুদামের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আট কর্মকর্তা-সিপাহীকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে বিমানবন্দর থানা পুলিশ। পুলিশ ঘটনাস্থলে সিসি টিভি ফুটেজসহ প্রযুক্তির সহায়তায় তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, সুরক্ষিত ওই কক্ষ থেকে দীর্ঘসময় নিয়ে সুকৌশলে ৫৫ দশমিক ৫১ কেজি স্বর্ণ সরানো হয়েছে। এর আনুমানিক মূল্য প্রায় ৫৫ কোটি টাকা। সেখানে বাইরের কারও যাওয়া সম্ভব নয়। তাই স্বর্ণ গায়েবের সঙ্গে কাস্টমসের কর্মকর্তা ও সিপাহিরা জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে কারণ সিসি টিভি ক্যামেরা ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি এড়িয়ে সোনা চুরির ঘটনাটি বিমান বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেও প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, কাস্টমস হাউজের নিজস্ব গুদামে সাধারণ কারও যাওয়ার সুযোগ নেই। কাস্টমস হাউসের নির্দিষ্ট কিছু কর্মকর্তা কর্মচারীই শুধু সেখানে যেতে পারেন। যে আলমারিতে স্বর্ণ রাখা হয়েছিলো যন্ত্রপাতি ছাড়া সেগুলো ভাঙাও সহজ নয়। গুদামে যেসব যন্ত্রপাতি ছিলো তা নিয়ে ওই আলমারি ভাঙা সম্ভব নয়।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, আলমারির প্রতি তাকে দশটি করে সোনার বার ছিলো। তার মধ্যে প্রতি তাক থেকে আংশিক স্বর্ণ গায়েব হয়েছে। চোর চুরি করলে তো দশটা বারই নিয়ে যাবে, চোর তো একটা-দুইটা করে নেবে না। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে চোর বাইরে নাকি ভেতরের কেউ এ কাজে জড়িত? এখনো নিশ্চিতভাবে এ বিষয়ে তথ্য দেওয়া যাচ্ছে না।
এর আগে গত শনিবার রাতে স্বর্ণ গায়েবের বিষয়টি কাস্টমস হাউজের নজরে আসে। গত রবিবার ওই গুদামে গিয়ে ৫৫ দশমিক ৫১ কেজি স্বর্ণ খোয়া্ গেছে বলে নিশ্চিত হন কর্মকর্তারা। স্বর্ণ রাখার স্টিলের আলমারির দরজাও ভাঙা দেখা যায়। ঘটনা তদন্তে কাস্টমসের একজন যুগ্ম কমিশনারের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর দিনভর এ নিয়ে চলে তুমুল আলোচনা। রবিবার রাতে এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় মামলা করেন কাস্টমস হাউজের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এয়ারপোর্ট প্রিভেন্টিভ টিম) মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন। মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। বিমানবন্দর থানা পুলিশ মূল তদন্ত করলেও র্যাব, ডিবি, সিআইডি ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করেছে।
ডিবির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই স্পর্শকাতর। ঘটনাস্থলে যেতে আমাদেও বিভিন্ন স্থানে বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। অনুমতি নিয়ে সেখানে প্রবেশ করতে হচ্ছে। সোমবার সারাদিন কাস্টম হাউস ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি দল কাস্টম হাউসের গুদামে স্টক থাকা সোনা মিলিয়েছে। ফলে আমাদের প্রবেশের সুযোগ হয়নি।’
প্রযুক্তিগত তদন্তের পাশাপাশি এরই মধ্যে কাস্টমস হাউসের আট কর্মকর্তা-কর্মচারীকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তারা হলেন, গুদামে কর্মরত সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মাসুদ রানা, সাইদুল ইসলাম শাহেদ, শহিদুল ইসলাম ও আকরাম শেখ এবং সিপাহী রেজাউল করিম, মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, আফজাল হোসেন ও নিয়ামত হাওলাদার। তারা চার শিফটে গুদামে দায়িত্ব পালন করতেন। আলমারির তালা ভাঙ্গার বিষয়ে তারা সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি।
ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার এ কে এম নুরুল হুদা আজাদ বলেন, গুদামে অনেকগুলো লকার থাকলেও সোনা চুরি হয়েছে একটি লকার থেকে। এসব সোনা ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে উদ্ধার হয়েছিল। আমি গুদামে অটোমেশনের কাজ শুরু করি। এর মধ্যে এ ধরনের ঘটনায় আমি লজ্জিত ও বিব্রত।
তিনি আরও বলেন, ৮ দিন আগে গুদামটি অটোমেশনের কাজ শুরু হয়। এই কাজের অংশ হিসেবে গুদামে থাকা সোনা গণনার কাজ শুরু হয়। তার ধারণা, সোনা চুরির ঘটনা আগেই ঘটেছে। গুদামের অটোমেশনের কাজ শুরু হওয়ায় সেটা ধরা পড়বে; তাই লকার ভাঙার ‘নাটক’ তৈরি করা হয়।
কাস্টমস হাউজ সূত্র জানায়, বিভিন্ন দেশ থেকে চোরাচালান করার সময় বিমানবন্দরের কাস্টমস, এপিবিএনসহ বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে জব্দকৃত স্বর্ণ কাস্টমস হাউসের গুদামে প্রাথমিকভাবে রাখা হয়। পরে ডিএম (ডিটেনশন মেমো) মামলা দিয়ে এসব সোনা জব্দ করা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানোর নিয়ম রয়েছে।