সিরাজগঞ্জ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:০৪ পিএম
আপডেট : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:৩৮ পিএম
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের প্রভাবে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীতে পানির উচ্চতা বেড়েই চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় চার সেন্টিমিটার বেড়ে রবিবার (৩ আগস্ট) সকাল ৯টার দিকে নদীর পানি বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আর কাজিপুর পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে।
ক্রমশ পানির উচ্চতা বেড়ে এরই মধ্যে জেলার পাঁচটি উপজেলার ৪২টি ইউনিয়নের কয়েকশ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে শত শত হেক্টর ফসলি জমি। আর পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে দেড় সহস্রাধিক পরিবার।
জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, নদী তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে। তবে কোনো বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই। আর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস জানিয়েছে, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাদের প্রস্তুতি রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার অন্তত ৪২টি ইউনিয়নের চরাঞ্চল ডুবে গেছে। এতে প্লাবিত হয়েছে এসব এলাকার বসতবাড়ি, হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাট, শিক্ষা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ফলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে অন্তত ১০ হাজার বানভাসি পরিবারকে। এখন বন্যার পানিতে তলিয়ে রয়েছে শত শত হেক্টর জমির আখ, আউশ ও আমন ধান, শাকসবজিসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল।
সদর উপজেলার রানিগ্রাম মহল্লার সাধন দাশ বলেন, নদীর পানিতে আজ সাত দিন ধরে পরিবারসহ পানিবন্দি হয়ে আছি।
এদিকে যমুনার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার কাজিপুর, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলসহ নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। হুমকিতে রয়েছে বহু ঘরবাড়ি, হাট-বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা। এ পরিস্থতিতে ভাঙনের কবলে পড়া এসব এলাকার বাসিন্দারা তাদের বসতঘর ভেঙে সরিয়ে নিচ্ছেন।
চৌহালী উপজেলার ব্রমন গ্রামের এবাদত আলী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, নদীতে পানি বাড়ছে। এতে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত চার দিন ধরে নদীর পাড় ভাঙছে।
একই এলাকার রানী বলেন, নদী ভাঙন রোধে কাজ চলছে। তারপরও কমবেশি নদী ভাঙছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলাউদ্দিন ভূঁইয়া প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘পানি বৃদ্ধির ফলে সিরাজগঞ্জ সদর ও কাজীপুর উপজেলার ২০৩ হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে। যার মধ্যে রোপা আমন ১৫৫ হেক্টর, সবজি ১৫ হেক্টর, আউশ ১২ হেক্টর, বীজতলা ৮ হেক্টর, কলা ৩ হেক্টর ও আখ ১০ হেক্টর। বাকি তিনটি উপজেলার হিসাব এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে কাজ চলছে।’
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ভারতের আসামে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে যমুনা নদীর পানি বেড়েই চলেছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার বন্যা সতর্কীকরণ পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, জেলার নদী তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে। তবে কোনো বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই।’
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত তিন উপজেলার প্রায় ১ হাজার ৬৫৭টি পরিবার পানিবন্দি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। ভুক্তভোগীদের তালিকা অনুযায়ী চাল, নগদ টাকা, শুকনো খাবার বিতরণ করা হবে।’