× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ছবি ও কল্পনায় একডালা দুর্গ

রেজাউল করিম, গাজীপুর

প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:২৪ পিএম

ছবি ও কল্পনায় একডালা দুর্গ। প্রবা ফটো

ছবি ও কল্পনায় একডালা দুর্গ। প্রবা ফটো

বাস্তবে নেই অস্তিত্ব। অথচ গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দেয়ালে ছবিসংবলিত দর্শনীয় স্থান হিসেবে ঝুলছে কাপাসিয়ার একডালা দুর্গের নাম। সেসব ছবি দেখে যে কেউ স্বচক্ষে দুর্গটি দেখতে যেতে চাইবেন। একডালা দুর্গ লিখে গুগলে সার্চ দিলে চলে আসবে অসাধারণ কিছু ছবি। যা দেখে ভ্রমণপিপাসুরা ছুটে যান সেখানে। তবে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে তাদের ফিরে আসতে হয় একবুক হতাশা নিয়ে।

গাজীপুর শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে কাপাসিয়া উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের তারাগঞ্জ এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম তীরে ইতিহাস বিখ্যাত একডালা দুর্গের অবস্থান। তবে এখন আর সেখানে দুর্গের কোনো অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায় না। ইতিহাস-সম্পর্কিত বেশকিছু বই ঘেঁটে ও স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একডালা দুর্গটি কাপাসিয়ার তারাগঞ্জের শীতলক্ষ্যা তীরেই ছিল। দুর্গটির দৈর্ঘ্য পাঁচ মাইল ও প্রস্থে ছিল দুই মাইলের বেশি।

স্থানীয় লোকজন জানান, দুর্গের ভেতরে প্রবেশের জন্য ছিল পাঁচটি তোরণ। তাদের কাছে এটি ‘রানীমার ভিটা’ ও ‘রানী ভবানীর বাড়ি’ নামে পরিচিত ছিল। রানী ভবানী বানিয়া রাজাদের শেষ বংশধর ছিলেন। তিনি ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে এ দেশে মুসলিম অভিযানের সময় এ দুর্গে থাকতেন।

বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন ওয়েবসাইটে দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে একডালা দুর্গের নামটি রয়েছে। গুগলে সার্চ দিলেও একডালা দুর্গের বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়। বিভিন্ন ভ্রমণসংক্রান্ত ওয়েবসাইটে একডালা দুর্গের ইতিহাস, অবস্থান, কীভাবে যাওয়া যাবে, কী কী দেখা যাবে এসব বিষয়ে খুঁটিনাটি দেওয়া রয়েছে। এসব দেখেই দর্শনার্থীরা ছুটে যান সেখানে। 

একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শাহিন আহমেদ বলেন, ‘গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি কাজে গিয়ে প্রথম একডালা দুর্গের ছবিটি দেখি। পরে এটির প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। চলতি মাসে সেখানে গিয়ে হতাশ হয়ে ফিরে এসেছি। সেখানকার স্থানীয় লোকজনও বলেন তারাও শুনেছেন। সত্যি বলতে একডালা দুর্গের একটি ইটও খুঁজে পাইনি।’ 

ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী নাহিদ আহমেদ বলেন, ‘আমরা বন্ধুরা মিলে বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক ও দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ করে থাকি। সেই সূত্রেই গাজীপুরের দর্শনীয় স্থান খুঁজতে খুঁজতে বেশ কয়েকটি সাইটে একডালা দুর্গ দেখতে পাই। পরে কয়েকজন বন্ধু মিলে ছুটে যাই তারাগঞ্জ। সেখানে গিয়ে কিছুই পাইনি, পরে শীতলক্ষ্যা নদীতে ঘুরে চলে আসি। তবে বিভিন্ন অনুচ্ছেদ পড়ে জেনেছি শীতলক্ষ্যা এবং ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিমে, আনুমানিক ৬০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে জনৈক হিন্দু রাজা এই একডালা দুর্গটি নির্মাণ করেছিলেন। ইলিয়াস শাহ বাংলার স্বাধীন সুলতান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পর দিল্লির সুলতান ফিরোজ তুঘলকের সম্ভাব্য আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ১৩৫২ খ্রিস্টাব্দের দিকে দুর্গটি সংস্কার করেন।’ 

সম্প্রতি সরেজমিনে একডালা দুর্গের স্মৃতিচিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্থানীয় অনেকের ভাষ্য, দুর্গটি শীতলক্ষ্যা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নদীর পানি কম থাকলে দুই-চারটি ইটও নাকি দেখা যায়। কেউ কেউ জানান, তারা দুর্গটি দেখেননি, বহুদিন ধরে শুনে আসছেন। এলাকাবাসী জানান, বিভিন্ন সময় দেশ-বিদেশের লোকজন এই স্থাপনার খোঁজ করতে আসেন। 

তারাগঞ্জ কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও একডালা দুর্গের গবেষক শামসুল হুদা লিটন বলেন, ‘ডিসি অফিসের যে ছবি আছে সেটার অস্তিত্ব নেই। নদীর পাড় ভেঙে গেছে পূর্ব পাশে। হয়তো সেখানে বিলীন হতে পারে। তবে একডালা এলাকায় বিভিন্ন সময় খনন করতে গিয়ে পাটার মতো বিভিন্ন সাইজের পোড়ামাটির অংশ পাওয়া গেছে। সেখান থেকেই মানুষের ধারণা, এখানে একডালা দুর্গ ছিল। সরকারিভাবে একডালা দুর্গকে চিহ্নিত করেনি। তবে আমরা দাবি করে আসছি, জায়গাটিকে চিহ্নিত করার। কারণ বিভিন্ন সময় পাওয়া এসব পোড়ামাটির অংশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তবে এই এলাকার চার-পাঁচ কিলোমিটার এলাকা যদি প্রত্নতাত্ত্বিক দপ্তর খনন করে বা গবেষণা করে তাহলে এর অস্তিত্ব পাওয়া যাবে।’ 

এ বিষয়ে কাপাসিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম গোলাম মোর্শেদ খান বলেন, একডালা দুর্গটি এখন আর নেই। কিছু ধ্বংসাবশেষ আছে। তবে সাধারণ মানুষ সেখানে গিয়ে কিছু পাবে না, এটাই স্বাভাবিক। আর্কিওলিজির ছাত্ররা হয়তো সেখানে গিয়ে কিছু পেতে পারেন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা