মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২২:০৩ পিএম
ঢাকাইয়া ঘের নামে সাড়ে তিনশ বিঘার চিংড়ি ঘের এবং শুকুর শেখের চিংড়ি ঘের নিয়ে গত ২৮ আগস্ট এক অনুষ্ঠানে বাগেরহাটের সুন্দরবন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান একরাম ইজারাদারের এক বক্তব্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে। তিনি বলেছিলেন, ‘ওই দুটি চিংড়ি ঘের উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার ভাইপোরা জোরপূর্বক দখল করে খাচ্ছে।’ তার এ বক্তব্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপ এবং প্রকৃত ঘের মালিকদের মধ্যে বিভেদ ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) সকালে মিঠাখালী ইউনিয়নে ওই ঘেরে গিয়ে জানা যায়, ৪৬ জন অংশীদার সমবায় ভিত্তিতে ওই ঘেরে চিংড়ি চাষ করছেন। এ সময় কথা হয় চিংড়ি চাষি বরিশালের বাসিন্দা মিজান খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, তার এই ঘেরে ১০০ বিঘা জমি রয়েছে। এ ছাড়া জমি রয়েছে স্থানীয় খবির আলী শেখের ১২ বিঘা, টিপু হাওলাদারের ২৬ বিঘা, আলতাব হোসেনের আট বিঘা, আব্দুল হাইয়ের ৩০ বিঘা, অশিনি মন্ডলের ১৫ বিঘা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল ওয়াদুদের ১৬ বিঘাসহ ৪৬ জনের সাড়ে ৩০০ বিঘার জমি রয়েছে। তারা ২০ বছর ধরে সমবায় ভিত্তিতে এই জমিতে ঘের করে আসছেন। ঘেরটি পরিচালনা করছেন মিঠাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা উৎপল মন্ডল।
জানতে চাইলে উৎপল মন্ডল সাংবাদিকদের বলেন, ‘২০ বছর ধরে শান্তিপূর্ণভাবে এই ঘেরটিতে মাছ হয়ে আসছে। এখানে জোর করে এককভাবে কিছু করার সুযোগ নেই। উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওলাদার এবং তার ভাইপো টিপু ও প্রিন্স জোর করে ঘের খাচ্ছেÑ এ কথার কোনো ভিত্তি নেই। সুন্দরবন ইউপি চেয়ারম্যান এক অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে গিয়ে তাদের জড়িয়ে যে কথা বলেছেন তা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। এতে দলে বিভেদ সৃষ্টি হবে।’
ঘেরের অংশীদার সুখরঞ্জন, আবদুল হাই ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল ওয়াদুদ বলেন, এই ঘের মিঠাখালী ইউনিয়নের মধ্যে। উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওলাদারের বাড়ি সোনাইলতলা ইউনিয়নে। তার তো এখানে আসার প্রশ্নই ওঠে না। তাকে আমরা কখনও এখানে আসতে দেখিনি।
ঘের ব্যবসায়ী টিপু হাওলাদার বলেন, ঢাকাইয়া ঘের নামে পরিচিত সাড়ে তিনশ বিঘার চিংড়ি ঘেরে ২৬ বিঘা এবং একই এলাকার ঘের ব্যবসায়ী শুকুর শেখের ২০০ বিঘার ঘেরের মধ্যে ১০০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে তিনি চিংড়ি চাষ করছেন। তাকে জড়িয়ে সুন্দরবন ইউপি চেয়ারম্যান একরাম ইজারাদার মিথ্যাচার করছেন।
শুকুর শেখ বলেন, তার জমি কেউ দখল করে খাচ্ছে না। আমার জমির লিজ নিয়ে টিপু হাওলাদার সমান অংশীদার ভিত্তিতে চিংড়ি ঘের করছি। উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওলাদারকে জড়িয়ে যেসব বক্তব্য রাখা হচ্ছে তা আদৌ সঠিক নয়।
এদিকে সুন্দরবন ইউপি চেয়ারম্যান একরাম ইজারাদার বলেছেন, গত ২৮ আগস্ট যে বক্তব্য তিনি দিয়েছেন তা সত্য। তবে উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওলাদার বলেন, তাকে এবং তার ভাইপোদের জড়িয়ে একরাম ইজারাদার যে বক্তব্য দিয়েছে তা রাজনৈতিক এবং সামাজিকভাবে হেয় করতেই দিয়েছে। প্রকৃত জমির মালিকদের সঙ্গে কথা বললেই এর সত্যতা পাওয়া যাবে।