× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নিচু জায়গায় আশ্রয়ণের ঘর, পানিবন্দি বাসিন্দারা

উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০:১৮ এএম

আপডেট : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০:৪৮ এএম

প্রায় ২০ দিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ধরণীবাড়ী ইউনিয়নের মুন্সিবাড়ী এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা। প্রবা ফটো

প্রায় ২০ দিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ধরণীবাড়ী ইউনিয়নের মুন্সিবাড়ী এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা। প্রবা ফটো

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ধরণীবাড়ী ইউনিয়নের মুন্সিবাড়ী এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণ করা হয়েছে নিচু জমিতে। সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ হয়ে হাঁটুপানি জমে যায়। শৌচাগার, রান্নাঘরসহ ঘরের মেঝেতে মাঝেমধ্যে পানি ওঠে। রয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকটও। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সেখানকার বাসিন্দাদের। এ ছাড়া কাজের বিনিময় টাকা (কাবিটা) প্রকল্পের আওতায় আশ্রয়ণের মাটি ভরাটের কাজেও অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের। 

আশ্রয়ণের বাসিন্দারা জানান, বৃষ্টি হলেই ঘরগুলোর সামনে হাঁটুপানি জমে যায়। এমনকি বেশি বৃষ্টি হলে ঘরের ভেতরে পানি ঢুকে যায়। নষ্ট হয় ঘরের আসবাবপত্র। শৌচাগার ও রান্নাঘরে পানি জমে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ২০ দিন ধরে পানি জমে আছে। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ভেতরে চলাচলের রাস্তায় প্রায় দেড় ফুট উচ্চতায় পানি জমে আছে। টানা কয়েক দিনের জলাবদ্ধতায় পানিতে শ্যাওলা জন্মাতে শুরু করেছে। নিষ্কাশনের পথ না থাকায় ও নিচু জায়গায় ভরাট না করেই ঘর করায় পানি জমে আছে। ঘরের বারান্দার সামনে পানি, চারপাশে পানি। নোংরা পানি ও কাদা মাড়িয়ে চলাচল করেতে হচ্ছে আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের। এতে বিপাকে পড়েছেন তারা। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়তে হয়েছে নারী, শিশু ও প্রবীণদের। 

আশ্রয়ণের বাসিন্দা সুধাংশু বর্মণ ও সাকিম আলী বলেন, ‘দোলা (নিচু) জায়গায় ঘর করা হয়েছে। একটু মাটি কেটে উঁচু জায়গায় ঘরগুলো করা হলে এমন জল জমে থাকত না।’

আরেক বাসিন্দা মেনেকা রাণী বলেন, ‘এমন করি বাস করা যায়? চাইরপাশে পানি। একটু বৃষ্টি হইলে পানি জমি থাকে। আইজ না হইলেও ২০ দিন ধরি পানি। ঘর থাকি বের হওয়া যায় না। বাড়িত একটা প্রতিবন্ধী বাচ্চা। পানিত পড়ার ভয়ে সউগ সময় চিন্তায় থাকি। স্বামী ভাড়ায় অটো চালায়। সেটাও বারান্দা থাকি নামবার পাই না। কামাইয়ো বন্ধ।’

খুশি বেগম বলেন, ‘পানিতে অনেক ময়লা-আবর্জনা। শিশু ও বয়স্ক মানুষ চলাচল করতে পারে না, বের হইতে পারে না। বাচ্চারা স্কুলে যাওয়ার সময় পোশাক, বইপত্র ভিজে যায়। রান্নাঘরের চুলায় পানি জমে আছে। শৌচাগারও পানিত তলিয়ে আছে। আমাদের থাকার জায়গা নাই তাই ঘর দিয়েছে। এখন খাবার চাই না। একটু মাটি কেটে দিলে আমাদের উপকার হয়।’

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আশ্রয়ণ প্রকল্পে মাটি ভরাট ও রাস্তা সংস্কারের জন্য ২০২১-২০২২ অর্থবছরে কাবিটা প্রকল্পের আওতায় দুই দফায় ১০ লাখ টাকার কাজ করা হয়েছে। তবে স্থানীয় ও আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের অভিযোগ বরাদ্দের এক-চতুর্থাংশ অর্থও মাটি কাটায় খরচ করেনি। লোক দেখানো কয়েক ট্রাক মাটি ফেলেছে। বাকি টাকা আত্মসাৎ করেছে। মাটি ফেলে ভরাট করলেও জলাবদ্ধতা কিছুটা কমে যেত।

আশ্রয়ণের বাসিন্দা মোমেনা, রচনা, মল্লিকা বেগমসহ কয়েকজন বলেন, ‘উঁচাতে উঁচা করি থুইছে, আর হামরা দরিয়াত পড়ি আছি। যার দিকে মাটি ফেলার দরকার নাই, তারে ওতি মাটি ফেলাইছে। ঘর থাকি বেরবার পাই না, একনা বৃষ্টি হোলে খালি পানি জমি থাকে।’

মাটি ভরাট প্রসঙ্গে শিউলি বেগম ও জরিফ উদ্দিন নামে অপর দুই বাসিন্দা বলেন, ‘অল্প করি মাটি দিছে। এক গাড়ি করি মাটি ছিটায় দিয়া গেইছে। বৃষ্টি হইলে পানি জমে, ঘরের ভেতর পানি ঢোকে। আমাদের খুব সমস্যা।’

প্রকল্প এলাকায় রয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকটও। পানি সরবরাহ প্রকল্পের কোনোটির কল নেই, কোনোটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি। আবার কোনোটির ট্যাংকিতে ফাটল থাকায় পানি ওঠানোই সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সিরাজুদ্দৌলা বলেন, ‘ইউএনও স্যারসহ প্রকল্প এলাকায় পরিদর্শন করেছি। বাসিন্দাদের দুর্ভোগ লাঘবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ মাটি ভরাট ও রাস্তা সংস্কার প্রকল্পের অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেবের আত্মীয় কাজ করেছেন।’ এর বাইরে বেশি কিছু বলতে চাননি এই কর্মকর্তা।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন বলেন, ‘আমার আত্মীয়স্বজন বা যেই কাজ করুক তারা মাটি ভরাট ঠিকভাবেই করেছে। লো ল্যান্ডে (নিচু জমি) ঘরগুলো করা হয়েছে। পানি বের হওয়ার কোনো রাস্তা নেই। বৃষ্টি হলে পানি তো জমবেই।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শোভন রাংসা বলেন, ‘মুন্সিবাড়ী আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের যাতায়াতসহ সব সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দেখতে বলা হয়েছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পটি মাটি ভরাট না করে নিচু জায়গায় করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা