× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সিলেটের পর্যটনকেন্দ্র

ঘুরতে এসে ফিরছে লাশ হয়ে

কাওছার আহমদ, সিলেট

প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৩ ১৬:৪৯ পিএম

প্রতীক ছবি

প্রতীক ছবি

সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে কিছুতেই থামছে না দুর্ঘটনায় মৃত্যু। বিনোদনের আশায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা ঘুরতে আসেন সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে। কিন্তু ঘুরতে এসে অনাকাঙ্ক্ষিত নানা দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হয় তাদের। চোখের সামনেই তরতাজা প্রাণ লাশে পরিণত হচ্ছে। বেশিরভাগ প্রাণহানি ঘটছে পানিতে সাঁতার কাটতে নেমে। এভাবেই পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। 

অভিযোগ উঠেছে, পর্যটকদের নিরাপত্তায় গাইডলাইন না থাকা এবং তাদের সচেতনতায় তেমন কোনো উদ্যোগ না থাকায় বারবার এমন দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পর্যটকরা নিরাপত্তাকর্মীদের সতর্কবার্তা আমলে না নিয়েই দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। 

সর্বশেষ গত সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদাপাথর থেকে জয় গাইন নামে এক পর্যটকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি ঢাকা মগবাজারের বাসিন্দা। কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিল্লোল রায় প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে জানান, জয় গাইনেরা চার বন্ধু মিলে সোমবার সাদাপাথরে বেড়াতে আসেন। দুপুরের পর তারা সাদাপাথরে গোসল করতে নেমেছিলেন। এ সময় পানির প্রচণ্ড স্রোতে জয় গাইন আর স্থির থাকতে পারেননি। মুহূর্তেই পানির নিচে তলিয়ে যান। পরে সেখানে উপস্থিত ও তার সঙ্গের লোকজন খোঁজাখুঁজি করে প্রায় ১৫ মিনিট পরে তার সন্ধান পান। পরে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

এর তিন দিন আগে গত শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে গোয়াইনঘাটের জাফলংয়ের ডাউকি নদী থেকে রমিজ উদ্দিন নামের আরেক পর্যটকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওইদিন দুপুরে তিনি জাফলংয়ের ডাউকি নদীর জিরো পয়েন্ট এলাকায় গোসল করতে গিয়ে স্রোতের টানে তলিয়ে যান। প্রায় চার ঘণ্টা সন্ধান চালিয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। রমিজ উদ্দিন মানিকগঞ্জের দলাই গ্রামের বাসিন্দা।

সিলেটের জাফলং, সাদাপাথর, বিছানাকান্দি, লালাখালে বেড়াতে এসে প্রায়ই পানিতে ডুবে মারা যান পর্যটকরা। পাহাড়ি খরস্রোতা নদীগুলোতে বর্ষা মৌসুমে পানি বেশি থাকে। এ সময় নদীতে প্রচণ্ড স্রোত থাকে। যার কারণে এ সময় দুর্ঘটনাও বেশি হয়। 

গত ৬ জুলাই জাফলংয়ের পিয়াইন নদে বাবার সঙ্গে গোসলে নেমে নিখোঁজ হয় ঢাকার রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. আল ওয়াজ আরশ। দুদিন পর ৮ জুলাই সকালে তার লাশ ভেসে ওঠে। এর আগে ১ জুলাই সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রে গোসলে নেমে নিখোঁজ হন আবদুস সালাম নামের এক তরুণ। ওই ঘটনার দুদিন পর ৩ জুলাই আবদুস সালামেরও লাশ ভেসে ওঠে। বারবার এমন মৃত্যুর জন্য সংশ্লিষ্টরা পর্যটকদের সচেতনতার অভাবকে দায়ী করেছেন। অপরদিকে পর্যটকদের অভিযোগ, স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতায়ই প্রাণহানি বাড়ছে। 

স্থানীয়রা জানান, সিলেটের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র জাফলং। মেঘালয় পাহাড়ঘেঁষা জাফলংয়ের নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে পাথর ও বালু উত্তোলনের ফলে অনেক স্থান মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। গত দুই দশকে জাফলংয়ে বেড়াতে এসে মারা গেছে অর্ধশত পর্যটক। পার্শ্ববর্তী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তঘেঁষা ধলাই নদীর সাদাপাথর পর্যটকদের কাছে পরিচিতিই পেয়েছে ৫-৬ বছর আগে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় এখন প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক পর্যটক আসে সাদাপাথরে। তবে এই ৫-৬ বছরেই এখানে মারা গেছে ১২ পর্যটক। এ ছাড়া গোয়াইনঘাট উপজেলার পাথুরে নদীর আরেক পর্যটনকেন্দ্র বিছনাকান্দিতে গত পাঁচ বছরে মারা গেছে অন্তত চারজন।

জাফলংয়ের রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী সুয়েব আহমদ বলেন, এক যুগে এখানে বেড়তে এসে ২০-২৫ জন পর্যটক পানিতে ডুবে মারা গেছে।

জাফলংয়ের ট্যুরিস্ট পুলিশের ওসি রতন শেখ বলেন, ছুটির সময়ে এখানে পর্যটকের এত ভিড় হয় যে ট্যুরিস্ট পুলিশের অল্প লোকবল দিয়ে তা সামলানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তবুও আমরা তাদের সচেতন করার চেষ্টা করি। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে সাইনবোর্ড টানানো আছে। মাইকিং করেও সতর্ক করা হয়। এরপরও অনেকে তা শুনতে চায় না।

সাদাপাথরে পর্যটকদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে কোম্পানীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুসিকান্ত হাজং বলেন, এখানকার নদী পাহাড়ি ও খরস্রোতা। হ্যান্ডমাইক নিয়ে দুজন স্বেচ্ছাসেবী সার্বক্ষণিক পর্যটনকেন্দ্রে থাকেন। তারা পর্যটকদের স্রোতের পানিতে না নামার আহ্বান জানান। নৌকার ঘাটে সাইনবোর্ড দিয়ে পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ঝুঁকিপূর্ণভাবে পানিতে না নামতে নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে লাল কাপড়ের নিশানা দিয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। এরপরও মানুষ এগুলো মানতে চায় না। 

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে ট্যুরিস্ট পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মী আছে। নিরাপত্তাকর্মীরা হ্যান্ডমাইক দিয়ে পর্যটকদের বিভিন্ন বিষয়ে সতর্ক করেন। এ ছাড়া পর্যটন স্পটগুলোতে জনসচেতনতামূলক নির্দেশনা দিয়ে বড় বড় সাইনবোর্ড টানানো রয়েছে। এরপরও পর্যটকরা দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। এবার জনস্বার্থে নতুনভাবে গাইডলাইন নিয়ে কাজ করার চিন্তা করছেন তারা।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা