বগুড়া আইএইচটি
বগুড়া অফিস
প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৩ ১৬:৪২ পিএম
আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০২৩ ১৬:৪৩ পিএম
গত একযুগ ধরে বগুড়া ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) ছাত্রাবাসে থেকে বহিরাগত ছাত্রলীগ নেতা সজল ঘোষ নানা ‘অপকর্ম’ করে আসছিলেন দাবি করে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ডা. আমায়াত উল হাছিনের অপসারণ চেয়ে দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা।
তারা বলছেন, সজল ঘোষ বহিরাগত হয়েও হোস্টেলে থেকে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মারধর, সিট বাণিজ্য, মাদক সেবন এবং পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দেওয়ার কথা বলে মোটা অংকের টাকা আদায়সহ নানা অপকর্ম করে আসছিলেন। তাকে মদদ দিচ্ছিলেন অধ্যক্ষ।
তবে অধ্যক্ষ ডা. আমায়াত উল হাছিন দাবি করেছেন, তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানতেন না।
সজল ঘোষ বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক।
ডা. আমায়াত উল হাছিন বলেন, ‘আমি গত চার বছর ধরে এখানে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। সজল ঘোষ নামে বহিরাগত কোনো ছেলে হলে থাকে সেটি আমার জানা ছিল না। এ ব্যাপারে আমাকে আগে কেউ অভিযোগও করেনি। এখন সজল ঘোষের রুমে তালা লাগিয়ে দিয়েছি। তাকে যেখানেই পাব পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আমার রুমে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। দুপুরের পর আমাদের মিটিং আছে। সজল ঘোষের বিরুদ্ধে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে সেই মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
গত মঙ্গলবার বিকালে সজল ঘোষের বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের অভিযোগ এনে ক্যাম্পাসের সামনে সাতমাথা-বনানী সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। পরে সমস্যা সমাধানে প্রশাসন ও অধ্যক্ষের আশ্বাসে সড়ক অবরোধ তুলে নিলেও দ্বিতীয় দিনের মতো বুধবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করছেন তারা। শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের অপসারণ, সজল ঘোষের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে সজল ঘোষের মুঠোফোন বার বার কলে দিয়েও বন্ধ পাওয়া যায়।
আমিনুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে ছাত্র হোস্টেলে তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী খাবারের জন্য মিলের টাকা চাইতে গেলে সজল ঘোষ তাকে মারধর করেন। এরপরেই শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ছাত্র ও ছাত্রী হোস্টেল থেকে বেরিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।
তিনি বলেন, সজল বহিরাগত হয়েও দীর্ঘদিন ধরে কলেজের ভেতরে ছেলেদের হোস্টেল পরিচালনা করে আসছে। সে কলেজের হোস্টেলে ২১৮ নম্বর কক্ষে বসে মাদক সেবক, মাতলামি করাসহ প্রেমিকাকে নিয়ে সময় কাটায়। ছেলেদের হোস্টেলের সবার খাওয়ার মিলের টাকা সজল নিজের কাছে রেখে দেয়। আজ যখন বাজারের জন্য তার কাছে টাকা চাওয়া হয় তখন সে মাত্র ১৫০০ টাকা দিয়ে বলে দুই বেলা মিল চালাতে বলে। তখন তার প্রতিবাদ করতে গেলে সে মারধর করে।
মেফতাহুল জান্নাত রিমা নামের অন্য এক শিক্ষার্থী বলেন, সজল ঘোষ কলেজে থেকে টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন জনকে সুবিধা দিয়ে থাকেন। শুধু তাই নয়, পরীক্ষার রেজাল্ট দিলে পাস করা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মিষ্টি খাওয়ার জন্য এক হাজার করে টাকা করে নেয়।
শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহমান বলেন, পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দেওয়ার কথা বলে সজল ঘোষ আমার থেকে ৩০ হাজার টাকা চায়। আমি সেটি দিতে না পারায় প্রিন্সিপালের সাথে হাত করে আমাকে মৌখিক পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেয়।
তিনি বলেন, কয়েক মাস আগে সজল ঘোষ পিকনিকে যাওয়ার কথা বলে সকল শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এক হাজার টাকা করে চাঁদা নেয়। কিন্তু সেই টাকা সে আত্মসাত করেছে।
বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব সাহা বলেন, সজল ঘোষ ছাত্রলীগের গত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিব। আর ছাত্রলীগ সব সময় ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনে পাশে থাকে।
বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, আইএইচটির ঘটনা পুলিশ নজরে রেখেছে। দুপুরে মিটিং আছে। সেখানে আলোচনা করে এ ব্যাপার পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।