হবিগঞ্জ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৩ ১২:৫৩ পিএম
হবিগঞ্জের বাহুবলের রশিদপুর ও রামপুর চা বাগানের কামাইছড়ার এই সিলিকা বালু তোলার ইজারা দেওয়া হয়েছে। প্রবা ফটো
হবিগঞ্জের বাহুবলে রশিদপুর ও রামপুর চা বাগানের কামাইছড়া থেকে সিলিকা বালু উত্তোলনে প্রস্তুতি নেওয়ায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন শ্রমিকরা। প্রতিবাদে সম্প্রতি চা বাগানের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন তারা।
বাগান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সরকার ইজারা বাতিল না করলে চা বাগান ধ্বংস হয়ে যাবে। হুমকির মুখে পড়বে প্রাণ-প্রকৃতি। এ নিয়ে বাগান কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় বাসিন্দা ও শ্রমিক সংগঠনগুলো জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ইজারাদার জানান, খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো (বিএমডি) বালু উত্তোলনের জন্য সীমানা বুঝিয়ে দিয়েছে। তাই বালু উত্তোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাহুবল উপজেলায় ফিনলে টি কোম্পানির আওতাধীন রশিদপুর ও রামপুর চা বাগান রয়েছে। ৯৯৫ হেক্টরের রশিদপুর চা বাগানে স্থায়ীভাবে ৯৫৭ আর অস্থায়ীভাবে প্রায় ৪ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। অপরদিকে ৬২০ হেক্টরজুড়ে রামপুর চা বাগানে স্থায়ীভাবে ৬০৮ আর অস্থায়ীভাবে প্রায় ৩ হাজার শ্রমিক কাজ করেন।
বাগানের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে সিলিকা বালুরছড়া, যা কামাইছড়া নামে পরিচিত। বিএমডি থেকে গত ১৭ জুলাই সাড়ে ৩১ লাখ টাকায় ১ বছর ৯ মাসের জন্য বালু তোলার ইজারা দেওয়া হয়। হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রতনপুর এলাকার শফিকুল ইসলাম ইজারা পান। সম্প্রতি ছড়া থেকে বালু উত্তোলনে প্রস্তুতি নেওয়ায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন শ্রমিকরা। বাগানে কর্মরত চা শ্রমিক বিনোদ চাষা, লাল মনি চাষা, জরিনা খাতুন, সোনা রবি দাস, সায়েরা বিহারী, উদিদ দেসহ কয়েকজন বলেন, সিলিকা বালু তোলা হলে বাড়িঘর ধসে যাবে। চা বাগান ও বসতবাড়ি হুমকিতে ফেলে বালু উত্তোলন করতে দেওয়া হবে না। বালু তোলার এ ইজারা বাতিল করতে হবে।
রশিদপুর চা শ্রমিক পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি নৃপেন চাষা বলেন, ‘বালু তোলা হলে শ্রমিকদের বাড়িঘরসহ চা বাগান ধসে যাবে। ইজারা বাতিল করা না হলে রশিদপুর ডিভিশনের ৬টি চা বাগানের শ্রমিকদের নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’ চা শ্রমিকদের বাঁচাতে ইজারা বাতিলের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামন করেন তিনি। একই কথা জানালেন, শ্রমিক নেতা বিদ্যা বিন সাগরও।
ফয়েজাবাদ চা বাগানের ব্যবস্থাপক সৈয়দ গোলাম সাকলাইন বলেন, ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হলে শ্রমিকদের বসতবাড়ি ও চা বাগানের ক্ষতি হবে। ছড়ার ভেতর জলকপাটসহ চাগাছের নার্সারি ধসে পড়বে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাই বাগানগুলো রক্ষায় ইজারা বাতিলের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। একই কথা বলেন, রশিদপুর চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক জহিরুল ইসলাম এবং রামপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক শফিক মিয়াও।
ফিনলে টি কোম্পানির রশিদপুর ডিভিশনের উপমহাব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেইন বলেন, রশিদপুর ডিভিশনে বালু উত্তোলন করলে বাগানগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই শ্রমিকদের আন্দোলনকে আমরাও সমর্থন করছি। বালু উত্তোলন প্রক্রিয়া বন্ধ ও ইজারা বাতিল করা না হলে প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থ হব।
ইজারাদার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারের নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করে বিএমডির কর্মকর্তারা বালু উত্তোলনের জন্য দাগসহ সরেজমিনে সীমানা বুঝিয়ে দিয়েছেন। তাই বালু তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। বালু তুলতে না পারলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে।’ শ্রমিকদের আন্দোলনের পেছনে বাগান ম্যানেজারা দায়ী বলে তিনি অভিযোগ করেন।
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক দেবি চন্দ বলেন, ‘বাগানের পাশ থেকে সিলিকা বালু তোলা হলে পরিবেশের যথেষ্ট ক্ষতি হতে পারে। বাগানধসে পড়তে পারে। বিষয়টি ভূমি মন্ত্রণালকে জানানো হবে। মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিলে কার্যকরী ব্যবস্থা নেব।’