× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জীবন কথা

শিউলির জীবনযুদ্ধ

রফিকুল আলম, অভয়নগর

প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৩ ১২:২৭ পিএম

সবজি বিক্রি করতে প্রতিদিন ভোর থেকে শিউলি বেগম ভ্যান চালিয়ে ঘুরে বেড়ান এক মহল্লা থেকে আরেক মহল্লায়

সবজি বিক্রি করতে প্রতিদিন ভোর থেকে শিউলি বেগম ভ্যান চালিয়ে ঘুরে বেড়ান এক মহল্লা থেকে আরেক মহল্লায়

রুটিরুজির তাগিদে ঘরের বাইরে ছুটতে হয় শিউলি বেগমকে (৪৮)। ঠিকমতো ঘুম ভাঙে না, ঘুমভরা চোখেই খুব ভোরে আসেন নওয়াপাড়া পাইকারি বাজারে। কিনে নেন লাউ, পালংশাক, মিষ্টিকুমড়া, ডাঁটাশাক, বেগুনসহ নানা শাকসবজি। এরপর ভ্যানে সাজিয়ে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন।

সারা দিনের আয়ে চালিয়ে নেন বিধবা মা ও তিন সন্তানের জীবন। এটাই হচ্ছে যশোরের অভয়নগর উপজেলার চলিশিয়া গ্রামের ভ্রাম্যমাণ শাকসবজি বিক্রেতা শিউলি বেগমের (৪৮) বেঁচে থাকার সংগ্রামের এক দিন-প্রতিদিনের গল্প। নওয়াপাড়া বাজারের পাইকারি আড়ত থেকে সবজি কিনে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পৌরসভার পাড়ামহল্লায় বিক্রি করে কঠিন জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সততা-নিষ্ঠা, চেষ্টা-পরিশ্রমে পৌরসভার নারীদের কাছে জনপ্রিয় শিউলি বেগম। পাইকারি সবজি বিক্রেতা আড়তদাররাও বিশ্বাস করেন তাকে।

শিউলি বেগম জানান, অভয়নগরের বুইকারা গ্রামের শরিফুল ইসলামের স্ত্রী ছিলেন তিনি। ১২ বছর আগে অন্যত্র বিয়ে করে তাকে ছেড়ে চলে গেছেন স্বামী। এরপর তিনি তিন সন্তান নিয়ে চলে আসেন বাপের ভিটা চলিশিয়া গ্রামে। বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরে কোনো বিচার না পেয়ে বাপের ৩ শতক জমিতে তিন ভাইয়ের পাশে ঠাঁই করে নেন। মনে মনে ভাবেন কারও কাছে হাত না পেতে নিজেই সন্তানদের মানুষ করে তুলবেন। তাই সিদ্ধান্ত নেন ভ্যান চালিয়ে সংসার চালানোর। সেই থেকে ছুটে চলেছেন এই সংগ্রামী নারী। ভ্যানে বাড়ি বাড়ি সবজি বিক্রি করে চলে তার সংসার। দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করতে ছেলে রেজোয়ান হোসেনকে (১৫) বুইকারা বাঘাবাড়ী মাদ্রাসায় এবং দুই মেয়ে খাদিজাতুল কোবরা (১৮) ও চাঁদনীকে (১৭) উপজেলার গুয়াখোলা গ্রামের আমেনা কওমি মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছেন।

শিউলি বেগম বলেন, ‘আমার বাচ্চাদের কোনো দিন নতুন কাপড় কিনে দিতে পারিনি। বাড়ি বাড়ি তরকারি বিক্রি করতে গিয়ে অনেকে আমার সন্তানদের কথা জানতে পেরে পুরোনো কাপড় দেন, তা আমার সন্তানদের পরতে দিই। বিধবা ভাতার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেও পাইনি।’ শিউলি বেগম অভিযোগ করেন, ‘আমি গরিব মানুষ। সরকার গরিবের জন্য কত সাহায্য দেয় কিন্তু আমরা কোনো সাহায্য পাই না। এর আগে নওয়াপাড়া পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার ছিলাম। এখন পরিবর্তন করে চলিশিয়া ইউনিয়নের ভোটার হয়েছি। কিন্তু এখানকার লোকেরাও কিছু দেয় না।’

তিনি বলেন, ‘ভোরে সবজি কিনে ভ্যান নিয়ে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করি। আমার অধিকাংশ গ্রাহক পাড়ামহল্লার নারী। আমি বেশি লাভ করি না, অল্প লাভে বিক্রি করি। এজন্য আমার গ্রাহকরা বিশ্বাস করে কেনেন।’ নওয়াপাড়া বাজারের সবজি আড়তদার মো. খলিলুর রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘শিউলি আপা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের কাছ থেকে সবজি কিনে পৌরসভার পাড়ামহল্লায় ঘুরে ঘুরে বিক্রি করছেন। কোনো দিন তার কাছে টাকা না থাকলে সকালে বাকিতে নিয়ে সন্ধ্যায় ঠিকমতো পরিশোধ করে দেন। লেনদেনে শিউলি আপা খুবই পাকা। আমরা বাজারের অধিকাংশ আড়তদার তাকে সবজি দিয়ে থাকি। কোনো দিন তার সঙ্গে দুই কথা হয়নি। সৎ ও নিষ্ঠার সঙ্গে ব্যবসা করে আসছেন। আমরা আড়তদার-মালিকরাও সব সময় কম দামে বিক্রি করে তাকে সহযোগিতা করি।’

নওয়াপাড়া প্রফেসরপাড়ার গৃহিণী রুমানা খান বলেন, ‘শিউলি বেগমের জন্য আমাদের অনেক সুবিধা হয়। বাজারে না গিয়ে বাড়িতে বসেই স্বল্পমূল্যে তরিতরকারি মিলছে। যাচাই করেও দেখেছি, শিউলি আপা যে দাম ধরেন, বাজারেও ঠিক সেই দাম। তাই আমরা এলাকার অধিকাংশ নারীই তার কাছ থেকে তরিতরকারি কিনি। নারী হিসেবে অন্য একজন নারীকে সহযোগিতাও করা হয়।’

চলিশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার রবিউল ইসলাম বিশ্বাস বলেন, ‘শিউলি বেগম ও তার পরিবার দীর্ঘদিন পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে বসবাস করেছেন। বর্তমানে আমাদের ইউনিয়নে বাড়ি করেছেন। আমি তার বিষয়ে জেনেছি। তাকে যতটুকু সহযোগিতা করা যায় করব।’ চলিশিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সানা আবদুল মান্নান বলেন, ‘আমি যতটুকু জেনেছি শিউলি বেগম অসহায়। তার সন্তানদের পড়াশোনা ও সংসার চালাতে ভ্যানে তরকারি বিক্রি করে খুব কষ্টে জীবনযাপন করেন। ভবিষ্যতে কোনো সুযোগ এলে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এবং আমি ব্যক্তিগতভাবে তার পরিবারকে সহায়তা করব।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা