বরগুনা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০২৩ ১৮:৫১ পিএম
আপডেট : ২৯ আগস্ট ২০২৩ ১৯:৪৬ পিএম
বরগুনা টার্মিনালে অপেক্ষমান বাস। প্রবা ফটো
গত ২২ আগস্ট থেকে বরগুনায় অনির্দিষ্টকালের
জন্য লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই সড়কপথে গন্তব্যে ছুটছেন যাত্রীরা।
তবে বাস টার্মিনালে এসে রীতিমত হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে তাদের। টার্মিনালে বাস থাকলেও
কাউন্টারে মিলছে না টিকিট।
যাত্রীদের অভিযোগ, বাস টার্মিনাল থেকে
কাউন্টারগুলোর দূরত্ব অনেক বেশি হওয়ায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারা। আবার টার্মিনালে
এলে একদল লোক তাদের চতুর্দিক ঘিরে অতিরিক্ত দামে টিকিট বিক্রির জন্য টানাহেঁচড়া করতে
থাকেন। এদিকে বাস ছেড়ে দেওয়ার ভয়ে কাউন্টার পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই অতিরিক্ত দামে সেখান
থেকেই টিকিট কিনতে হয় যাত্রীদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, বরগুনার কেন্দ্রীয়
পৌর বাস টার্মিনালে টিকিট কাউন্টার থাকলেও তা ব্যবহার হচ্ছে না। পৌর শহর থেকে কয়েক
কিলোমিটার দূরে শহরের একমাত্র বাস টার্মিনাল উদ্বোধনের দুই বছর পার হলেও এখনও ব্যবহার
হয়নি এখানকার কাউন্টার। অথচ নতুন নির্মিত এই টার্মিনালটিতে রয়েছে শতাধিক বাস পার্কিংয়ের
সুবিধা। এছাড়াও ১৬টি টিকিট কাউন্টার, দুটি ওয়েটিং রুম, একটি অফিস রুম,একটি লেয়ার রুম, ছয়টি টয়লেট, একটি কমার্শিয়াল রেস্টুরেন্ট, নামাজ পড়ার রুমসহ আধুনিক সব সুযোগ সুবিধার
পাশাপাশি রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ফুটপাত। এতো সুবিধা থাকার পরেও টার্মিনালে নির্দিষ্ট
টিকিট কাউন্টার না থাকায় আগের মতোই পৌর শহরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে
কাউন্টারগুলো।
ভোগান্তির শিকার হয়ে যাত্রী নুরুল ইসলাম
বলেন, ‘নতুন বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখি কাউন্টারে তালা ঝুলছে। কিন্তু বাইরে দাঁড়িয়ে
থাকা কিছু লোক বলেন তাদের কাছে টিকিট আছে। তবে গুনতে হবে প্রায় দ্বিগুণ টাকা। সেখান
থেকে টিকিট না নিলে শহরে গিয়ে কাউন্টার থেকে টিকিট নিতে হবে। ততক্ষণে বাস ছেড়ে দেবে।
তাই বাধ্য হয়েই তাদের থেকে টিকিট নিতে হয়েছে।
আরেক যাত্রী নিলুফা আক্তার বলেন, ‘একদিকে
লঞ্চ চলাচল বন্ধ। বাসেও যদি এমন সিন্ডিকেট থাকে আমাদের কি উপায় হবে? নেই কোনো কাউন্টার,
টিকিটের মূল্যও নেওয়া হচ্ছে বেশি।
বরগুনা পাবলিক পলিসি ফোরামের আহ্বায়ক হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, ‘কাউন্টার থাকতেও চরম ভোগান্তি হতে হচ্ছে যাত্রীদের। সব সিন্ডিকেট বন্ধ করে টার্মিনালের কাউন্টারে টিকিট বিক্রি করলে এক জায়গা থেকে টিকিট কিনতে
পারবে যাত্রীরা।’
বরগুনা যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ কমিটির
সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম টিটু বলেন, ‘সিন্ডিকেটের কারণে উদ্বোধনের দুই বছর অতিবাহিত
হলেও এখন পর্যন্ত নতুন বাসস্ট্যান্ডের যাত্রীদের টিকিট কাউন্টার চালু হয়নি। এজন্য
বাস মালিক সমিতি ও পৌরসভা দায়ী। এতদিনে পৌরসভা যথাযথ পদক্ষেপ নিলে কাউন্টারগুলো চালু
করা যেত। অবিলম্বে এখানের কাউন্টারগুলো চালুর দাবি জানাচ্ছি।’
যাত্রীদের ভোগান্তির কথা স্বীকার করে
সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এসে বাসস্ট্যান্ডের কাউন্টার থেকে টিকিট পায় না। টিকিটের জন্য ঘুরতে হয় পৌর শহরের বিভিন্ন
স্থানে। এর একটা সুরাহা হওয়া জরুরি।’
বরগুনা পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট কামরুল
আহসান মহারাজ বলেন, ‘কাউন্টারগুলো বাস মালিক সমিতি ব্যবহার না করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিভিন্ন
স্থানে টিকিট বিক্রি করছেন। এজন্য ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। আমরা বাস মালিক
সমিতির সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করব।’
এদিকে বাস মালিক সমিতির নেতাদের দাবি, এখানে যে গাড়ি আছে তার সব গাড়ি নিয়মিত আসে না। অনেকে তাই কাউন্টার দরকার হয় না। তবে এখানে নিয়মিত বাসের মধ্যে ১৪টি বাস কোম্পানি রয়েছে, তাদের একেকটি কোম্পানিকে এক একটি কাউন্টার দিলে এ সমস্যা লাঘব হবে।