কুষ্টিয়া প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০২৩ ১০:৫৪ এএম
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, কুষ্টিয়া। ফাইল ছবি
কুষ্টিয়ায় বিষধর সাপের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় প্রায়ই মানুষ সাপের কামড়ে আক্রান্ত হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে অ্যান্টিভেনম না থাকায় সাপে কাটা রোগীর একমাত্র ভরসা কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল। তবে এক মাসের বেশি সময় সেই হাসপাতালেও কোনো অ্যান্টিভেনম (প্রতিষেধক) নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৩ আগস্ট কুষ্টিয়ার সদরের কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের ইব্রাহিমের স্ত্রী আয়েশা খাতুন ও তার সাত মাস বয়সি কন্যাসন্তান নুসরাত জাহানকে বিষাক্ত কালাচ সাপ কামড় দেয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই শিশুটির মৃত্যু হয়, আয়েশাকে ভর্তি করা হয় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে। হাসপাতালে প্রতিষেধক টিকা (অ্যান্টিভেনম) না থাকায় আয়েশার মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর থেকে আতঙ্কিত স্থানীয়রা।
মা-মেয়ে ছাড়াও চলতি মাসে সাপের কামড়ে মারা যান জেলার কুমারখালী শিলাইদহের মাঝগ্রামের নববধূ মিতু ও দৌলতপুর রামকৃষ্ণপুরের মোহাম্মদপুরের বুলবুল বিশ্বাস। গত ১৮ আগস্ট খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঁচ নারী-পুরুষ সাপের কামড়ে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।
গত জুন মাস থেকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে অ্যান্টিভেনমের সরবরাহ নেই। বিষাক্ত রাসেল ভাইপারসহ গোখরা সাপের কামড়ে আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে বেশি আসছে। জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে অ্যান্টিভেনম না থাকায় সাপে কাটা রোগীদের কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানেও জুন মাসের পর থেকে রয়েছে প্রতিষেধক সংকট।
কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘বিষধর সাপের কামড়ের প্রতিষেধক টিকার চাহিদা কুষ্টিয়ায় ২০০ ডোজ। চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। আগামী সপ্তাহে প্রতিষেধক টিকা আসতে পারে।’
কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা তাপস কুমার সরকার বলেন, ‘হাসপাতালে থাকা অ্যান্টিভেনম বেশ কিছুদিন আগেই ফুরিয়ে গেছে। চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে, এখনও সরবরাহ পায়নি। মুলত ভারত থেকে আমাদের দেশে অ্যান্টিভেনম আসে। সম্প্রতি সে দেশেও অ্যান্টিভেনমের চাহিদা বেড়ে গেছে। তাই বিলম্ব হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, সাপের কামড়ে যত মানুষ মারা যায় তার চাইতে বেশি মানুষ মারা যায় কামড় খেয়ে আতঙ্কিত হওয়ার ফলে। সাপে কামড়ানো জায়গা তৎক্ষণাৎ পরিষ্কার ব্যান্ডেজ বা সুতি কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে, যাতে ধুলোবালি না লাগে। সাপে কাটলে এক সেকেন্ড সময় নষ্ট না করে উচিত রোগীকে সোজা সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া।
বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এসআই সোহেল বলেন, এ অঞ্চলে চার ধরনের বিষধর সাপের বিস্তার রয়েছে। বর্ষা মৌসমে সকাল ও সন্ধ্যায় সাপে বেশি ছোবল দেয়। সাপের কামড়ে যত দ্রুত সম্ভব অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করা প্রয়োজন, তাহলেই মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব। এ কারণেই উপজেলা ও জেলা সদর হাসপাতালে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম মজুদ রাখা প্রয়োজন।