× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

খরার কারণে ঠাকুরগাঁওয়ে অনিশ্চয়তায় আমন ধান

ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা

প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২২ ১৬:৩০ পিএম

ঠাকুরগাঁও জেলার নিচু জমি গুলোর পানি শুকিয়ে ফেটে যাচ্ছে

ঠাকুরগাঁও জেলার নিচু জমি গুলোর পানি শুকিয়ে ফেটে যাচ্ছে

দুই সপ্তাহেরও বেশি  সময় ধরে ঠাকুরগাঁওয়ে প্রচন্ড তাপদাহ ও খরা আবহাওয়ার কারণে চলতি মৌসুমে আমন ধান উৎপাদন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।  

অন্যান্য অঞ্চল ও জেলা থেকে ঠাকুরগাঁও জেলা উঁচু জায়গায় অবস্থিত হওয়ায় বৃষ্টির পানি দীর্ঘদিন জমে না থাকলেও বর্ষা মৌসুমে ফসলি জমি গুলোতে পানি জমে। কিন্তু এবার বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি সময়ে বৃষ্টি হলেও আষাঢ়ের শেষ সময় থেকে প্রচন্ড তাপদাহ ও খরা আবহাওয়া থাকায় জেলার নিচু জমি গুলোর পানি শুকিয়ে ফেটে যাচ্ছে। এতে আমন ধান রোপন করতে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। 

জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, অন্যান্য বছর যেসব জমি গুলোতে কোমর পরিমাণ পানি জমে থাকাসহ স্রোত বয়ে যেত সেসব জায়গা এখন পানির অভাবে মাটি চির ধরেছে। প্রথম দিকে বৃষ্টিময় আবহাওয়া দেখে কিছু কৃষক ধান রোপন করলেও টানা দুই সপ্তাহের প্রখর রোদে মাটি শুকিয়ে ফেটে গেছে ও রোপন কৃত ধানের গাছ গুলো পানির অভাবে লালচে হয়ে মরে যাচ্ছে। 

সদর উপজেলার পারপূগী গ্রামের কৃষক মো. আলম হক বলেন, অনাবৃষ্টির কারণে আমাদের এই দিকে ধানের বিচন মরে যাচ্ছে। শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি দিতে হচ্ছে। পানির অভাবে মাটিতে ধুলা উড়াচ্ছে। এদিকে ধান লাগানোর সময়ও পার হয়ে যাচ্ছে।

পীরগঞ্জ উপজেলার কৃষক মো. রবিউল ইসলাম বলেন, অন্যান্য সময় যে জমি গুলোর উপর দিয়ে বৃষ্টির পানিতে স্রোত বয়ে যেত সেই জমি গুলোতে চলতি মাসের গত ৬ জুলাই শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে সেচ দিয়ে ৪ বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছি। আকাশের বৃষ্টি না হওয়াতে তিন দিন অন্তর অন্তর শ্যালো দিয়ে সেচ দিতে হচ্ছে ধান ক্ষেতে। তারপরেও প্রখর রোদে মাটি শুকিয়ে ফেটে যাচ্ছে। এবার যে ধানের কি হবে? এমন খরা আবহাওয়া থাকলে আমন ধান হওয়ার কোন নিশ্চয়তা নেই। 

তিনি আরও বলেন, ১০ দিনে ৪ বার সেচ দিতে হয়েছে ধান ক্ষেতে। একবিঘা মাটিতে একবার সেচ দিতে ৬০০ টাকা খরচ হচ্ছে। এছাড়াও সার বিষ ও কীটনাশকের দামও বেড়ে গেছে। আমন ধান নিয়ে এবার খুব অনিশ্চয়তায় ও দুশ্চিন্তায় আছি।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার মির্জা সাইফুল ইসলাম নামে এক কৃষক ধান ক্ষেতে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি সেচ দিচ্ছিল। এসময় তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে এইদিকে প্রচন্ড তাপদাহ চলছে। আকাশের কোন বৃষ্টি নেই। প্রখর রোদে ধান ক্ষেতের মাটি ফেটে গেছে ও ধান গাছ গুলো লালচে হয়ে মরে যাচ্ছে। আগাছাও গজাচ্ছে অনেক। তাই মেশিন দিয়ে পানি দিচ্ছি। এভাবে ধান হবে কিনা তার কোন ভরসায় নেই। তারপরেও মেশিন দিয়ে পানি দিচ্ছি দেখা যাক আল্লাহ ভরসা কি হয়।

এছাড়াও খোঁজ নিয়ে জানা যায় জেলার রানীশংকৈল ও হরিপুর উপজেলার অবস্থাও একই। সেদিকেও বৃষ্টির অভাবে ধান রোপন ব্যাহত হচ্ছে। 

সামিউল ইসলাম নামে এক কৃষক জানান, যদি আকাশের বৃষ্টি হয় তাহলে হয়তো ধান ভালো হবে নয়তো আমন ধানের কি অবস্থা হবে তা বলা যাচ্ছেনা। 

কৃষক খাইরুল ইসলাম বলেন, ধান রোপণের জন্য জমি চাষ দিয়ে তৈরি করে রেখেছি কিন্তু খরার জন্য ধান লাগাইতে পারতেছি না। এনিয়ে খুব হতাশায় আছি।

কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, সরকার যদি সার বিষ ও কীটনাশকের দামও একটু কমিয়ে দিত ও জেলায় আরো বেশি করে ডিপটিউবওয়েল স্থাপন করে সেচের সুব্যবস্থা করতো তাহলে অনাবৃষ্টিতেও কৃষকরা কিছুটা হলেও উপকৃত হতাম। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এবার জেলায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপনের লক্ষ মাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চলতি বছরের এই মৌসুমের শনিবার (১৬ জুলাই) পর্যন্ত মাত্র ৯ হাজার হেক্টর জমিতে ধান রোপন করা হয়েছে এবং ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫৭৪ মেট্রিক টন। 

বিগত কয়েকদিন ধরে জেলায় সর্বনিম্ন ২৮ ডিগ্রি ও সর্বোচ্চ ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা নির্ণয় করা হয়েছে বলে জানায় কৃষি বিভাগ।  

এছাড়াও প্রতি ৫০ কেজি ইউরিয়ার বস্তা ১৬০০, এমওপি ১৫০০, টিএসপি ১১০০ ও ডিএপি ৮০০ টাকা দরে বাজারে বিক্রয় করার জন্য সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করেছে সরকার। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. আবু হোসেন বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে এই সময়টাতে অনাবৃষ্টির কারণে আমন জেলায় ধান রোপন কিছুটা ব্যাহত হলেও কৃষকরা সেচ যন্ত্রের মাধ্যমে ধান রোপন শুরু করেছে। যদিও এতে একটু খরচ বেশি হয়। কিন্তু প্রাকৃতিক কারণেই এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে কৃষকদের। তবে আগামী বুধবার থেকে আবহাওয়া অধিদপ্তরে তথ্য মতে জেলায় পানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আশা করছি পানি হলে এমন সমস্যা আর থাকবেনা ও আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হবে।

জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, সারের দাম বেশি নেওয়ার অভিযোগ আমরা সব সময় পেয়ে থাকি। এ বিষয়ে তদারকি করা হচ্ছে। সরকারের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কেউ যদি সারের দাম বেশি নেয় এমন অভিযোগ কারও বিরুদ্ধে পেলে সে যেই হোক না কেন তার বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা