মাধবপুর (হবিগঞ্জ) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২৩ ১৪:৩৫ পিএম
ফাইল ফটো
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে চলছে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও পাচার। এ কাজে ভারত-বাংলাদেশের একটি চক্র জড়িত বলে জানা গেছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা নানা কৌশলে এ কাজ করে যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার সীমান্তের সরাইল ২৫ ব্যাটালিয়নের অধীনে হরষপুর, ধর্মঘর ও বড়জ্বালা বিজিবি ক্যাম্প রয়েছে। হবিগঞ্জ ৫৫ ব্যাটালিয়নের অধীনে রয়েছে নয়নপুর, মনতলা, রাজেন্দ্রপুর ও তেলিয়াপাড়া বিজিবি ক্যাম্প। এ ছাড়া সীমান্ত এলাকায় রয়েছে তিনটি পুলিশ তদন্তকেন্দ্র। শাহজাহানপুর ইউনিয়নে হরষপুর তেলিয়াপাড়া, বহরা ইউনিয়নের মনতলা এবং ধর্মঘর ও চৌমুহনী ইউনিয়নের দায়িত্বে রয়েছে কাশিমনগর পুলিশ তদন্তকেন্দ্র।
পুলিশ ও বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিনই মানব পাচার করে চক্রটি রমরমা ব্যবসা করছে বলে অভিযোগ। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, উপজেলার সোনাই নদী পার হয়ে সীমান্ত পিলার ১৯৯৪-এর মধ্য দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে অনুপ্রবেশ করছে বাংলাদেশে। আবার বাংলাদেশ থেকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে মানব পাচার করছে চক্রটি। এ অনুপ্রবেশ ও পাচারের সঙ্গে জড়িত চক্রের সদস্য হিসেবে রয়েছে উভয় দেশেরই নাগরিক। তারা মিলেমিশে এ কাজ করছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সীমান্ত পেরিয়ে অনুপ্রবেশকারীরা অবস্থান করে স্থানীয় দালালদের বাড়িতে। পরে সময় বুঝে তাদের ভারত বা বাংলাদেশে পাঠানো হয়। যারা বাংলাদেশে প্রবেশ করে তাদের ইজিবাইক বা মোটরসাইকেলে করে ধর্মঘর বাজারে নিয়ে আসা হয়। পরে ধর্মঘর-মাধবপুর এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর হয়ে যার যার গন্তব্যে চলে যায়।
চক্রের সঙ্গে জড়িত রয়েছে ধর্মঘর ইউনিয়নের আলীনগর গ্রামের সিরাজ মিয়া, জসিম মিয়া ও সফিক মিয়াসহ অনেকে বলে জানান স্থানীয়রা। পরিচয় গোপন করে চক্রের সদস্য সিরাজ মিয়ার কাছে ভারতে প্রবেশ করার কথা জানান এ প্রতিবেদক। সিরাজ মিয়া জানান, ভারতে প্রবেশ করলে জনপ্রতি ৩ হাজার করে দিতে হবে। এর মধ্যে ১ হাজার ৫০০ নেবেন তারা এবং বাকি ১ হাজার ৫০০ টাকা দিতে হবে ভারতের চক্রকে।
বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে কীভাবে পাঠাবেনÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাধারণত ভোর আর দুপুরবেলায় লোক পাঠাই। যখন লোক নিয়ে যাই তখন দায়িত্বরত বিজিবির সদস্যরা ১০ মিনিটের জন্য অন্যত্র চলে যান। তাদের সঙ্গে আমাদের কন্ট্রাক্ট আছে। তাদের ম্যানেজ করেন গোবিন্দপুরের মো. লিটন মিয়া।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভারতে আমরা লোক পাঠাই ত্রিপুরার শিক্ষামন্ত্রীর ভাতিজা শ্রী মহেস্বরের কাছে। ত্রিপুরার এমএলএ পাড়া দিয়ে লোকজনকে নিয়ে যায়। যারা এ কাজে জড়িত তারা সবাই বাংলাদেশে থেকে ভারতের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করেন।’ অভিযোগ অস্বীকার করে মো. লিটন মিয়া বলেন, ‘আমার সঙ্গে অনেকের শত্রুতা আছে। তারা হয়তো আমার নাম বলতে পারে।’
জানতে চাইলে সরাইল ব্যাটালিয়নের (২৫ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল সৈয়দ আরমান আরিফ বলেন, ‘এ ধরনের কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। আমাদের গোয়েন্দা বিভাগ সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। তথ্য পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাকিবুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমি সম্প্রতি এখানে যোগদান করেছি। অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ ও পাচারের বিষয়ে জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’