মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৩ ১৩:১৪ পিএম
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের ভাটখালী কমিউনিটি ক্লিনিক বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকায় মিলছে না স্বাস্থ্যসেবা। প্রবা ফটো
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার ভাটখালী কমিউনিটি ক্লিনিকে সপ্তাহে দুদিন স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। বাকি চার দিন মূল ফটক থাকে তালাবদ্ধ। ফলে সীমান্তবর্তী তিন ইউনিয়নের ছয় গ্রামের মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেল সরেজমিনে গিয়েও। গত শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ভাটখালী কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায় ভবনের মূল ফটকে ঝুলছে তালা। ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) এমদাদুল হক, স্বাস্থ্য সহকারী (এইচএ) রিয়াজুল হক এবং পরিবার পরিকল্পনা সহকারী (এফডব্লিউএ) পদে আইরিন আক্তার সালমা কর্মরত আছেন। তাদের তিনজনের কাউকেই পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সপ্তাহে শুধু রবি ও বৃহস্পতিবারÑ দুদিন ক্লিনিকটি খোলা থাকে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ‘শেখ হাসিনার অবদান, কমিউনিটি ক্লিনিক বাঁচায় প্রাণ’ স্লোগানে ২০০০ কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ৫২টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পুটিখালী ইউনিয়নের ভাটখালী গ্রামে ২০১৭ সালে কমিউনিটি ক্লিনিকটি স্থাপিত হয়। ক্লিনিক থেকে পুটিখালীসহ সীমান্তবর্তী পঞ্চকরণ ও তেলিগাতি ইউনিয়নের ছয় গ্রামের মানুষ স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে থাকেন। প্রতিদিন চিকিৎসা নেন শিশু, বয়স্ক, গর্ভবতী নারীসহ শত শত মানুষ। সপ্তাহে চার দিন বন্ধ থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
ভাটখালী গ্রামের আমেনা বেগম, খোদেজা বিবিসহ একাধিক বাসিন্দা বলেন, শনিবার তো সরকারি বন্ধ! ক্লিনিক খুলবে কেন। এমনিই তো দুই দিন খোলা থাকে। কোন সময় ডাক্তার আসে আর কোন সময় যায় টেরই পাই না।
অথচ সিএইচসিপি এমদাদুল হকের সপ্তাহে ছয় দিন আসার কথা। আর এইচএ রিয়াজুল হকের রবি, সোম ও বৃহস্পতিবার এবং এফডব্লিউএ আইরিন আক্তারের শনি, মঙ্গল ও বুধবার ক্লিনিকে দায়িত্ব পালন করার কথা। এর বাইরে তাদের দুজনের মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন এলাকায় দায়িত্ব রয়েছে।
সপ্তাহে চার দিন ক্লিনিক বন্ধ থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে এমদাদুল হক বলেন, ‘শুক্রবার সরকারি ছুটি ছাড়া প্রতিদিনই আসি। শনিবার পারিবারিক কাজে দৈবজ্ঞহাটী ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েছিলাম। তাই ক্লিনিক বন্ধ ছিল।’
উপজেলা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্য পরিদর্শক (এইচআই) হেমায়েত হোসেন বলেন, ‘ভাটখালী কমিউনিটি ক্লিনিক শুধু নয়, প্রতিটি ক্লিনিকই সপ্তাহে ৬ দিন খোলা থাকবে। দায়িত্বরত সিএইচসিপি ছুটিতে ছিলেন না, তারপরও বন্ধ রাখা হয়েছে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিত করা হবে।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শর্মী রায় বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিকটি বন্ধ থাকার বিষয়টি জানা নেই। সিএইচসিপি ছুটিতে রয়েছে কিনা খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে। উপজেলার ৫২টি কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ একাধিক পদে জনবল সংকট রয়েছে। এ বিষয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একাধিকবার অবহিত করা হয়েছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম তারেক সুলতান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পটি গ্রামীণ জনপদের সাধারণ মানুষের দ্বারপ্রান্তে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ক্লিনিক বন্ধ রেখে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত করার সুযোগ নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’